|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
জীবন চলছে রাজনীতি, বিক্ষোভ ও সংঘাত নিয়েই |
লা মেরে-তে অনুষ্ঠিত হল ‘পরমা’ শীর্ষক সম্মেলক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ |
বছরে কয়েকটি নির্দিষ্ট সময়ে গ্যালারি লা মেরে নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর সম্মেলক প্রদর্শনী করে থাকে। প্রতি বছর শ্রীমায়ের জন্মদিনে শুরু হয় ‘পরমা’ শিরোনামে মহিলা শিল্পীদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী। তাতে উঠে আসে সমকালীন বাংলার মেয়েদের চিত্রচিন্তার নানা দিক। প্রতি বছরই ‘পরমা’ প্রদর্শনী দেখে মনে হয় মেয়েদের ছবির এমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা পুরুষ শিল্পীর ছবি থেকে আলাদা। আত্মদর্শনের একটা আবহ থাকে তাতে। থাকে নারীর জীবনের বাস্তবতা ও জীবনবোধের বিভিন্ন প্রকাশ। কোমলতা ও অন্তর্মুখীনতা থাকে অনেকের ছবিতেই। থাকে বিশ্বাসের স্নিগ্ধ দীপ্তি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতেও এই বৈশিষ্ট্যগুলি আমরা লক্ষ করি। এ বারের প্রদর্শনীতেও আমন্ত্রিত হয়েছেন ৩৫ জন শিল্পী।
প্রদর্শনীর একমাত্র ভাস্কর উমা সিদ্ধান্ত। তাঁর ব্রোঞ্জটির শিরোনামও ‘পরমা’। অভিব্যক্তিবাদী আবহে যে নারী তিনি উপস্থাপিত করেছেন, তার ভিতর অনুভব করা যায় অনেক দুঃখ ভেঙে উজ্জীবনের দিকে যাত্রার ইঙ্গিত। কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অন্তরালে থেকে এখনও নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। নব্য-ভারতীয় ধারার স্নিগ্ধ প্রকাশ থাকে তাঁর ছবিতে। ‘মীনাক্ষী’ ছবিটিও তাই। ঐতিহ্য-চেতনা বাংলার মেয়েদের ছবির একটি বৈশিষ্ট্য। অর্পিতা বসুর ‘ড্রিম’ জলরঙের ছবিটি পরিপ্রেক্ষিত বিন্যাসের দিক থেকে অসামান্য ঋদ্ধ। অণুচিত্রের প্রেক্ষাপট রীতির সঙ্গে কল্পমায়াকে সুন্দর মিলিয়েছেন। অরুণিমা চৌধুরীর ছবির আঙ্গিকগত ভিত্তি ঐতিহ্যবোধে সম্পৃক্ত হলেও তার ভিতর তিনি নিয়ে আসেন বিশ্বগত আধুনিকতার মাত্রা। ‘দ্য ইনার আই’ শিরোনামের এ বারের ছবিটিতে তিনি নারীর অন্তর্দৃষ্টিকে উন্মোচিত করতে চেয়েছেন, সমস্ত দুঃখ ও নির্যাতনকে মন্থন করে জেগে ওঠে যে অন্তর্দৃষ্টি। |
|
শিল্পী: সুমনা ঘোষ |
বাগেশ্রী দত্ত, দীপ্তি চক্রবর্তী, স্তুতি লাহা, চন্দ্রিমা রায়, সুতপা খান, শ্রীলেখা মজুমদার, শুক্লা পোদ্দার, ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত, অর্পিতা সেনগুপ্ত, শুক্তিশুভ্রা প্রধান, অদিতি দাস প্রমুখ শিল্পীর ছবিতে নব্য-ভারতীয় ধারার প্রকাশ অনুভব করা যায়। রোমি মজুমদার যে ছবি তৈরি করেন, ঐতিহ্যগত আঙ্গিকের দীপ্তি থাকে তাতেও। সুজাতা খাস্তগীরের ‘ব্লিস অব সলিচ্যুড’ ছবিতেও অলঙ্করণের সঙ্গে অভিব্যক্তিবাদী কল্পমায়ার সুচারু মেলবন্ধন ঘটেছে। মানবীচেতনার মগ্নতাকে তুলে আনতে পেরেছেন তিনি। রঞ্জনা মুখোপাধ্যায় এঁকেছেন ফুলের ছবি। অলঙ্করণগত স্বকীয়তায় উজ্জ্বল তাঁর ছবি। জ্যামিতিকতার বিন্যাস ঘটেছে সীমা ঘোষ ভট্টাচার্যের ‘ম্যান’ ছবিটিতেও। তিনি গড়ে তুলেছেন পুরুষের মুখ। নব্য-ভারতীয় ঘরানার স্বদেশচেতনা রূপান্তরিত হচ্ছে আজকের ছবিতে তারই বিভিন্ন প্রকাশ দেখা গেল এই সব শিল্পীর কাজে।
ঐতিহ্যচেতনার এই ভিত্তিকে বিস্তৃত করেই সুমনা ঘোষ মানবী জীবনের ক্রমিক উত্তরণকে রূপায়িত করেছেন তাঁর টেম্পারার ছবিটিতে। একটি কবিতা থেকে উৎসারিত এই রচনাটির শিরোনাম ‘উওম্যান অ্যান্ড দ্য সোয়ানস’। নারীর স্মৃতির অতীত আলোড়িত হচ্ছে। পুকুর থেকে হাঁসেরা উঠে এসে সন্ধ্যায় গৃহপানে যাচ্ছে। যৌবন, বার্ধক্য অতিক্রম করে মৃত্যুর কোলে সমর্পিত হচ্ছে সেই নারী। ও দিকে জীবন চলছে তার রাজনীতি, বিক্ষোভ ও সংঘাত নিয়ে। সময়ের বিভিন্ন স্তরকে একই আলেখ্যে মিলিয়েছেন শিল্পী। ইন্দিরা হালদারের ছবিটিতে রূপায়িত হয়েছে অন্য এক আত্মিক সংকট ‘ব্লাঙ্কেট অব ফিয়ার গেজড’। রাত্রির আবহে আলো-আঁধারিতে হেঁটে যাচ্ছে নগ্ন কয়েক জন মানবী, শঙ্কায় বিধৃত তাঁদের অস্তিত্ব। নিকটেই পথের উপর একটি কুকুর ডাকছে। সংকটের প্রতিমাকল্প। কাঞ্চনমালা ঘোষ অভিব্যক্ত করেছেন একক নারীর আত্মগত বিষাদ। ছবিটির শিরোনাম ‘কনভার্সেশন’, কিন্তু সংলাপ এখানে অনুচ্চারিত। স্তব্ধতার ভিতর দিয়ে অস্তিত্বের তমসা। সহজ অথচ তন্ময় কাজ করেছেন চৈতি বসু জেনা। তিন সারিতে তিনটি করে সরলীকৃত মাছের রূপাবয়ব এঁকেছেন। রিনা মুস্তাফি এঁকেছেন উত্তর-প্রতিচ্ছায়াবাদী আঙ্গিকের নিসর্গ। অর্পিতা প্রধানের ‘মেকওভার ম্যানিয়া’ ছবিতে উপস্থাপিত যুবতীর মুখ। তার মাথার উপরে অস্বাভাবিক দীর্ঘ একটি টুপি। তমালী দাশগুপ্ত এঁকেছেন একটি বৃক্ষের কাণ্ডের মধ্যভাগের ছবি। তার কোটরে কোটরে আশ্রয় নিয়েছে অজস্র পোকা। এ ছাড়াও প্রদর্শনীতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন অঞ্জনা দত্ত, অর্পিতা চন্দ্র, সোহিনী বিশ্বাস, পম্পা দাস, পপি বন্দ্যোপাধ্যায়, পূজা রায় ও সোনালী পাল মণ্ডল। |
|
|
|
|
|