জমানো টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বর্ধমানের সিজেএম আদালতে দু’টি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন লগ্নিকারীরা। সিজেএম সেলিম আহমেদ দু’টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করে বর্ধমান থানাকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তবে অভিযুক্তেরা কেউই এই জেলার নন। ফলে, তাঁদের সন্ধান পেতে সমস্যা হচ্ছে। তবে খোঁজ চলছে।”
গত ৯ এপ্রিল সিজেএম আদালতে প্রথম যে সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় তাদের অফিস বর্ধমানের বুড়িরবাগানে। বর্ধমানের দিঘিরপাড়ের বাসিন্দা নাজেমা শেখ সিজেএম আদালতে অভিযোগ করেন, বেশ কিছু এজেন্ট মারফত গ্রামগঞ্জ থেকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেছে সংস্থটি। তার পরে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সংস্থার আধিকারিকদের জন্য বর্ধমানের বেলগ্রামে তৈরি হয়েছে প্রাসাদোপম বাড়ি। নাজেমা শেখ অভিযোগ করেন, জামা রাখা টাকা তিনি সময়ে সুদে-আসলে ফেরত না পেয়ে কয়েক জন আমানতকারীকে নিয়ে প্রথমে তাঁদের বুড়িরবাগানের অফিসে যান। সেই অফিস বন্ধ দেখে, তাঁরা যান বেলগ্রামে। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের সেখানে ঢুকতে দেননি। তাই বাধ্য হয়ে জমা রাখা টাকা ফেরত চেয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। সংস্থার দুই ডিরেক্টর পূর্ণিমা রায় ও স্মৃতিকণা রায় এবং সচিব তিথি রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন নাজেমা শেখ। ওই সংস্থার অফিসে ফোন করা হলে পরিচয় জানাতে অস্বীকার করে এক ব্যক্তি বলেন, “সংস্থার অফিস আপাতত কয়েক দিন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়।”
গত ১২ এপ্রিল বর্ধমান শহরের কালিবাজারের বাসিন্দা কুন্তল দাঁ সিজেএম আদালতে একটি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। ওই সংস্থার অফিস হুগলির চুঁচুড়ার হসপিটাল রোডের হরিধন পাড়ায়। কুন্তলবাবু তাঁর লগ্নির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সংস্থার তিন ডিরেক্টর সৌম্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রাবণী বন্দ্যোপাধ্যায় ও ক্ষণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন। কুন্তলবাবুর দাবি, ওই সংস্থার লোকজন বর্ধমানে এসে তিনি-সহ কয়েক জনকে চড়া সুদের লোভ দেখিয়ে তাঁদের সংস্থায় লগ্নি করতে লোভ দেখান। তিনি কয়েক লক্ষ টাকা লগ্নি করেন দাবি করে কুন্তলবাবুর অভিযোগ, মেয়াদ শেষে তাঁরা টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন সংস্থার অফিস বা ডিরেক্টরদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। উল্টে, সেখানে কিছু লোকজন তাঁদের প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে কুন্তলবাবু জানান।
চুঁচুড়ার ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অভিযোগকারীদের আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, “আদালতের নির্দেশে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা বন্ধ করবে, এই আশায় আমার মক্কেলেরা আদালতে গিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের টাকাও ফেরত চান। আশা করি, পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।”
এ দিকে, জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “মেমারির একটি অর্থলগ্নি সংস্থার দফতরে সোমবার রাতে তল্লাশি চালিয়ে মেমারি থানার পুলিশ ট্রেড লাইসেন্স আটক করেছে। সেই লাইসেন্স অনুযায়ী, ওই সংস্থাটি চা প্যাকেটজাত করে বিক্রির ব্যবসা করার কথা। কিন্তু তারা বেআইনি ভাবে বাজার থেকে টাকা তুলেছে।” চেষ্টা করেও ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। |