|
|
|
|
বিক্ষোভের ঢেউ মন্ত্রীর বাড়িতে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সারদার বিক্ষোভের ঢেউ পৌঁছল মন্ত্রীর বাড়িতেও। মঙ্গলবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম শহরে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার বাসভবনের সামনে সারদার প্রায় পঞ্চাশ জন এজেন্ট বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি দেন। মন্ত্রী এ দিন ক্যাবিনেট বৈঠকে যোগ দিতে মহাকরণে ছিলেন। মন্ত্রীকে না-পেয়ে তাঁর বাড়ির এক নিরাপত্তারক্ষীর হাতে স্মারকপত্র জমা দিয়ে যান এজেন্টরা। মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সারদার বিষয়টি দেখছেন। আমি নতুন করে মন্তব্য করতে চাই না।” এ দিনই তমলুকে জেলা প্রশাসনের অফিসের সামনে আইন অমান্য কর্মসূচিতে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি মানস ভুঁইয়া সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি ও অন্য আর্থিক সংস্থাগুলির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিধানসভার অধিবেশন ডাকার দাবি জানান।
এ দিন মন্ত্রীর বাসভবনের সামনে ঝাড়গ্রাম শহরে এজেন্টদের জমায়েতে কেউ কাঁদছিলেন, কেউ আবার ‘দিদি আমাদের বাঁচান’ প্ল্যাকার্ড ধরে ছিলেন। |
সারদা কাণ্ডের জের
|
সুকুমার হাঁসদার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ |
কয়েকজন এজেন্ট মন্ত্রীর বাড়ির সামনে ক্ষোভে চিত্কার করে বলতে থাকেন, “মদ খেয়ে মারা গেলে যদি পরিজনেরা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন, তাহলে আমরা কেন পাব না? সারদার সঙ্গে নেতা-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠতা আমরা দেখে এসেছি। এখন মুখ্যমন্ত্রী দায় এড়াচ্ছেন কেন?”
স্মারকপত্রে সারদার ঝাড়গ্রাম শাখার এজেন্টরা জানিয়েছেন, জঙ্গলমহলের মানুষের কাছ থেকে কমবেশি ৮০-৯০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। বেলপাহাড়ির ভুলাভেদার মহেন্দ্র সর্দার, অনিল সর্দারের মতো সারদার এজেন্টরা এ দিন মন্ত্রীর বাড়ির সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, “এলাকার গরিব মানুষ শালপাতা, কেন্দুপাতা বিক্রি করে আমাদের মাধ্যমে তিলে তিলে টাকা জমিয়েছিলেন। এ ভাবে আমরা প্রত্যেকে গত কয়েক বছরে গড়ে ২০-২৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছি। এখন কী ভাবে আমানতকারীদের ক্ষোভ সামাল দেব?” ঝাড়গ্রামের এজেন্ট চিত্তরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সারদার ঝাড়গ্রাম শাখা অফিসের আওতাও প্রায় দু’হাজার এজেন্ট আমানত সংগ্রহের কাজ করতেন। আমরা এজেন্টরাও বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা জমিয়েছিলাম।” ঝাড়গ্রামের আর এক এজেন্ট সোমনাথ চক্রবর্তী বলেন, “বিভিন্ন প্রকল্পে আমানতকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিলাম। এর মধ্যে নিজের সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা রয়েছে।” |
|
তমলুকে মানস ভুঁইয়া সান্ত্বনা দিচ্ছেন এক এজেন্টকে |
এ দিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের অফিসের সামনে কংগ্রেসের আইন অমান্য কর্মসূচি শেষে নন্দীগ্রাম, চণ্ডীপুর ব্লকের সারদা গোষ্ঠীর একদল এজেন্ট মানসবাবুকে ঘিরে ধরে কান্নাকাটি শুরু করেন। নন্দীগ্রামের গোপীমোহনপুরের মহম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “আমি সারদা গোষ্ঠীর টিম লিডার হিসেবে কলকাতায় বিভিন্ন সভায় যেতাম। সেখানে মন্ত্রী মদন মিত্র, সাংসদ কুনাল ঘোষ, শতাব্দী রায়রা যেতেন। মদনবাবু সভায় বলতেন সারদার হাত শক্ত করুন। আমি আপনাদের পাশে আছি। এখন উনি বলছেন সারদার সঙ্গে যুক্ত নন। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।” মহেশপুরের শশাঙ্ক বারিক, গোকুলনগরের কৃষ্ণা মণ্ডল বলেন, “আমরা গত চার বছর ধরে সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট হয়ে কাজ করছি। এলাকার মানুষের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা তুলে জমা দিয়েছিলাম। এখন সবাই টাকা ফেরত চাইছে। ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছি না।” চণ্ডীপুরের এরাশাল গ্রামের সৌরভ মাইতি, কদমতলার তপন মাইতিরা বলেন, ‘‘আমরা সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট হিসেবে এলাকার মানুষের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা জমা তুলেছিলাম। সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবাই টাকা ফেরত চাইছে। তাই ভয়ে এখন বাড়ি যেতে পারছি না।” মানসবাবু এজেন্টদের শুকনো সান্ত্বনার বাণী ছাড়া আর কিছু শোনাতে পারেননি। তিনি বলেন, “সিপিএমের আমলে এ রাজ্যে চিট-ফান্ড গজিয়ে উঠেছিল। তৃণমূল সরকারের আমলে তা ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। আমরা এই নিয়ে আগেই সাবধান করেছিলাম।” মানসবাবু আরও অভিযোগ করেন, “রাজ্যের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় চিট-ফান্ডের রমরমা সবচেয়ে বেশি। এই জেলার সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সব তৃণমূলের। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”
এ দিকে, সবর্স্বান্ত হওয়া আমানতকারীদের হাত থেকে বাঁচতে সোমবার গভীর রাতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কাঁথির সারদা গোষ্ঠীর এক এজেন্ট। দীপু দাস (২৮) নামে ওই যুবকের বাড়ি কাঁথি থানার বেনামুড়ি গ্রামে। এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত দীপু এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, আমানতকারীরা গত দু’দিন ধরে দীপুর বাড়িতে ধর্না দিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। দীপু তাই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সোমবার রাতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন দীপু। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় গভীর রাতে তাঁকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক সন্তানের বাবা দীপু সারদার এজেন্ট হয়ে কয়েক লক্ষ টাকা আমানতকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে সারদায় জমা দিয়েছিলেন। দীপুর বাবা সুধীর দাসের কথায়, “গত কয়েকদিন আমানতকারীরা বাড়িতে এসে বিক্ষোভ দেখানোয় ছেলে এক আত্মীয়ের বাড়ি যায়। রাজ্য সরকার প্রতারিত আমানতকারীদের টাকা উদ্ধার বা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে আশা করছিলেন দীপু। সোমবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার পর হতাশ হয়ে পড়ে ও রাতে বিষ খায়।”
আমানতকারীদের টাকা ফেরত ও সারদা গোষ্ঠীর কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার কাঁথির মহকুমাশাসকের কাছে ডেপুটেশন দেয় দক্ষিণ কাঁথি যুব কংগ্রেস। |
ছবি: দেবরাজ ঘোষ ও পার্থপ্রতিম দাস। |
|
|
|
|
|