পুরসভার ট্যাপ কল থেকে পানীয় জলের সঙ্গে ব্যাঙাচি বার হতে দেখে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার শিলিগুড়ি পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রমোদনগর কলোনিতে তা নিয়ে হইচই পড়ে যায়। পানীয় জল দূষণ থেকে এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতেই পেটের রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ। প্রমোদনগরে রাস্তার ধারে পুরসভার তিনটি পানীয় জলের ট্যাপ কল রয়েছে। তা ছাড়া পাড়ার ৫ টি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই কল থেকেই পানীয় জলের সঙ্গে ব্যাঙাচি বার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। পুরসভাকেও এ দিন সমস্যার কথা জানানো হয়। এর পরেই জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ পম্পা দাস, বরো চেয়ারম্যান নিখিল সাহানি এলাকায় গিয়ে পাইপের কোনও অংশে সমস্যা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। সেই মতো পাইপ লাইন পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়। সমস্যা না-মেটা পর্যন্ত এলাকায় পুরসভার সরবরাহ করা জল খেতে নিষেধ করা হয়েছে। |
পুরসভার কল থেকে বের হওয়া ব্যাঙাচি-সহ জল।—নিজস্ব চিত্র। |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু এ দিনই নয়। গত এক সপ্তাহ ধরেই কলগুলি থেকে মাঝে মধ্যেই ব্যাঙাচি বার হচ্ছিল। পুরসভাকেও তা জানানো হলেও গুরুত্ব দেননি কেউ। এমনকী এ দিনও জল সরবরাহ বিভাগের মেয়র পারিষদ একটি মাত্র কলে এই সমস্যা হচ্ছে বলে বিষয়টি লঘু করে দেখার চেষ্টা করেন। অথচ এ দিন মাত্রাতিরিক্ত ব্যাঙাচি বার হচ্ছে দেখে হইচই পড়ে। তার পরেই তিনি নড়ে বসেন। পানীয় জল দূষিত হয়েই পেটের রোগ হচ্ছে বলে এ দিন অভিযোগ তুলেছেন ওই বাসিন্দারা। এলাকায় অন্তত ৩০০ জন পেটের অসুখে আক্রান্ত বলে তারা জানিয়েছেন। পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “সমস্যার খবর পেয়েই জল সরবরাহ বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মেয়র পারিষদ এলাকায় গিয়ে ছিলেন। বিভাগের আধিকারিকদের সমস্যা মেটাতে সব ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। নিজেও এলাকায় থেকে কাজের তদারকি করছেন।” এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির করার আশ্বাসও দেন মেয়র।
ওই ঘটনায় পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঠিক কী কারণে বা কী ভাবে পাইপের জলে ব্যাঙাচি এল তা এখনও বুঝতে পারছেন না জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকেরা। সিপিএমের কাউন্সিলর মুকুল সেনগুপ্ত বলে, “জল সরবরাহ বিভাগের পাইপ লাইন যে ঠিক মতো দেখভাল হয় না তা স্পষ্ট। না হলে পাইপের জল থেকে ব্যাঙাচি বার হয়? অবিলম্বে সমস্ত পাইপ, জলাধারগুলি খতিয়ে দেখা উচিত।”
এ দিন সকালে পুরসভার ট্যাপকলে জল ভরতে গিয়েছিলেন প্রমোদনগর কলোনির বাসিন্দা রিতা সরকার। বালতিতে জল ভরার পর চমকে ওঠেন তিনি। পাত্রের জলে ভর্তি ব্যাঙাচি। পুরসভার জলের কল থেকেই তা পড়েছে বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দা অনিল সাহানি, শেফালি বিশ্বাসদেরও একই অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দা শম্পা হীরা বলেন, “বাড়িতে পুরসভার পানীয় জলের সংযোগ রয়েছে। বাড়ির কল থেকেও ব্যাঙাচি বার হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরেই আমি এবং পরিবারের অ্যনান্যরা পেটের রোগে ভুগছি। এখন বুঝতে পারছি ওই দূষিত জল খেয়েই এই অবস্থা হয়েছে।”
প্রমোদনগর লাগোয়া হকার্স কনারে দোকান রয়েছে শঙ্কর সাহার। তিনিও প্রমোদনগরের কল থেকে পানীয় জল নিয়ে যায়। শঙ্করবাবু বলেন, “ওই জল খেয়েই গত কয়েকদিন ধরেই পেটের অসুখে ভুগছি।” এলাকার বাসিন্দা অনিল সাহানি জানান, পেটের অসুখে তিনি স্ত্রী, বাচ্চারা এক সপ্তাহ ধরে ভুগছেন। আট বছরের মেয়ে নেহা, ছেলে রাজুকে পেটের অসুখের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। মেয়েকে শনিবারই হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়েছে। বাড়ি ফিরে ফের অসুস্থ বোধ করছে। পেশায় রিকশা চালক সুবল দাস এবং তাঁর স্ত্রী শিবরানি দেবীও পেটের রোগে ভুগছেন। |