|
|
|
|
দুর্নীতি নিয়ে সুর চড়াল বিজেপি, আগ্রাসী সনিয়াও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
যথাসময়ে হলে লোকসভা ভোট এখনও এক বছর বাকি। কিন্তু সংসদে কংগ্রেস-বিজেপির কৌশলের লড়াই এখনই উচ্চগ্রামে পৌঁছে গেল। টুজি কাণ্ড এবং কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে সুর চড়িয়ে বিজেপি যেমন প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে আজ সংসদ অচল করে দিল, তেমনই সনিয়া গাঁধীও পাল্টা আগ্রাসী হয়ে জানিয়ে দিলেন, বিজেপির দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি। সনিয়া বলেন, “ওঁরা যা খুশি বলুন।” বরং সংসদ চালিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা ও জমি বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাশ করাতে এ বার বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরাতে নেমে পড়লেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
গত কালের পর আজও সংসদের উভয় কক্ষ অচল করে রাখে বিজেপি। তাদের ক্ষোভের কারণ দু’টি।
এক, টুজি কাণ্ডের যৌথ সংসদীয় রিপোর্টে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে দায়ী করে তাঁর অবমাননা করা হয়েছে। অথচ টুজি বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ার চেষ্টা চলছে জেপিসি রিপোর্টে।
দুই, কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে সিবিআই সর্বোচ্চ আদালতে রিপোর্ট পেশ করার আগে তদন্ত সংস্থাটির কর্তাকে ডেকে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার। এই দুই ঘটনায় মনমোহন ও অশ্বিনীর কুমারের ইস্তফা চেয়ে আজ সংসদ অচল করে দেয় বিজেপি। তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, বিজেপির খেলাটা অন্য। সুষমা স্বরাজ-অরুণ জেটলিরা বিলক্ষণ জানেন প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দেবেন না। কিন্তু কৌশলে এই দাবি তুলে দুর্নীতি প্রশ্নে কংগ্রেসকে চাপে রাখতে চাইছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে সংসদ অচল করে তারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে, যাতে গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে সরকারকে বিপাকে পড়তে হয়। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, বিজেপি-র এই খেলা বুঝেই পাল্টা আক্রমণে গিয়েছেন সনিয়া। তা ছাড়া জেপিসি রিপোর্টে কোথাও বাজপেয়ীর নামের উল্লেখও রাখা হয়নি। আবার কয়লা খনি বণ্টনে মনমোহনের যে কোনও দায় ছিল না, তা আজ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট থেকেই পরিষ্কার। তা সত্ত্বেও বিজেপি যেনতেন প্রকারে সংসদ অচল করায় বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরানোর ব্যাপারে আজ দলের রাজনৈতিক ম্যানেজারদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সনিয়া। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বামেরা আজ জানিয়ে দিয়েছে, তাঁরা সংসদ অচল রাখা বা প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা চাওয়ার পক্ষে নন। একই ভাবে বিজেপির শরিক সংযুক্ত জনতা দলের নেতা শরদ যাদবও বলেছেন, “আমরা জেপিসি-র রিপোর্ট নিয়েই চিন্তিত, প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা নিয়ে নয়।”
তবে সনিয়ার পাল্টা আক্রমণ সত্ত্বেও আন্দোলনের ধার কমাতে চাইছে না বিজেপি। অরুণ জেটলি বলেন, “সনিয়া গাঁধীর মন্তব্যে আমরা বিস্মিত নই। কংগ্রেসের সভানেত্রী হিসাবে তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি আড়াল করবেন, সেটাই স্বাভাবিক।” এর আগে আজ সকালে লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক হয়। সেখানে আডবাণী বলেন, সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধে বিরোধীরা কোনও মন্তব্য করলে কংগ্রেস নেতারা রে-রে করে ওঠেন। একই ভাবে টুজি নিয়ে জেপিসি রিপোর্টে বাজপেয়ীর নাম তোলার পরে বিজেপির পক্ষেও সরকারকে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়।
সেই কৌশলের অঙ্গ হিসাবেই বিজেপি এখন আক্রমণাত্মক অবস্থান নিচ্ছে। সংসদ অচল করছে। দলের এক নেতার কথায়, বৃহস্পতিবার জেপিসি-র বৈঠকে সরকার পক্ষ কী অবস্থান নেয়, তার উপরেই নির্ভর করছে, সংসদে সরকারকে সহযোগিতা করা হবে কি না। জেপিসি-র চেয়ারম্যান পি সি চাকো জানান, রিপোর্টে বাজপেয়ীর নাম নেই। বিজেপির বক্তব্য, বাজপেয়ীর নাম না করে ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী’ বলার মধ্যেও যথেষ্ট ইঙ্গিত থাকে। বিজেপি তা বরদাস্ত করবে না। |
|
|
|
|
|