বিধাননগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিশ্বজীবন মজুমদারের নির্দেশে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের মধ্যে ৪৫ কাঠা জমির উপরে ব্যবসায়িক কারণে ব্যাঙ্কোয়েট হল-সহ যে বিভিন্ন নির্মাণকাজ হয়েছিল, তা ১৫ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ওই জায়গায় সবুজ ফেরানোর নির্দেশও দিয়েছে আদালত। অরুণাংশু চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি সেন্ট্রাল পার্ক দখল করে এই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়ে বলে, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে তত্কালীন বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান একক ভাবে এই নির্মাণকাজের অনুমোদন দেন। বর্তমান বিধাননগর পুরসভার পক্ষে আইনজীবী প্রদ্যুম্ন সিংহ হাইকোর্টে বলেন, বর্তমান বোর্ড ক্ষমতায় আসার আগেই এই সব কাজ হয়েছে। বর্তমান পুরসভা জানিয়ে দিয়েছে এই নির্মাণ সম্পূর্ণ বেআইনি।
এ দিন হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, ওই নির্মাণকাজের মালিক সূর্যপ্রকাশ বাগলাকে রাজ্য লিগাল সার্ভিস অথরিটির কাছে জরিমানা বাবদ ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে আদালতের রায়, প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিশ্বজীবন মজুমদারের বিরুদ্ধে যে ফৌজদারি মামলা চালু হয়েছে, তা গতিশীল করতে হবে। এই ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে যাতে কোনও প্রভাব কাজ করতে না পারে, তা-ও পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। |
সেন্ট্রাল পার্কের সেই বেআইনি বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র। |
অভিযোগ, তত্কালীন চেয়ারমান বিশ্বজীবন মজুমদার যে কোনও নিয়মকানুনের ধার না মেনে সম্পূর্ণ একক ভাবে সেন্ট্রাল পার্কের সবুজ নষ্ট করে ব্যক্তিগত ব্যবসা করার জন্য এক প্রোমোটারকে অনুমতি দিয়েছিলেন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেন্ট্রাল পার্ক এলাকায় ২০০৫ সালে একটি এক-দেড় তলা বাড়ি করা হয়। এই বাড়িটি প্রথমে পার্কের মাঠের খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম হিসেবে ব্যবহার করা হত। ২০০৭ সালে পুরসভা একটি ট্রাস্টির সঙ্গে চুক্তি করে এই দেড়তলা বাড়ির উপরে আরও দোতলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৯ সালে ওই ট্রাস্টির সঙ্গে ফের চুক্তি হয় এবং বাড়িটিকে আরও বাড়ানো হয়।
অভিযোগ, প্রথম চুক্তিতে কাউন্সিলরদের অনুমোদন নেওয়া হলেও দ্বিতীয় চুক্তিতে কাউন্সিলরদের থেকে কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এর পরেই ২০১০ সালে সল্টলেকের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং অরুণাংশু চক্রবর্তী নামে এক আইনজীবী এই নির্মাণের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তার পরেই বর্তমান পুরসভা ওই নির্মাণকাজকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে। নির্মাণকারী সংস্থার কাছ থেকে যে ৭০ লক্ষ টাকা পুরসভা পেত, সেটাও পুরসভা নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এমনকী ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে তারা। সিপিএম বোর্ডের প্রাক্তন চেয়্যর্যান বিশ্বজীবন মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফ আই আর করে তারা।
বিশ্বজীবনবাবু এ দিনের রায় প্রসঙ্গে বলেন, “এটি আমার ব্যক্তিগত কোনও কাজ নয়। এটি পুরসভার কাজ। সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই করা হয়েছিল। আমরা একটি বাড়ির উচ্চতা বাড়িয়েছি শুধু। সেই সময়ে সল্টলেকের ট্যাক্স সংগ্রহ বন্ধ ছিল। পুরসভা অর্থকষ্টে ভুগছিল। তাই এই বাড়িটি ভাড়া দিয়ে আয় করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাত বছরের ভাড়ার চুক্তি হয়।” বিশ্বজীবনবাবু জানান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে।
বর্তমান পুর-বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত বলেন, “বাম আমলে এই বেআইনি নির্মাণ হয়েছিল। আমরা দায়িত্ব নিয়ে পদক্ষেপ নিই। আদালতের এ দিনে রায়ে এটি প্রমাণ হয়ে গেল।” যদি বাড়িটি বেআইনি হয়, তা হলে আগেই ভেঙে দেওয়া হল না কেন? এই প্রসঙ্গে সব্যসাচীবাবু বলেন, “আমি বারবার সিআইসিতে বলেছিলাম। এই দফতর চেয়ারপার্সনের দফতর। তিনি বলতে পারবেন কেন দায়িত্ব নেননি।” চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “এখনও আদালতের রায়ের কপি পাইনি। কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।” |