সম্পাদকীয় ১...
করতলে রাখি মাথা
রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এক জন যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী লাভ করিয়াছেন। তাঁহার নাম সূর্যকান্ত মিশ্র। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতাকে থাকিয়া থাকিয়া নানা উপলক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হইতে দেখা যায়, শোনাও যায়, মাঝে মাঝেই তিনি সদলবল রাজভবনে গিয়া বিবিধ নালিশ জানাইয়া আসেন, সাংবাদিক সম্মেলনও করেন, কিন্তু সকলই যেন দিনগত পাপক্ষয়। ভ্রম হয় বুঝি-বা তিনি শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতায় কথিত স্থিতপ্রজ্ঞের আদর্শ অনুসরণ করিতেছেন সুখে বিগতস্পৃহ, দুঃখে অনুদ্বিগ্নমনা। রাজনৈতিক অকিঞ্চিত্‌করতার লড়াইয়ে প্রদীপবাবু কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িয়াছেন। দুই নেতার করুণ অবস্থার পিছনেই তাঁহাদের আপন আপন দলের সামগ্রিক দুর্দশার প্রভাব রহিয়াছে। রাজ্য কংগ্রেস শেষ কবে জাগ্রত হইয়াছিল মহাকালও ভুলিয়া গিয়াছেন, সি পি আই এম তাহার ভোট-বিপর্যয়ের পরে এখনও উদ্ভ্রান্ত। কিন্তু নেতার কাজ তো দলকে চালনা করা, তাঁহারা নিজেরাই করতলে মাথা রাখিয়া জানালার ধারে বসিয়া থাকিলে দল নিস্তেজ নিশ্চেষ্ট হইয়া পড়িবে, তাহাতে আর বিস্ময় কী?
রাজনীতিতে বিরোধী দলের প্রথম এবং প্রধান কাজ সরকার তথা শাসক গোষ্ঠীর উপর সমালোচনার দৃষ্টি নির্নিমেষ জাগ্রত রাখা। কী ভাবে তাহারা সেই বিরোধিতা জারি রাখিবে, তাহার ভাষা, ভঙ্গি এবং উপায় কেমন হইবে, তাহা লইয়া বিস্তর তর্ক আছে। এ দেশে প্রবল বিরোধিতা সচরাচর যে ভাবে বিধ্বংসী রাস্তার রাজনীতিতে পর্যবসিত হয় অথবা আইনসভাকে অগ্রাহ্য করিবার নেতিসাধনায় আত্মনিয়োগ করে, তাহা নিশ্চয়ই আপত্তিকর, কারণ তাহা সুস্থ সংসদীয় গণতন্ত্রের অমর্যাদা করে। বামফ্রন্ট আমলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক ভাবে অন্যায় করিয়াছিলেন, বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে বি জে পি অন্য ভাবে সংসদীয় প্রক্রিয়াকে তুচ্ছ করিয়া অন্যায় করিতেছে। সে বিষয়ে এই স্তম্ভে বহু বার সমালোচনা করা হইয়াছে। কিন্তু তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। বিরোধীরা সজাগ এবং সচল থাকিবেন, ইহা তাঁহাদের প্রাথমিক দায়িত্ব।
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীরা সেই দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। স্বাভাবিক কারণেই ইহার দায় প্রধানত সি পি আই এমকে বহন করিতে হইবে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিতর্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম লইয়া বিতর্কের জল কোথায় গড়াইয়াছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বিতর্ককে কী ভাবে আপন রাজনৈতিক প্রয়োজন পূরণ করিবার কাজে ব্যবহার করিয়াছিলেন, সি পি আই এম অপেক্ষা তাহা বেশি কেহ জানে না। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সে দিন শাসক দলকে প্রায় আক্ষরিক অর্থে এক মুহূর্ত তিষ্ঠাইতে দেন নাই। তাহার পরিণাম পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে শুভ হয় নাই, কিন্তু বিরোধী নেত্রী হিসাবে তিনি নিজেকে রাজ্য রাজনীতির চালিকা শক্তিতে পরিণত করিয়াছিলেন, ইহা অনস্বীকার্য। সপ্তম বামফ্রন্ট জমানায় লড়াইয়ের বিষয় এবং ময়দান নির্ধারণ করিয়াছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সি পি আই এম তাঁহার স্থির করিয়া দেওয়া লড়াইয়ে লড়িয়াছে। (এবং হারিয়াছে।) সূর্যকান্তবাবু এবং তাঁহার সতীর্থরা গত দুই বছরে রাজ্য রাজনীতিতে কয়টি কার্যকর বিতর্ক সৃষ্টি করিতে পারেন নাই। তাঁহাদের সৌভাগ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁহার সহকর্মী তথা অনুগামীরা দুই বছর ধরিয়া একের পর এক সুযোগ তাঁহাদের জন্য সৃষ্টি করিতেছেন। তাঁহাদের দুর্ভাগ্য নহে অপদার্থতা, তাঁহারা সেই সুযোগগুলির একটিকেও কাজে লাগাইতে পারেন নাই। বস্তুত, তাহার পরিবর্তে সম্পূর্ণ অবান্তর বিষয় লইয়া অহেতুক তর্ক জুড়িয়া লোক হাসাইতেছেন। মুখ্যমন্ত্রী কাহার বিমানে দিল্লি হইতে কলিকাতায় ফিরিলেন, সেই অকিঞ্চিত্‌কর প্রশ্নে জল ঘোলা করিতেই তাঁহাদের যত রুচি, অথচ একের পর এক অবান্তর অপ্রয়োজনীয় উত্‌সবে কিংবা অনৈতিক ও বিপজ্জনক সংখ্যালঘু তোষণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী কোষাগারের অর্থ অপব্যয় হইলে তাঁহারা টু শব্দ করেন না, পাছে ভোটের বাজারে দর আরও কমিয়া যায়! এমন একটি নয়, দুইখানি বিরোধী দল পাইয়াছেন, এই সৌভাগ্য উদ্যাপনের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি প্রকৃত ভরসা-ফুর্তি উত্‌সব করিতে পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.