সারদা কাণ্ডের জেরে ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন আমানতকারীরা। নদিয়ার শিকারপুরের বাসিন্দা এক আমাতনকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার গভীর রাতে ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার এক কর্তাকে গ্রেফতার করল বহরমপুর থানার পুলিশ। ধৃত ব্যক্তির নাম কারিম হোসেন। বহরমপুর থানার গজধরপাড়া এলাকার বাড়িতে হানা দিয়ে ওই রাতেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বহরমপুর থানার আইসি মোহায়মেনুল হক বলেন, “ওই অর্থলগ্নি সংস্থায় দেড় লক্ষ টাকা জমা রাখেন নদিয়ার এক জন আমানতকারী। তাঁর অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেরা করে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে আরও তিন জনের নাম জানা গিয়েছে। পুলিশ তাদের খোঁজ করছে।” মঙ্গলবার বহরমপুরের সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক অলি বিশ্বাস ধৃত ওই ব্যক্তিকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
এ দিন ডোমকলে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার তিনকর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুরুটিয়া থানার শিকারপুরের বাসিন্দা সুমন পাল ২০১১ সালের নভেম্বরে জন্মভূমি রিয়েলটি প্রজেক্টস লিমিটেড নামে ওই ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থায় দেড় লক্ষ টাকা এমআইএস করেন। পেশায় ব্যবসায়ী সুমনবাবু বলেন, “শিকারপুরের বাসিন্দা আমার এক বন্ধু ওই অর্থলগ্নি সংস্থার করিমপুরের এজেন্ট হিসেবে কাজ করত। তাঁর কথায় আমি দেড় লক্ষ টাকা এমআইএস করি। এর পরে ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে এমআইএস বাবদ টাকাও পেয়েছি। কিন্তু জানুয়ারি মাস থেকে টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। তখনই সন্দেহ হয়। পরে বহরমপুরের ভাকুড়ি এলাকায় সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে খোঁজ নিতে এসে দেখি তালা ঝুলছে।” তাঁর কথায়, “সংস্থার প্রধান কর্তা কারিম হোসেনের বাড়িতে বেশ কয়েক বার এসেও তাঁর দেখা পাইনি। শেষ পর্যন্ত গত ২২ এপ্রিল বাড়িতে তাঁকে পাই। কিন্তু তিনি টাকা ফেরৎ দিতে পারবেন না বলে আমাকে স্পষ্ট জানান। এর পরেই থানায় তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করি।”
অভিযোগ পেয়েই পুলিশ ওই রাতেই ভাকুড়ির গজধরপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে ওই কর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই সংস্থার সঙ্গে জড়িত আরও তিন জনের নাম পুলিশের জেরায় ওই ব্যক্তি স্বীকার করেন। তাদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, ওই সংস্থায় টাকা লগ্নি করা আমতানতকারীর সংখ্যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমানতকারীরা কত টাকা লগ্নি করেছিল তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সুমনবাবু অবশ্য বলেন, “অর্থলগ্নি ওই সংস্থার প্রধান কার্যালয় বলে কলকাতার তালতলা এলাকার ঠিকানা দেওয়া থাকলেও সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওই ঠিকানায় সংস্থার কোনও কার্যালয় নেই।”
ডোমকলে এ দিন প্রায় শতাধিক আমানতকারী টাকা ফেরতের দাবিতে ওই সংস্থার অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। তারা অফিস ভাঙচুর করতে গেলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। গ্রেফতার তিন কর্মীর নাম সুদীপ্ত ঘোষ, শাহজামাল বিশ্বাস, ও অনিমেষ সাহা। সুদীপ্ত ও অনিমেষের বাড়ি বহরমপুরে এবং শাহজামালের বাড়ি ডোমকলে। আমানতকারীদের অভিযোগ, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ওই সংস্থা তাদের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। ডোমকলের এসডিপিও দেবর্ষি দত্ত বলেন, “আমানতকারীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন ওই তিন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” সোমবারও পুলিশ আমানতকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অন্য দুই সংস্থার এজেন্ট বিপ্লব দাস ও আতাউর রহমানকে গ্রেফতার করে ডোমকল থানার পুলিশ। |