১১৬ বছর পরে ফের তার দেখা মিলল! পরিচয় নিশ্চিত হতে কেটেছে আরও বছর দুয়েক। এই প্রথম ক্যামেরায় ধরা দিল অজ্ঞাতপ্রায় ও বিস্মৃতপ্রায় উড়ন্ত গিরগিটি ‘নরভিল্স ফ্লাইং লিজার্ড’ বা ‘ড্রাকো নরভিলি’। অসমের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের এক গবেষক ও এক অধ্যাপকের মিলিত প্রয়াসে ডিব্রুগড়ের জ’পুর সংরক্ষিত অরণ্যে ১৮টি বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে বিরল ড্রাকো নরভিলি যেমন রয়েছে, তেমনই প্রথম বার ‘ট্যাকিড্রোমাস খাসিয়েনসিস’ ও ‘ভারানুস স্যালভেটরের’ দেখা মিলেছে এই এলাকায়। দুই প্রাণীবিদের গবেষণাপত্র ইতিমধ্যেই দু’টি আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান ও সরীসৃপ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকদের আশা, ক্যামেরার ছবি ও সংগৃহীত তথ্য থেকে ড্র্যাকো নরভিলির বিষয়ে এ বার বিস্তারিত সমীক্ষা চালানো সম্ভব হবে।
১৮৯৫ সালে উজানি অসমের তিনসুকিয়ার জেলার ডুমডুমা অঞ্চলে দেখা দিয়েছিল ‘ড্রাকো নরভিলি’। আবিষ্কর্তা নরভিলির নাম অনুসারেই এই উড়ন্ত গিরগিটির পরিচয়। ১৮৯৫ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে ডুমডুমার উড়ন্ত গিরগিটির সম্পর্কে লেখা প্রকাশ হয়। তবে তখন ক্যামেরা নয় গিরগিটির ছবি হাতে আঁকা হয়েছিল। এরপর চিন ও মালয়েশিয়ায় ড্রাকো ব্লানফোরডি, ইস্ট তিমোরে ড্রাকো তিমোরেনসিস, এ ছাড়া অন্যত্র ড্রাকো ম্যাকালাটাস, ড্রাকো ভোলান্স-এর দেখা মিললেও বিশ্বের কোথাও ‘ড্রাকো নরভিলি’র দেখা মেলেনি। ‘আইইউসিএন’ বা ‘রেপটাইল ডেটাবেস’-এ ‘ড্রাকো নরভিলি’-র নামের পাশে তাই কোনও ছবি বা পরিচিতি ছিল না। |
উড়ন্ত গিরগিটি। ছবি: মাজেদুল ইসলাম। |
২০০৯-১০ সালে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের গবেষক মাজেদুল ইসলাম এবং বাস্তুতন্ত্র ও জীববিদ্যা পরীক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক প্রশান্তকুমার শইকিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের একটি প্রকল্পের অধীনে ডিব্রুগড়ের জ’পুর সংরক্ষিত অরণ্যে ‘লিজার্ড’ গোত্রের সরীসৃপদের নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পাহাড়, জঙ্গল, নদীর পাড়ে সমীক্ষা চালিয়ে তাঁরা ১৮টি বিভিন্ন প্রজাতির মোট ৩০১টি এমন সরীসৃপের সন্ধান পান। এরমধ্যে ড্রাকো, গেকো, সিনসিড, অ্যাগামিড, ভারানিড সবই ছিল। রাজ্যের কোনও সংরক্ষিত অরণ্যে একসঙ্গে এত প্রজাতির ‘লিজার্ড’ এখনও অবধি মেলেনি বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
মাজেদুল বলেন, “আমাদের সমীক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই ‘ড্রাকো নরভিলি’-র দেখা মেলা। তাও একটি নয়, দু’টি। প্রথম দেখা দেয় একটি স্ত্রী ‘ড্র্যাকো নরভিলি’, পরের বার একটি শাবক। গাছের ডালের সঙ্গে একেবারে মিশে ছিল ওরা। স্ত্রী ‘ড্রাকো নরভিলির’ সবুজ-মেটে এবড়ো-খেবড়ো শরীর। সামনের ও পিছনের পায়ের মধ্যবর্তী স্থানে লাল-নীল-সবজে জমির উপরে হলদে রেখার ডানা রয়েছে। পায়ে কাঁটা। লম্বা আঙুল।” এরপর বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও গবেষকদের দেখিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হন এটিই বিস্মৃতপ্রায় ‘ড্রাকো নরভিলি’। এরপর ছবি-সহ তাঁদের রিপোর্ট দু’টি আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মাজেদুল জানান, ‘ড্র্যাকো নরভিলি’ ছাড়াও ‘ট্যাকিড্রোমাস খাসিয়েনসিস বোউলেঙ্গেল’ প্রজাতির লিজার্ড এখানে দেখা গিয়েছে। এতদিন জানা ছিল, কেবল বরাইলের অরণ্যেই এই প্রজাতির দেখা মেলে। একই ভাবে, কেবলমাত্র কাজিরাঙায় পাওয়া যাওয়া গোসাপ জাতীয় ‘ভারানুস স্যালভেটর’ও জ’পুরের জঙ্গলে দেখা গিয়েছে। দুই গবেষকের আশা, হাতেনাতে প্রমাণ, ছবি ও তথ্য মেলার পরে উড়ন্ত গিরগিটি বিষয়ে আরও গবেষণা চালানো সহজতর হবে। |