হাবরার রক্তদান শিবিরে জোড়া খুনের ঘটনায় পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল। ন’জন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছেন বারাসত জেলা আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারক শান্তনু ঝা।
২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর হাবরার প্রফুল্লনগরে দুষ্কৃতীরা একটি রক্তদান শিবিরে হামলা চালায়। বোমা-গুলির আঘাতে নিহত হন কংগ্রেস নেতা বাপি চৌধুরী। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য রঞ্জিত রায় ওরফে নিগ্রো। মারা যান তিনিও। মূল অভিযুক্ত রাজু দাম-সহ ১৭ জনের নামে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। ধরা পড়ে ১৪ জন। ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত রাজু এখনও ফেরার। হাবরার আইসি অনিল রায় বলেন, “রাজুর খোঁজ এখনও চলছে। ওকে ধরার সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে।” তোলাবাজি, সাট্টার ঠেকের নিয়ন্ত্রণ, এলাকা দখল-সংক্রান্ত গোলমালের জেরেই খুন বলে জানিয়েছে পুলিশ। |
এ দিন শেখ সোহারাব ওরফে সৌরভ, ভোলা দাস, জিতেন চৌধুরী ওরফে জিতেন্দ্র, নটনয়ন ঘোষ ওরফে যিশু, ধরম মল্লিক ওরফে ধর্মেন্দ্রর যাবজ্জীবন সাজা হয়। মুখ্য সরকারি আইনজীবী মহেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তথ্যপ্রমাণের অভাবে ৯ জনকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
তবে, মূল অভিযুক্ত এখনও ধরা না পড়ায় বৃহস্পতিবার আদালতের এই রায়ে খুশি হতে পারছে না দুই নিহতের পরিবার। বাপিবাবুর পরিবারের তরফে এর আগে সিবিআই তদন্তের দাবি তোলা হয়েছিল। এ দিন তাঁর মা রেবাদেবী বলেন, “রাজুকে তৃণমূলের নেতারা আড়াল করে রেখেছেন। ও মাঝে মধ্যে হাবরায় আসে। তবু পুলিশ এখনও ধরতে পারল না।” বাপির স্ত্রী কাকলির কথায়, “মামলায় ঠিক মতো তথ্যই জোগাড় করতে পারেনি পুলিশ।” নিগ্রোর মা দীপ্তিদেবী পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। তাঁর কথায়, “ছেলে তো চলেই গেল। দুষ্কৃতীরা সকলে ধরা পড়লে তবু কিছুটা নিশ্চিন্ত হতাম।” উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবী ঘোষালের অভিযোগ, “মূল অভিযুক্তেরা প্রভাবশালী তৃণমূল নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় আছে। স্থানীয় বিধায়কও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গে উদাসীন।” এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে হাবরার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। কোনও মন্ত্রী-বিধায়ক বাধা হতে পারেন না। যারা দোষী তাদের সাজা হয়েছে। নির্দোষেরা ছাড়া পেয়েছেন।”
|