‘বেহালা সাংস্কৃতিক সম্মিলনী’ তিন দিন ব্যাপী শাস্ত্রীয় কণ্ঠসঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত ও উদয়শঙ্কর ঘরানার নৃত্যের মাধ্যমে রবিশঙ্করের স্মৃতিতে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলী’ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। প্রদীপ প্রজ্বলন করলেন শঙ্কর ঘোষ। পারিবারিক দুই নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্কর ও তনুশ্রী শঙ্কর ছাড়াও ছিলেন রাশিদ খান, হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া, তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার ও কৌশিকী চক্রবর্তী। এ ছাড়াও ছিলেন সপ্তর্ষি হাজরা ও দেবল ঘোষ। সঞ্চালনায় মধুমন্তী মৈত্র ও জয়িতা গোস্বামী। |
প্রথম দিনে তনুশ্রী শঙ্কর ডান্স কোম্পানি নিবেদন করল ‘চিরন্তন’ ও শেষ দিনে মমতা শঙ্কর ডান্স কোম্পানির প্রযোজনায় ছিল ‘অমৃতস্য পুত্র’। দুই শিল্পীরই ভাবনা ও নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে তাঁদের সার্থকতা। এ দিন রাশিদ খানের প্রথম রাগটি ছিল পুরিয়া কল্যাণ। পরিবেশনার রীতিটি সংক্ষিপ্ত হলেও বিস্তার ও তানের রূপায়ণে শিল্পী তাঁর স্বভাবসম্মত মুন্সিয়ানার পরিচয় রাখেন। উজ্জ্বল ভারতী তবলায়, হারমোনিয়ামে ছিলেন জ্যোতি গোহ।
তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার সরোদে শ্যামকল্যাণ রাগ নির্বাচন করেছিলেন দ্বিতীয় দিনে। আলাপ পর্বটি বেশ ধীরে ধীরে সম্পন্ন করলেন। কোথাও গতি বাড়ানোর প্রবণতা নেই। জোড় অংশও বেশ উন্নত মানের। গত পর্বে তানের প্রয়োগে শ্রোতারা উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন। প্রবীণ শিল্পী হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার বাঁশি বাদন শ্রোতাদের আবিষ্ট করে রাখে। তিনি বাজালেন মারুবেহাগ, হংসধ্বনি ও পাহাড়ি ধুন। শিল্পীকে সঙ্গত করেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে শেষ শিল্পী ছিলেন কৌশিকী চক্রবর্তী। প্রতিভার ছটা ফুটে উঠল বারে
বারেই তাঁর নির্বাচিত রাগ বেহাগের পরিবেশনে। তাঁর সব থেকে বড় গুণ যে রাগের যে রূপ
তাকেই বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে রূপায়িত করা অসাধারণ কণ্ঠশৈলীতে। নিটোল তানের প্রশংসা করতেই হয়। বেহাগ শেষ হওয়ার পর চয়ন করলেন রবিশঙ্করের প্রিয় রাগ ‘চারুকেশী’। হারমোনিয়ামে গৌরব চট্টোপাধ্যায় ও তবলায় সন্দীপ ঘোষ।
দ্বিতীয় দিনে জয়পুর-সেনিয়া ঘরানার শিল্পী সপ্তর্ষি হাজরা সহজেই শ্রোতাদের মন জয় করে নিলেন।
|
আইসিসিআর-এ ‘আবর্তন’ হাওড়া কলাকেন্দ্রের অনুষ্ঠানে ছিলেন মোহন সিংহ, দেবারতি সোম, স্বপন সোম ও মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়। মৌসুমীর চর্চিত পরিবেশন ধ্রুপদাঙ্গে ‘তোমারি মধুর রূপে’। একাধিক অনতিশ্রুত গান ছিল দেবারতি-স্বপনের নিবেদনে। প্রথমার্ধের শ্রেষ্ঠ নিবেদন দেবারতির ‘বুঝি ওই সুদূরে’। স্বপনের ‘নদীপারের এই আষাঢ়ের প্রভাতখানি’। দেবারতির ‘আজ আকাশের’ ও স্বপনের ‘কিছু বলব বলে’ও উল্লেখযোগ্য। মোহন সিংহ দরাজ পরিশীলিত কণ্ঠে এবং গায়নে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন।
|
শ্রীঅরবিন্দ ভবনে ব্রহ্মসঙ্গীতের আয়োজন করেছিলেন কল্যাণ গুহ। এ দিন পূরবী মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘ফুল্লরা’র ছাত্রছাত্রীরা গাইলেন দশটি গান। তার মধ্যে ‘সত্য মঙ্গল’ বহু দিন মনে থাকবে। নূপুরছন্দা ঘোষের ছাত্রীরা গাইলেন ডি. এল. রায় ও অতুলপ্রসাদের গান। বন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় আনন্দধারা গাইলেন ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’। সুছন্দা ঘোষের কণ্ঠে ‘প্রচণ্ড গর্জনে’ ভোলা যায় না। সুপ্রিয়া চক্রবর্তী রামমোহনের গান গাইলেন। এ ছাড়াও ভাল গাইলেন সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিজিত্ ঘোষ। |