জয়েন্টে বাড়ছে দুঃস্থ পরীক্ষার্থী
য়েন্ট এন্ট্রান্স একটি দরজা। দরজাটা যদি খুলে যায় তা হলে সুখের আর অবধি নেই।
ঈশ্বরচন্দ্র ইন্সটিটিউশনের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত দত্ত বলেন, “ঈশ্বর পাটনী চেয়েছিলেন তাঁর সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে। এখনকার অভিভাবকেরা চান সন্তান যেন বিদেশে থাকে। ভাল থাকে। আর তাতে কোনও দোষ নেই।” যিনি নিজে কখনও দেশের বাইরেই যাননি, কোনওমতে দিনযাপন করেন, তাঁর ইচ্ছে হয় ছেলে যেন তুষারপাত দেখে, সে যেন দেখতে পায় অ্যারিজোনার মরুভূমি, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন কিংবা নায়াগ্রা জলপ্রপাত। নিজে পাঠাতে পারবেন না। ছেলে যদি জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ভাল ফল করে, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে চলে যেতে পারে সে সব স্বপ্নের দেশে।
উদাহরণ তো হাতের কাছে কত ছড়ানো। বহরমপুরের শান্তনু দাস কর্মসূত্রে ক্যালিফোর্নিয়ায়। ফেসবুকে তাঁর পোস্ট করা ছবি তাঁর বাবা বলাইবাবু পাড়া-প্রতিবেশীদেরও কতবার দেখিয়েছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা বলাইবাবু মফস্সল শহরে বসে রাত জেগে স্কাইপিতে ছেলের সঙ্গে কথাও বলেন।
পরীক্ষার পরে। —নিজস্ব চিত্র।
এদিন বহরমপুর গার্লস কলেজ, গোরাবাজার আইসিআই, খাগড়া জিটিআই, টেক্সটাইল কলেজ, বানজেটিয়ায় এমসিইটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে জয়েন্টের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষার সময়ে উৎকণ্ঠার প্রহর গুণছিলেন অভিভাবকেরা। তেমনই এক অভিভাবক সোমনাথ ভট্টাচার্য সরাসরিই বলেন, “আমার ভাগ্নে ইঞ্জিনিয়ার। আমেরিকায় রয়েছে। ছেলেরও ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। আমিও চাই ছেলে বিদেশ যাক।” শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি বলেন, “খুব ছোট থেকেই মেয়ের ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। আমাদেরও ইচ্ছা তাই। আর সে কারণেই যতটা সম্ভব, সব রকম ভাবে জয়ন্টের প্রস্তুতিতে সাহায্য করেছি।”
কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার ফলে এখন জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ৭০ হাজার র্যাঙ্ক করলেও ছাত্রছাত্রীদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ এনে দিয়েছে, তেমনই জয়েন্ট এন্ট্রান্স নামের মাধুর্য কি কোথাও ফিকে হয়ে গিয়েছে? বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় কিন্তু জানিয়ে দেন তার ভাল দিকও। তাঁর কথায়, “এখন জয়েন্ট এন্ট্রান্সে এক প্রজন্ম শিক্ষিত এমন বাড়ির ছেলেমেয়েরাও পরীক্ষা দিচ্ছে। কারণ পড়াশোনার সুযোগ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধেও রয়েছে। ফলে বিপিএল তালিকায় থাকা ছাত্রদের সংখ্যা বাড়ছে।” তিনি বলেন, “আগে উচ্চশিক্ষার জন্য সামাজিক দিক থেকে উচ্চবর্ণের ছেলেমেয়েদের সংখ্যা বেশি ছিল। গরিব ঘরের ছেলেমেয়েদের সংখ্যা ছিল অপ্রতুল। এখন সেই অবস্থাটা ভেঙে গিয়েছে। জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরাও ভিন দেশে বিভিন্ন চাকরিও করছে।” বহরমপুরের ভাগীরথীর পশ্চিম পাড় লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা রেজিনা খাতুন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তাঁর বাবা পেশায় রিকশাচালক। খড়গ্রামের দিনমজুর ঘরের ছেলে মহম্মদ হিরুয়ানি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র।
জেএন একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুহাসরঞ্জন চট্টরাজেরও কথায়, “জয়েন্টের প্রস্তুতি নিতে প্রতি বছর গ্রামের ছেলেমেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে। তারা অনেকে সফলও হচ্ছে।” ২০১২ সালে বহরমপুর থেকে ৩ জন আইআইটিতে সুযোগ পান। ২০১১ সালে মেডিক্যালে ১১ জন, ২০১২ সালে ২৯ জন ছেলেমেয়ে সুযোগ পেয়েছেন। জেএন একাডেমির শিক্ষক নির্মল রায় বলেন, “বহরমপুরের মতো মফস্সল শহরেও অল্প খরচে ভাল কোচিংয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই মফস্সলের ছেলেমেয়েরাও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।”
এদিন বহরমপুর টেক্সটাইল কলেজে জয়েন্ট পরীক্ষা দিয়েছেন সুদীপ ভট্টাচার্য। সুদীপের বাবা মলয়বাবু খাগড়া গোয়ালপাড়ার মোড়ে ইস্ত্রি করেন। ছেলের সঙ্গে বাবাও গিয়েছিলেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। বাড়ির কাচা কাপড় ইস্ত্রি করতে দেওয়ার জন্য মলয়বাবুর কাছে যেতে হয় বহরমপুরে নামী ব্যবসায়ী পার্থসারথি ধরকে। পার্থবাবু বলেন, “মলয়বাবুর ছেলেও জয়েন্ট দিচ্ছে। বলল, ছেলে পাশ করে গেলে বিদেশে যাক বা না যাক, অন্তত এই জীবনটা থেকে মুক্তি পাবে।”
জয়েন্ট এন্ট্রান্স একটা দরজা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.