টাউন হল
দ্বার খোলার প্রতীক্ষায়
দীর্ঘ ন’বছর!
অবশেষে খুলতে চলেছে হাওড়ার টাউন হল। অন্তত এমনই দাবি পুরকর্তৃপক্ষের।
হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “এ বছরের জুনের মধ্যেই টাউন হলের মেরামতি শেষ হবে। পুজোর আগে হল খুলে দেওয়া হবে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৪-এর ৪ জানুয়ারি টাউন হলের ছাদের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। তার পরে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছরই তত্‌কালীন রাজ্য সরকার টাউন হলকে হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। ২০০৬-এ রাজ্য হেরিটেজ কমিশন থেকে সংস্কারের জন্য টাকা পাঠানো হয়। সারানো হয় ভেঙে পড়া অংশ। কিন্তু সমগ্র টাউন হলের অবস্থা এতই বিপজ্জনক ছিল যে পুরো সারাই না করে সাধারণের জন্য তা খুলে দিতে চায়নি পুরসভা।
কেন এত দেরি?
পুরসভা সূত্রে খবর, অর্থাভাবেই কাজ হয়নি। এতে নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়। অবশেষে হাওড়া পুরসভা এ বছরের বাজেটে টাউন হল সংস্কারের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে।
কী করা হচ্ছে?
পুরসভা সূত্রের খবর, ঘুণ ধরা কাঠের বরগাগুলি সারানো হচ্ছে। দেওয়ালের মেরামতি হচ্ছে। পাশাপাশি ঝুল বারান্দার ভেঙে যাওয়া অংশে পুরনো লোহা সরিয়ে নতুন লোহা লাগানো হচ্ছে। পাঁচটি সাজঘর সাজানো হচ্ছে। একটির কাজ সম্পূর্ণ শেষ। মনীষীদের ছবিগুলিকেও সংরক্ষণ করা হয়েছে। হলের ভিতরে ও ঝুল বারান্দার লোহার নকশারও সংস্কার করা হচ্ছে। এই হলের পুরো মেঝেই কাঠের। সেখানেও কিছু পাটাতন পাল্টানো হচ্ছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
ইতিবৃত্ত
১৮৮৩-তে হাওড়ায় নানা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য তত্‌কালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি ই বাকল্যান্ড-কে একটি হল তৈরির অনুরোধ করে ভারতীয়দের সংগঠন ‘জনসভা’। ওই বছর জানুয়ারিতে প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৮৮৪-র ফেব্রুয়ারিতে ৫৫,০০০ টাকা ব্যয়ে হাওড়ার ডাকঘরের পাশে ৯৪২ বর্গমিটার, দু’তলা টাউন হলের নির্মাণ শেষ হয়। ১৪ মার্চ বাংলার গর্ভনর জেনারেল অগস্টাস থম্পসন হলের উদ্বোধন করেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী সভা, বিপ্লবী যতীন দাসের শবদেহে মাল্যদানের মতো নানা ঘটনার সাক্ষী এই টাউন হল। জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরত্‌চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্ব একাধিক বার এখানে এসেছেন।
সূত্র: হাওড়া শহরের ইতিবৃত্ত (দ্বিতীয় খণ্ড), অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
সংস্কারের পরে টাউন হলটি কী ভাবে ব্যবহার করা হবে?
মেয়রের কথায়: “নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক সভা সবই হবে।” হাওড়ার নটধা নাট্যদলের অরিন্দম মজুমদার বলেন, “টাউন হলের মতো জায়গায় অনুষ্ঠান করতে পারলে অবশ্যই খুশি হব। আশা করি নাটকের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো পাওয়া যাবে।” তবে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষিবিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় এই উদ্যোগকে ‘নির্বাচনী চমক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “প্রায় ৯ বছর ধরে টাউন হল বন্ধ ছিল। পুরভোটের আগে ফায়দা তুলতে এই পদক্ষেপ।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.