ভাড়া দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূলেই
পুরভবনেই চলছে অর্থলগ্নি সংস্থার অফিস
তৃণমূল পরিচালিত পুরভবনের মধ্যেই অফিস খুলে বসেছে ‘এমপিএস গ্রিনারিজ ডেভেলপারস লিমিটেড’। রঘুনাথপুর পুরভবনে গেলেই এই দৃশ্য দেখা যাবে। পুরভবনের একাংশ কী ভাবে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই। বিশেষ করে সারদা-কাণ্ডের পরে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে যে ভাবে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে, সেই প্রেক্ষিতে দলেরই নেতা-কর্মীরা তেমনি একটি অর্থলগ্নি সংস্থাকে ভাড়া দেওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করতে পারছেন না। এদিকে অন্য কয়েকটি বড় অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা তোলার হিড়িক রঘুনাথপুরে তেমন ভাবে না দেখা গেলেও একটি ছোট ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা উঠে যাওয়ার অভিযোগ উঠল।
রঘুনাথপুর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এমপিএস গ্রিনারিজ ডেভলপারস লিমিটেডের অফিস থেকে ভাড়া বাবদ মাসে ২৬ হাজার ৫০০ টাকা পুরসভা পাচ্ছে। পুরপ্রধান মদন বরাট বলেন, “পুরসভার নিজস্ব আয় বাড়াতে সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরের অনুমতি নিয়েই সংস্থাটিকে ভবনের একাংশ ভাড়া দেওয়া হয়।” দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা কাউন্সিলর বিষ্ণুচরণ মেহেতা বলেন, “বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ধরনের অর্থলগ্নি সংস্থাকে পুরভবনে ভাড়া দেওয়া কতটা সমীচীন তা ভাবা দরকার।” বস্তুত এই ঘটনা রঘুনাথপুর শহরে গজিয়ে ওঠা চিটফান্ডগুলির রমরমার প্রতীক মাত্র বলেই মনে করছেন পুরবাসী। পুরসভার হিসেবেই এই শহরে এ ধরণের ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার কার্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৫৫টি। কার্যালয় চালুর সময়ে সংস্থাগুলি পুরসভার কাছ থেকে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ নেয়। সেই সূত্রেই ওই সংখ্যা জানা যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সংখ্যা আরও কিছু বেশি হতে পারে গ্রামাঞ্চলে গজিয়ে ওঠা সংস্থাগুলিকে ধরলে। আদ্রার বেনিয়াসোলে ১৩-১৫টি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার অফিস রয়েছে।
রঘুনাথপুরে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার এই অফিস ঘিরেই বিতর্ক।
বস্তুত প্রথম থেকেই রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকাকে বেছে নিয়েছে ভূইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি। জেলা সদর পুরুলিয়ার পরেই রঘুনাথপুরকে তারা কেন বেছে নিয়েছে, তার কারণ বহুবিধ। তাই গত দু’বছরে হু-হু করে বেড়েছে ভুইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার কার্যালয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে এখানে ৪-৫টি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা চলত। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরেই রঘুনাথপুরে অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির ব্যবসা বেড়েছে বহুগুণ। গত  দু’বছরে শহরে ওই ধরনের চিটফান্ডের কার্যলয় খুলেছে প্রায় ৫০টি। প্রসঙ্গত পুরভবনের মধ্যে এমপিএস কার্যালয়টি খোলা হয় ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে।
কিন্তু বাস্তবে ঠিক কতগুলি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার রঘুনাথপুর মহকুমায় ব্যবসা করছে সে বিষয়ে কিন্তু যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ পুরসভা ৫৫টি সংস্থাকে ট্রেড লাইসেন্স দিলেও পুলিশ কিন্তু বাস্তবে ৩০টির মতো সংস্থার হদিশ পেয়েছে। মাসখানেক আগে রঘুনাথপুরে রোজভ্যালী শাখা অফিসে ডাকাতির পরে রঘুনাথপুর থানার পুলিশ শহরের ওই ধরনের সংস্থাগুলিকে থানায় ডেকে কার্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আটোসাঁটো করার নির্দেশ-সহ কিছু জরুরি পদক্ষেপ করতে পরামর্শ দিয়েছিল। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “ওই ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থারগুলিকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ে প্রায় ৩০টি সংস্থা এসেছিল। বাকি সংস্থাগুলি আসেনি। ওই সংস্থাগুলি আদৌ রয়েছে না কি, ইতিমধ্যে কারবার গুটিয়ে কর্মকর্তারা পালিয়েছে, কি না পরিষ্কার নয়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কিছু ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা এখানে ব্যবসা গুটিয়েছে। শুক্রবার এলাকায় ঘুরে তার প্রমাণও মিলেছে। ১৯ এপ্রিল থেকে ব্লক অফিসের সামনে থেকে সারদা গোষ্ঠীর অফিস বন্ধ। শহরের শেষ প্রান্তে সাব রেজেস্ট্রি কার্যালয়ের অদূরে বন্ধ হয়েছে ‘পারিজাত প্রোজেক্ট লিমিটেডে’র কার্যালয়। একটি ওষুধ দোকানের উপরে কার্যালয় খুলেছিল পারিজাত। সেটি বন্ধ হওয়ার পরে সেখানেই কার্যালয় খোলে ‘সঙ্কল্প’ নামের অন্য একটি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা। বর্তমানে সেটিও বন্ধ। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের পাশে মিশন স্কুলের বিপরীতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ‘আরবিএম’ নামের সংস্থাটি। বাসস্টান্ডের কাছে বন্ধ ‘সানমার্গে’র অফিস। থানার অদূরে পুরলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের পাশে একটি লজে অফিস খুলেছিল ‘মঙ্গলময়’ ও ‘স্পার্কলিং’ নামের দু’টি ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা। কয়েক মাস ধরে সংস্থাগুলি বন্ধ। সমস্যায় পড়েছেন লগ্নিকারীরা। পারিজাতের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কয়েকজন পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। রঘুনাথপুর থানায় মৌতোড়ডি গ্রামের চার জন অভিযোগ করেন, তাঁরা পারিজাত সংস্থায় দু’লক্ষ ৬০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। কিন্তু মেয়াদ পার হওয়ার পরে তাঁরা গিয়ে দেখেন অফিস বন্ধ। কর্মকর্তারা বেপাত্তা। রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পারিজাত সংস্থার বিরুদ্ধে কিছু লগ্নিকারী অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংস্থাটির অন্যতম কর্ণধারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। সদুত্তর না পেলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।”.
রোজভ্যালীর অফিসে মোতায়েন পুলিশ।
তবে একমাত্র রোজভ্যালী ছাড়া বড় সংস্থাগুলিতে টাকা ফেরতের ভিড় নজরে পড়েনি। রোজভ্যালীর রঘুনাথপুর শাখা কার্যালয়ের সামনে ক’দিন ধরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই শাখার ম্যানেজার লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল বলেন, “গত তিন দিনে ১১০ জন লগ্নিকারী তাঁদের জমানো অর্থ ফেরত চেয়েছেন। তাঁদের আবেদন খতিয়ে দেখে চেক দেওয়া হবে।” ‘কলকাতা ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ’-র রঘুনাথপুর শাখার ম্যানেজার চণ্ডীদাস মাজি, ‘পৈলানে’র ম্যানেজার ফাল্গুনী বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “এখনও আমাদের কাছে লগ্নিকারীরা টাকা ফেরত চাননি।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.