সম্পাদকীয় ২...
ধাপে ধাপে
উরোপীয় ইউনিয়ন মায়ানমারের উপর জারি করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা রদ করিয়া দিয়াছে। সমাচারটি ইয়াঙ্গনে পৌঁছাইবার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট থাইন সেইন একশো জন বন্দির মুক্তি ঘোষণা করেন, যাঁহাদের মধ্যে অন্তত ৫৬ জন বিভিন্ন জেলখানায় আটক রাজনৈতিক বন্দি। এখনও এ ধরনের ১৭৬ জন রাজবন্দি মায়ানমারের জেলে পচিতেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশা, অচিরে তাঁহাদেরও মুক্তি দেওয়া হইবে। সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়াছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে মায়ানমারকে জলচল করার যে কোনও পদক্ষেপকেই ইয়াঙ্গনের সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে স্বাগত জানাইয়াছে। কারণটি সহজবোধ্য। সংস্কার না করিলে ফৌজ শাসিত মায়ানমারকে জগত্‌সভায় তাহার প্রাপ্য আসন ও মর্যাদা দেওয়া হইবে না, ইহা সে দেশের শাসকরা বিলক্ষণ উপলব্ধি করিয়াছেন।
সংস্কারের পথে মায়ানমারের যাত্রা শুরু হয় বিরোধী নেত্রী আঙ সান সু চি ও তাঁহার দলকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে দিবার সিদ্ধান্ত মারফত। সামরিক জুন্টা যে দেশকে অর্থনৈতিক দুর্গতি ও সামাজিক অনগ্রসরতা হইতে উত্তীর্ণ করিতে পারিতেছে না, ইহা বহু কালই স্পষ্ট। তাই ধাপে-ধাপে গণতান্ত্রিক বিভিন্ন অধিকার জনসাধারণকে ফিরাইয়া দিবার প্রক্রিয়া চালু হয়। পশ্চিমী গণতন্ত্রও জঙ্গি একনায়কত্ব হইতে গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদে উত্তরণশীল এই দেশটিকে সুনজরে দেখিতে শুরু করে। আর্থিক নিষেধাজ্ঞা রদ হইতে থাকে। পশ্চিমী রাষ্ট্রনায়করা মায়ানমার সফরে আসিতে থাকেন, মায়ানমারের প্রেসিডেন্টও বিদেশ সফরে যান। প্যাগোডার দেশের নিঃসঙ্গতা ও একাকিত্ব ঘুচিতে থাকে। রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং স্বাধীন সংবাদপত্রের অবাধ প্রকাশ ও প্রচার গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। ক্রমে সেই শর্তগুলিও পূরণ করার পথে মায়ানমার অগ্রসর হয়। ধাপে-ধাপে এ যাবত্‌ মোট ৮০০ রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হইয়াছে। লক্ষণীয়, সকল রাজবন্দিকে পাইকারি মুক্তি দেওয়া হইতেছে না। তা ছাড়া, ভিন্নমত পোষণ বা প্রকাশের দায়ে গ্রেফতার করার কালা কানুনগুলি আগের মতোই বহাল থাকিতেছে। সংস্কার তাই নিছক প্রসাধনী। জেলখানা রাজনৈতিক প্রতিবাদীদের জন্য খোলাই থাকিতেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি তাই পশ্চিমী গণতন্ত্রকে মায়ানমারের উপর চাপ জারি রাখার আর্জি জানাইয়াছে। বিশেষত সে দেশে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হস্তে মুসলিম সংখ্যালঘুদের যে নিগ্রহ, হত্যা ও ধর্ষণ চলিতেছে, তাহার প্রতি প্রচ্ছন্ন রাষ্ট্রীয় সমর্থনের প্রতিবাদে পশ্চিমকে মুখর হওয়ার আবেদন জানাইয়াছে। রাখিন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর যে গণহত্যা সংঘটিত হইয়াছে, ২১১ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু এবং সওয়া লক্ষ রোহিঙ্গার শরণার্থী হওয়ার ঘটনায় যেরূপ সক্রিয় ভাবে জাতিবৈর অনুশীলনের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ থাকিয়াছে, সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইতেছে। মায়ানমারকে কোল দিবার আগে আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিকে তাই অগ্রপশ্চাত্‌ বিবেচনা করিতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.