একশো দিনের কাজে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় মহিলাদের অংশগ্রহণ কমেছে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মতে, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি অনেক বেশি মহিলাকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে তাঁরা ১০০ দিনের প্রকল্পে আসছেন না।” (‘বাড়ছে শ্রমদিবস...’, ১২-৪) এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। এই জেলায় কাগজে-কলমে কয়েক হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠিত হলেও মহিলারা এগুলির মাধ্যমে খুব বেশি কাজ পাননি। প্রশ্ন, তা হলে গরিব কৃষিজীবী পরিবারের মহিলারা এই প্রকল্পে শামিল হচ্ছেন না কেন? নিম্নোক্ত কারণগুলি উল্লেখযোগ্য।
প্রথমত, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কতকগুলি ব্লক থেকে কয়েক হাজার মহিলা প্রতিদিন কলকাতা শহরে গার্হস্থ্য সেবিকার কাজে চলে আসেন। ভোরবেলায় শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ডায়মন্ড হারবার, লক্ষ্মীকান্তপুর এবং ক্যানিং লোকাল ট্রেনে চেপে রুটি-রুজির টানে এঁরা কলকাতামুখী। আশির দশকে জেলার এক মন্ত্রী এই মহিলাদের বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটানোর দৃপ্ত ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে তিন দশকেরও বেশি অতিবাহিত। বামফ্রন্ট রাজত্বের অবসান হয়েছে। পরিবর্তনের সরকার রাজপাটে আসীন। গার্হস্থ্য সেবিকাদের কলকাতামুখিতার ধারা আরও পুষ্ট হয়েছে। রেলের ২৫ টাকার মাসিক টিকিটের কল্যাণে এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। এঁদের গড় মাসিক রোজগার এক থেকে দেড় হাজার টাকা। সঙ্গে অকিঞ্চিৎকর জলখাবার। এঁদের বেশির ভাগই গ্রামে থেকে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করতে উৎসাহী নন।
দ্বিতীয়ত, এই জেলায় ১০০ দিনের কাজের মূল প্রকল্পই হল মাটি কাটা। যেমন রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণ, জলাশয় সংস্কার ও খনন, নিকাশি সংস্কার প্রভৃতি। কৃষিজীবী পরিবারের মহিলারা কৃষিকাজে অংশগ্রহণে যতটা স্বচ্ছন্দ, এই ধরনের শ্রমসাধ্য কাজে ততটা নয়। পঞ্চায়েত স্তরে মহিলাদের শ্রমোপযোগী প্রকল্প প্রস্তুতিতে তেমন আগ্রহ কিংবা উৎসাহ দেখায়নি।
তৃতীয়ত, গ্রামীণ এলাকায় কৃষক পরিবারের মহিলারা এই রকম শ্রমসাধ্য কাজে এক প্রকার সামাজিক হীনম্মন্যতায় ভোগেন। অপরিচিত পরিবেশে অপেক্ষাকৃত অসম্মানজনক কাজেও তাঁরা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
চতুথর্র্ত, ১০০ দিনের কাজের মজুরি পাওয়ার সরকারি দীর্ঘসূত্রিতা এই প্রকল্পে অংশগ্রহণে অনীহার একটি কারণ। সেখানে মাসান্তে অপেক্ষাকৃত কম মজুরি পাওয়ার নিশ্চয়তা অনেক কার্যকর। তা ছাড়া জব-কার্ড পাওয়ার জন্য পঞ্চায়েতে উমেদারি, সেই সঙ্গে দলের আনুগত্যের প্রশ্নটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
লক্ষণীয়, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামগুলি থেকে নিত্যদিন শহরে আসার সুযোগ না-থাকা সত্ত্বেও ১০০ দিনের প্রকল্পে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে না। এই প্রকল্পে মহিলাদের শ্রমোপযোগী এবং স্বাচ্ছ্যন্দের কর্মসূচি গৃহীত হলেই মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়তে পারে। সে জন্য পঞ্চায়েত স্তরে গতানুগতিক পরিকল্পনার সঙ্গে স্থায়ী সম্পদ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক প্রকল্প রচনা করা জরুরি। কেবল মাত্র কাজের দিনের সংখ্যাবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্প রচিত হলে মহিলাদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্য অধরা থাকবে, তেমনই হাজার কোটি টাকায় গ্রামীণ ক্ষেত্রে কোনও স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি হবে না।
সুভাষচন্দ্র আচার্য। সোনারপুর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
|
আমি একটা ভুল তথ্য দিয়ে ফেলেছি। (‘সুমনামি’, রবিবাসরীয়, ২১-৪) এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সনৎ সিংহর গাওয়া ‘অহল্যা কন্যা’ গানটির সুরকার ছিলেন মৃণাল চক্রবর্তী।
কবীর সুমন। কলকাতা-৪৭ |