চোর ধরতে গিয়ে ‘বর’ ধরল পুলিশ।
উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাটে একের পর এক মন্দিরে চুরি হচ্ছিল। তাই রাতে এলাকার মন্দিরগুলিতে পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে। স্থানীয় মানুষজনও নজর রাখছেন। সোমবার রাতে সেই মতোই মন্দিরে নজরজারি করতে বেরিয়েছিলেন বসিরহাটের আইসি শুভাশিস বণিক। হঠাৎ উত্তর গুলাইচণ্ডী ঘোষপাড়া থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে, “স্যার এখুনি চলে আসুন, শিবমন্দিরে লোক ঢুকেছে।” শুভাশিসবাবু তখন ছিলেন পিঁফা অঞ্চলে। তিনি কালবিলম্ব না করে সোজা সেই মন্দিরে গিয়ে দেখেন তার সামনে বেশ ভিড়।
তা হলে কি চোর কাজ সেরে চম্পট দিয়েছে, নাকি গণধালাইয়ের পর্ব চলছে? উত্তর খুঁজতে ভিড় সরিয়ে সামনে যেতেই ভ্যাবাচাকা খান তিনি। চোর কোথায়? মন্দির চত্বরে বসে বরবেশে এক যুবক ও কনের সাজে এক কিশোরী। সাজানো রয়েছে বিয়ের যাবতীয় সরঞ্জাম। পাশেই দাঁড়িয়ে এক দম্পতি ও পুরোহিত। হাঁফ ছাড়েন আইসি। যাক চুরি নয়, বিয়ের আয়োজন হচ্ছিল। কিন্তু বর-কনে ও ওই দম্পতিকে জেরা করতে গিয়ে ফের চোখ কপালে ওঠে তাঁর। এ কী, এ যে আর এক চুরি! তবে মন্দিরের বিগ্রহের অলঙ্কার, জিনিসপত্র নয়। চুরি করা হয়েছে বয়স। কনে যে নাবালিকা, তার বিয়ের বয়েসই হয়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোরীর বাড়ি বাদুড়িয়া থানার তেঘরিয়ায়। দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে সপ্তাহ তিনেক আগে তারকেশ্বর মন্দিরে পরিচয় হয় উমাশঙ্কর ওরফে তারক দাস নামে ওই যুবকের। তার পর প্রেম। কিন্তু বাড়িতে বিয়ের কথা বলতেই বেঁকে বসেন মেয়ের বাবা-মা। কারণ পাত্র বেকার। তবে দমবার পাত্রী নয় কিশোরী। অগত্যা পালিয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত।
পাত্রীর বাড়ির লোক নারাজ থাকলেও তারকের হয়ে এগিয়ে আসেন তাঁর দিদি-জামাইবাবু। এলাকায় কোনও মন্দিরে গেলে ধরা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই তাঁর জামাইবাবু ভরত দাস তাঁর আত্মীয় উত্তর গুলাইচণ্ডী গ্রামের বাসিন্দা সুন্দর বিশ্বাসকে সেখানকার মন্দিরে বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলেন। সোমবার রাত একটা নাগাদ সেই মতো পুরোহিতকে দিয়ে বিয়ের আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু তাতেই ঘটল বিপত্তি। অত রাতে মন্দিরে লোক দেখে বাসিন্দারা ভাবলেন চোর ঢুকেছে। খবর গেল পুলিশ। চোরের বদলে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হল বর। গ্রেফতার হয়েছেন তারকবাবুর দিদি-জামাইবাবুও। তবে আগেই বেগতিক দেখে পলাতক পুরোহিত ও সুন্দরবাবু। ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক কিশোরীকে বাবার কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বাকিদের জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। |