আজ আবেগ বনাম শহর
চেয়ারে সার দিয়ে বসে গুণে গুণে ঠিক একশো জন। ওরা সবাই পনেরো-ষোলো, ওরা সবাই দৃষ্টিহীন।
কয়েক হাত দূরে টেবলের উপর বিশাল একটা কেক। যার উপর সাজানো ব্যাট, উইকেট, তাঁর মুখ। এক জনের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল ছুরি, বাকি নিরানব্বইয়ের কোরাস ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ... আমরা একশো জন মিলে তোমার শতায়ু কামনা করছি।’
যাঁর চল্লিশতম জন্মদিনের প্রেক্ষাপটে শতায়ু কামনা, যাঁকে শুধু এক বার দেখার জন্য প্রবল বৃষ্টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্লাবহাউসের নীচে দাঁড়িয়ে অগুণতি কালো মাথা, শহরে যাঁর টিমের উপস্থিতি নিয়ে কলকাতা ধর্মসঙ্কটে, ইডেনের ঘাসে আজও তাঁর পা পড়ল না। বরুণ দেবতার খেয়ালে ক্রিকেট-দেবতার দর্শন অধরা থেকে গেল। কিন্তু তাতে আর কতটুকু আসে-যায়? বৃষ্টি হোক, ঝড় উঠুক, পৃথিবী রসাতলে যাক, সৌরভের শহরে সচিনের চল্লিশতম জন্মদিন অচেনা এই মাহেন্দ্রক্ষণের বোধনের মেজাজ যা থাকা উচিত, আছে তেমনই।
ক্লাবহাউস চত্বর দিয়ে হাঁটলে দু’পা অন্তর কানে আসবে, ‘আছে?’ ‘হবে?’ ‘একটা?’ মহমেডান মাঠের টিকিট কাউন্টারের সামনে সাপের মতো এঁকেবেঁকে লাইনের শুরু আছে, শেষ নেই। টিকিট নিঃশেষিত। সিএবি কর্তারা হাত তুলে দিচ্ছেন। আবেগের এমন বিস্ফোরণ দেখে কখনও কখনও মনে পড়ে যাবে ঐতিহাসিক ৫ মে-কে।
সে দিন যা হয়েছিল, আজও প্রায় তাই।
সে দিন ছিল সৌরভ বনাম কলকাতা। হৃদয়ের আকুতি বনাম শিকড়ের টান।
আজ সচিন বনাম কলকাতা। মহানায়কের জন্মদিনের আবেগ বনাম ঘরের টিমের জন্য সমর্থন।
যে টিম আজ বাঁচার যুদ্ধে নামছে। মুম্বই ম্যাচেও হার মানে গৌতম গম্ভীরদের প্লে-অফ স্বপ্ন কার্যত শেষ। বিপক্ষ টিমের মহানায়ককে ঘিরে আবেগসমুদ্রে গা ভাসাতে তাই একেবারেই রাজি নন নাইট অধিনায়ক। বরং পরিষ্কার বলে দিলেন, “সচিনের জন্মদিন নিয়ে আমাদের কোনও প্ল্যান নেই। বরং প্লে-অফে বিশ্বাস এখনও রাখছি বলে বুধবার খেলতে নামব।”
সবার অজান্তে ততক্ষণে চল্লিশতম জন্মদিন নিয়ে বাইশ গজে নেমে পড়েছেন সচিন-ঘনিষ্ঠরা। স্ত্রী অঞ্জলি, খুব কাছের জনা দশ-বারো বন্ধুবান্ধব নিয়ে মঙ্গলবার রাতে টিম হোটেলে প্রাইভেট পার্টি হচ্ছে। থাকছে বিশেষ কেক, ওয়াইন, সচিনের পছন্দের কাকোরি কাবাব থেকে শুরু করে দমপখ্ত বিরিয়ানি। বিকেলের দিকে আবার এয়ারটেলের উদ্যোগে ভক্তদের সঙ্গে আড্ডাতেও বসে গেলেন সচিন। টেলিফোনের ও পারে কখনও বালিগঞ্জ থেকে বেহালা, আজমের থেকে কেরল। ঘণ্টাখানেকের অনুষ্ঠানে উঠে এলেন শেন ওয়ার্ন থেকে অর্জুন তেন্ডুলকর, এক সময়ের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে যুদ্ধ থেকে আত্মজ-প্রেম।
সচিন বলে ফেললেন, “বছরে এক বার পরিবারের সঙ্গে ছুটি না কাটালে ক্রিকেট মরসুমের রসদ পাই না। বাকি সময়টা আমার ছেলেমেয়েও তো শুধু টিভিতেই আমাকে দেখতে পায়!” আর ওয়ার্ন? “ওর সঙ্গে লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি ছিল। তবে শুধু ওয়ার্ন নয়, যে কোনও বোলারকে উইকেট দিয়ে আসাটা সমান আক্ষেপের।” এক তরুণী অকপট, “ক্রিকেটের চেয়ে বলিউড আমার বেশি পছন্দ। কিন্তু আপনি খেললে টিভির সামনে থেকে নড়তে পারি না।” শুনে সচিনের পাল্টা প্রশ্ন, “কার সিনেমা দেখেন?” উত্তরে সলমন খানের নাম শুনে এ বার সচিন, “ও শুধু ভাল অভিনেতা নয়। ভাল মানুষও। এই তো সে দিন সলমনের সঙ্গে দেখা হল।”
সচিনের জন্য উপহার। এই কেকই পাঠানো হবে সিএবি-র তরফ থেকে।
কাটা হচ্ছে তার রেপ্লিকা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ব্যক্তিগত জীবন, ছেলে অর্জুনের জীবনে তাঁর ভূমিকা, সব নিয়ে বলে গেলেন গড়গড়িয়ে। “আমি ক্রিকেটার বলেই যে অর্জুনকে ক্রিকেট ব্যাট তুলে নিতে হবে, এমন কোনও মানে নেই। ও চাইলে ব্যাডমিন্টন খেলুক। চাইলে গল্ফার হোক। আইন নিয়ে পড়াশোনা করুক। আর ছোটবেলায় এমনিই ফুটবলে বেশি আগ্রহ ছিল অর্জুনের। পরে একটা সময় পড়েছিল দাবা নিয়ে। এখন দেখছি ক্রিকেটে মন দিয়েছে!” কেরলের এক ভক্তের কাছে সচিন জানতেও চাইলেন, “ওখানে কখন যাওয়া যায় বলুন তো? অনেক দিন ধরেই ভাবছি কেরলে ঘুরতে যাব।”
বুধবার জন্মদিনে আবার দু’দুটো অনুষ্ঠান। একটা সকালে, টিম মুম্বইয়ের পক্ষ থেকে। অন্যটা বিকেলে, আয়োজক সিএবি। শহরের নামী বেকারি থেকে আসছে চল্লিশ পাউন্ডের অতিকায় কেক, কাটা হবে রূপোর ছুরি দিয়ে। দুই টিমের ক্রিকেটারদের উপস্থিতিতে। গোটা ক্লাবহাউস মুড়ে ফেলা হচ্ছে বেলুনে। যাতে লেখা থাকবে, ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ তেন্ডুলকর!’ এমন বাদশাহি বার্থডে পার্টির আয়োজন ইডেন দেখেনি, কলকাতাও না। নিউ আলিপুরের এক ভক্ত তো আবার চল্লিশ কেজি সন্দেশ দিয়ে সচিনের উচ্চতা সমান ব্যাট তৈরি করছেন। আজ যা লিটল মাস্টারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
সব দেখেশুনে বোধহয় কিছুটা আবেগতাড়িত সচিন নিজেও। ঘনিষ্ঠমহলে বলেও ফেলেছেন, কলকাতা ভালবাসার শহর। আর কলকাতায় চল্লিশতম জন্মদিন একটা আলাদা ব্যাপার। ফেসবুকেও তাঁর পোস্ট: এত সব সমর্থকের সঙ্গে কথা বলতে পেরে দারুণ লাগল। আপনাদের প্রার্থনার জন্য ধন্যবাদ!
সচিন-ভক্ত পরীক্ষিত গুপ্ত উপহার দেওয়ার জন্য তৈরি করেছেন মিষ্টির ব্যাট। ছবি: উৎপল সরকার
প্রার্থনা সচিনের দিকে হলে সমর্থনের বক্স অফিসে অ্যাডভান্টেজ কেকেআর। কিন্তু মুম্বই ম্যাচের আগে গম্ভীররা কতটা এগিয়ে, প্রশ্ন থাকছে। বৃষ্টির চোটে মুম্বই এ দিন প্র্যাক্টিসে গেলই না, রিকি পন্টিং প্রেস কনফারেন্স করতে যাবেন ভেবেও দিব্য কফিশপে ক্রিস গেইলের বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখতে বসে পড়লেন। কেকেআর শিবির থেকে আবার গেইলের জন্য টুইটারে ম্যাকালামের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানো হল। আইপিএলে ম্যাকালামের রেকর্ডই তো এ দিন ভেঙে দিলেন গেইল। এ সবের মধ্যেই আবার টিম কম্বিনেশন নিয়ে জট। ওপেনিং নয়, এ বার লোয়ার মিডল অর্ডারে। লক্ষ্মীরতন শুক্লর হাঁটুর চোট এতটাই গুরুতর যে তিনি মুম্বই ম্যাচে নেই। ম্যাকালামকে আনা যাবে কি না, গম্ভীর তা নিয়েও নিশ্চিত নন। কারণ তা হলে ওয়েন মর্গ্যানকে বসাতে হয়। আশঙ্কা আছে টিমের মনন ঘিরেও। হারতে হারতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া একটা টিম মুম্বইয়ের মতো হেভিওয়েট প্রতিপক্ষের কাঠিন্যের কতটা মহড়া নিতে পারবে? নিজেদের কতটা মোটিভেট করতে পারবে? গম্ভীর প্রশ্নটা শুনে উত্তেজিত হয়ে পড়লেন, “কেকেআরের জার্সি পরে যদি কেউ মোটিভেটেড না হয়, তা হলে সে বাড়িতে বসে টিভিতে খেলা দেখতে পারে। আর সবাই কেন এত সচিন বনাম কেকেআর বলছেন জানি না। প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, আমরা কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নামি না। টিমের বিরুদ্ধে খেলি।”
অকাট্য দর্শন। কিন্তু ব্যক্তির নাম যদি হয় সচিন রমেশ তেন্ডুলকর, কী করা যাবে?

বুধবার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আংশিক মেঘলা আকাশ। বিকেল কিংবা সন্ধ্যা
নাগাদ বজ্র-বিদ্যুৎসহ বৃষ্টির আশঙ্কা।
ইডেনের ব্যালান্স শিট
ম্যাচ
মুম্বই ৩ : কেকেআর
এত সব সমর্থকের সঙ্গে কথা বলে দারুণ
লাগল। আপনাদের প্রার্থনার জন্য ধন্যবাদ!





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.