বিনোদন ‘শিল্পবিশ্বের খবর বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা কমই রাখেন’

গো সাঁওতালি ছেলে!
না, শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রথম লাইন নয়, এটা এখন একটা গল্পের নাম। ভারতীয় ভাস্কর্যকে এই মুহূর্তে ভুবনগ্রামে পৌঁছে দিয়েছেন যে গুটিকয়েক ভাস্কর তাঁদেরই অন্যতম, কে এস রাধাকৃষ্ণণের গল্প। ছেনি-হাতুড়িতে সে গল্পের নতুন একটা পরিচ্ছেদ লিখতেই সম্প্রতি বেশ কিছু কালের জন্য ষাট-ছুঁতে চলা ভাস্কর কাটিয়ে গেলেন শান্তিনিকেতনে। কলাভবনের অদূরে শিল্পীর স্টুডিওয় এখন শেষের পথে তাঁর নতুন ভাস্কর্য ‘মাইয়া অন মুসুই’।
কিন্তু গল্পটা কী? মুসুই আর মাইয়াই বা কে? “সেটা সত্তরের দশক। সাইকেলে করে কলাভবনে ফিরছি, একটি সাঁওতাল ছেলে, মুসুই, পয়সা চাইল। কিন্তু করুণ মুখ করে নয়, হাসতে হাসতে, সেটাই আমাকে অবাক করল। সাইকেলের পিছনে বসিয়ে নিয়ে এলাম শর্বরীদার (রায়চৌধুরী) স্টুডিওয়। পয়সা দিলাম। পোর্ট্রেট আঁকলাম একটা। তার পরে ও-ই হয়ে উঠল আমার এবং সহপাঠীদের মডেল, ন্যুড মডেলও। সে কালে সেটা পাওয়া তত সহজ ছিল না,” পূর্বপল্লির বাড়ির টেরাসে বসে সামান্য মালয়ালি-টান মেশানো বাংলায় গল্প শোনাচ্ছেন রাধাকৃষ্ণণ। “তার পর থেকে ওই মুসুইকে আমি নানা রূপে গড়েছি। কলাভবনে মাস্টার অব ফাইন আর্টস করার পরে যখন দিল্লি চলে যেতে হল স্কলারশিপ নিয়ে তখন গোটা মুসুইকে নিয়ে যেতে পারিনি, মাথাটা নিয়ে গিয়েছিলাম, মাথার ভিতরে।”
বোলপুরের পূর্বপল্লিতে নিজের স্টুডিওয় কাজে মগ্ন শিল্পী। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
সেই থেকে মুসুই রাধাকৃষ্ণণের ভাস্কর্যে ফিরে ফিরে এসেছে। তিনি রামকিঙ্কর বেইজের শিষ্য। ১৯৭৯ থেকে রামকিঙ্করের জীবনের শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছে কাজ শিখেছেন। ভাস্কর্যে রামকিঙ্করের অবদান নিয়ে নতুন মূল্যায়ন করতে চান। সম্প্রতি ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্টে রামকিঙ্করের কাজের পূর্বাপর প্রদর্শনীর কিউরেটর ছিলেন রাধাকৃষ্ণণই। নিজের কাজে ‘গুরু’র ভাস্কর্য ‘চালকলের ডাক’ বা ‘সাঁওতাল পরিবার’-এর প্রভাব স্বীকার করেন অকুণ্ঠে। দেশে-বিদেশে শুধু সাঁওতাল ছেলে মুসুইকে নিয়েই রাধাকৃষ্ণণের প্রদর্শনী হয়েছে একাধিক। দু ফুট থেকে দশ ফুটেরও বেশি উচ্চতার মুসুই ভাস্করের কল্পনায় কখনও এসেছে নটরাজ হয়ে, কখনও পরশুরাম, গাঁধী, বুদ্ধ, পৈতেধারী ব্রাহ্মণ, এমনকী শয়তান রূপেও। পরে মুসুইয়েরই ‘অল্টার ইগো’ রূপে রাধাকৃষ্ণণ গড়েছেন মাইয়াকে। সাঁওতাল ছেলে আর সাঁওতাল মেয়ের একক কিংবা যুগল ভারতীয় ভাস্কর্যে একটা সময়ে সাড়া জাগিয়ে তুলেছে। আর এক দিন, খানিকটা যেন মজা করেই, সেই মাইয়ার হাতে রাধাকৃষ্ণণ ধরিয়ে দিয়েছেন ছাতিম পাতা। কেন? “ও তো রীতিমতো বিশ্বভারতীর স্নাতক তখন, পরে যখন স্নাতকোত্তর পাশ করল তখন দু’টো ছাতিমের ডাল ধরিয়ে দিলাম,” দরাজ হাসিমাখা গলায় বলছেন ভাস্কর।
বিশ্বভারতী-র রীতি অনুযায়ী সমাবর্তনে স্নাতকদের ছাতিম পাতা দেওয়া হয়। এ ভাবেই কি প্রান্তিক মাইয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক করতে চেয়েছিলেন ? অনেকটা বুঝ লোক যে জান সন্ধান গোছের স্মিত হাসিতে জবাবটা এড়িয়ে গেলেন রাধাকৃষ্ণণ। ২০১১-য় রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবার্ষিকী উদ্যাপনের অঙ্গ হিসেবে উত্তরায়ণ প্রাঙ্গণে তির-ধনুক রূপী মাইয়ার ভাস্কর্যটির উদ্বোধন করেছিলেন তখনকার রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল। বিশ্বভারতী-সূত্র বলছে, ওই সাঁওতালি মেয়েকে নিয়ে তখন চাপা ঝড়ে চঞ্চল হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাক্তনীদের মধ্যে বিতর্ক উঠেছিল কেন উত্তরায়ণের মতো হেরিটেজ প্রাঙ্গণে ‘সমসাময়িক’ ভাস্কর্য বসবে তা নিয়ে। অবশ্য তা তেমন দানা বাঁধেনি। উল্লেখ্য, তারও বেশ কয়েক বছর আগে কলাভবন চত্বরেই খোলা-আকাশ ভাস্কর্যে বসেছে মুসুই।
কিন্তু সহযোগিতা কি পান কলাভবন থেকে? কলাভবন থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করা ভাস্কর বললেন, “এখনও কিছু বর্তমান ছাত্র আমার কাছে আসে, কাজ দেখতে, দেখাতে। এর বেশি কিছু বলব না। তবে এ কথা ঠিক, শিল্পবিশ্বের খবর এখনকার পড়ুয়ারা কমই রাখেন। দেশ-বিদেশের ভাস্করেরা যাতে নিয়মিত এখানে আদান-প্রদানের জন্য আসেন তার জন্য এক বার কার্যকরী সমিতির মিটিংয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। খুব সাড়া পাইনি।”
কথা বলতে বলতেই আকাশ ছেয়ে ফেলল কালো মেঘ...
নাকি সাঁওতালি ছেলের অভিমান!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.