আর পাঁচটা দোকান হলে বিজ্ঞাপন বড় জরুরি ছিল। আশপাশে মাথা উঁচু করে শপিংমল, সিনেমা হলে হাতুড়ি চালিয়ে আইনক্স। তবু দশ ফুট বাই দশ ফুটে থেকেই লেসন প্ল্যানের হাতিয়ার হাতে তুলে দিচ্ছে কলামন্দির আজও। ঝরনা কলম হারিয়ে যাবার পরও ক্লাস ফাইভের পড়ুয়াদের জন্য এক কোণে সরিয়ে রাখা আছে মুক্তাক্ষরের স্কুপ। ডট নয়, কালি-কলম বর্ণমালাকে ঠিক ভাবে লিখিয়ে দেয়জানিয়ে দেয় সক্কলের বাপিদা-কালুদা। সানদিয়েগো, ম্যানচেস্টার, নিউজার্সি, অকল্যান্ড, জুরিখ থেকে মাঝেমাঝেই ফোন আসে কলামন্দিরের দরজায়। ভাস্কর, সৈকত, রাজর্ষি, সায়ন্তনীরা কখনওই ডিস্ট্যান্স বাড়াতে চায়নি। তাইতো ছেলেবেলার পায়ের-হাতের অদৃশ্য ছাপগুলি খুঁজে পেতে একবার হলেও এখানে দেখা দিয়ে যায় ওরা। দেশে এলে আত্মীয়ের বাড়ির মতোই কলামন্দিরে দেখা দেওয়াটা প্রবাসীদের প্রথম প্রায়োরিটি। বাপিদার ভাই-বোনরা আজ ছড়িয়ে বিশ্বময়। কেউ শিল্পী, কেউ চিকিৎসক, কেউ শিক্ষক। তবু উৎসবে দিনগুলিতে কলামন্দিরের আশপাশটা হয়ে যায় কেয়ার অফ অ্যালামনি। |
লেখা ও ছবি: সন্দীপন নন্দী। |
পুরোনো ক্লাসফ্রেন্ডকে আট বছর বাদে আতস কাচে খুঁজে দিয়েছিল গত বারের অষ্টমী। একদিন বৃষ্টিতে কলামন্দিরের শেডই খুঁজে দিল সুজন স্যরকে। সে দিন কাকভেজা হয়েও প্রণাম করেছিল অম্বরীশ। এভাবে স্মৃতির প্রাসাদে প্রহরা দিয়ে চলেছে বাপিদা-কালুদা। তিরিশ পেরিয়েও কলামন্দিরের ছাদ ভাঙার প্রয়োজন অনুভব করেননি, পলেস্তরা খসে যাহার পরও ঘুপচি ঘরেই খাতা-কলমের সাম্রাজ্য সাজিয়ে রেখেছে কেউ। আশপাশ বদলালেও কলামন্দির এখনও বদলায়নি। এখনও দোকানে উপচে পড়ে পুরোনো ভিড়। এককোণে অপেক্ষা করে, একটু ফাঁকা পেলে “ এ বার এগিয়ে যাব বাপিদা।” ছোটগল্প হতে পারত, কিন্তু তা হয়নি, কারণ এ গল্পের কোনও শেষ নেই! কেয়ার অফ কলামন্দির!
|
দুটি রাস্তা। একটি দিয়ে যাতায়াত করে বাংলাদেশের মানুষ এবং যান। অন্যটি ভারতের নাগরিকদের জন্য। বাংলাদেশের নির্দিষ্ট রাস্তাটির দু’প্রান্তে দুটি গেট। এখন খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টাই। গোটা এলাকাটি তারের বেড়ায় ঘেরা। এলাকায় মোট জমির পরিমাণ তিন বিঘা। জায়গাটির নামও তিনবিঘা। কোচবিহারের এই করিডরে আসেন বহু পর্যটক। তৈরি হয়েছে উদ্যান। রয়েছে জল, বসার ব্যবস্থা, শৌচালয়। চোখে পড়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের হাতে লাগানো লিচু গাছটি। সব মিলিয়ে তিনবিঘা সত্যিই এক অন্য অভিজ্ঞতা। |