সম্পাদক সমীপেষু...
আমরা ওষুধ বেচি, ব্যস্
গ্লিভেক নিয়ে সংবাদ ও দেবাঞ্জন সেনগুপ্তর নিবন্ধ (২ ও ৪ এপ্রিল) পড়ে কিছু চিন্তার উন্মেষেই এই চিঠি। আলোচনার শুরুতে আমাদের দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি সম্বন্ধে একটু খোঁজখবর করা যেতেই পারে। এই সংস্থাগুলির আর্থিক সাফল্যে ভারতবাসী হিসেবে গর্ববোধ করার যথেষ্ট কারণ আছে। উৎপাদন ও মূল্যের মাপকাঠিতে ভারতীয় ওষুধ শিল্পের স্থান পৃথিবীতে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্দশ। ২০০৮-০৯ সালে উৎপাদনের মূল্য ছিল ২১.০৪ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার। আমাদের রফতানি ২০০৬-০৭ সালে ছিল ৬.২৩ বিলিয়ন ডলার, ২০০৮-০৯ সালে ৮.৭ বিলিয়ন। বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট বলছে, ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের বিক্রীত পণ্যের মূল্য দাঁড়াবে ৫০ বিলিয়ন ডলার এবং আমরা পৃথিবীর প্রথম দশটি দেশের মধ্যে স্থান করে নেব।
এই সাফল্যের কারণ কী? এত বড় ওষুধ-শিল্পে আমাদের দেশের মাত্র গুটিছয়েক সংস্থা কিছুটা নিজেদের গবেষণার কাজকর্ম চালায়। গোটা কয়েক শিল্প (তার মধ্যে এই ছ’টিও আছে) নির্ভরশীল জেনেরিক ওষুধের ওপর। জেনেরিক ওষুধ ব্যাপারটা কী? নিজেদের মৌলিক গবেষণা চালিয়ে কোনও ওষুধ (মলিকিউল) আবিষ্কার করলে তার মেধাস্বত্বের একচ্ছত্র অধিকার নির্দিষ্ট কিছু বছর (আমাদের দেশের নিয়মে ২০ বছর) পর্যন্ত সেই আবিষ্কারক সংস্থা উপভোগ করে। এই মেয়াদের মধ্যে অন্য কোনও সংস্থা এই আবিষ্কারের ফল ব্যবহার করতে চাইলে ওই আবিষ্কারক সংস্থাকে মোটা টাকা রয়ালটি দিতে হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষে এই আবিষ্কার হয়ে যায় মেধাস্বত্ব-মুক্ত অর্থাৎ মালিকানাবিহীন। মানে তখন যে কেউ ওই আবিষ্কারের ফল বিনা অর্থব্যয়ে ব্যবহার করতে পারে। এই মেয়াদ-পরবর্তী ওষুধগুলিই জেনেরিক।
২০১০ সালে আমাদের দেশের ছ’টি সংস্থা আটটি ওষুধ (মলিকিউল) আবিষ্কারের পথে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং সফলতার আশা দেখায়। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসের খবর মাত্র একটি সংস্থা, একটি ওষুধের ক্ষেত্রে পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছে।
অর্থাৎ আমাদের শিল্পের আর্থিক সাফল্যে আমাদের নিজেদের গবেষণার দান নেই বললে চলে। আর সে জন্যই আমরা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকি। গোটা পৃথিবী তোলপাড় করে খুঁজি, কবে কোন ওষুধের জেনেরিকত্ব প্রাপ্তি ঘটছে।
এ কথা সত্য, ওষুধ গবেষণা ও তার পরীক্ষানিরীক্ষা বিশাল ব্যয়সাপেক্ষ। তাই এই সহজ পথ ধরা। কিন্তু আমরা যে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি, নিজেদের গবেষণার ওপর অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে না পারলে সে তো দিবাস্বপ্ন! এবং স্বাধীনতার ৬৬ বছর পর ব্যয়সাধ্যতার যুক্তি আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়, অন্তত ওষুধ শিল্পের ক্ষেত্রে, যার আর্থিক অবস্থা এত উজ্জ্বল।
আরও এক সহজ পথ আমরা ধরেছি। বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাদের আমন্ত্রণ করে আনছি এখানে তাদের গবেষণার কাজ চালাবার জন্য। এদের এ দেশে গবেষণায় (যাদের মূল গবেষণার কাজটা হচ্ছে নিজেদের দেশের গবেষণাগারে) আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তি কি আদৌ দৃঢ়তা লাভ করে?
দেবাঞ্জন সেনগুপ্ত উপকার করেছেন গ্লিভেকের গবেষণার দীর্ঘ কষ্টসাধ্য পথটিকে বর্ণনা করে। কারণ, এটাই পথ। এর বিকল্প কোনও সোজা পথ নেই। সে কথাটাই ২০১১ সালের মে মাসে বলেছেন এক ভারতীয়। যিনি এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এবং শিল্পের হাঁড়ির খবর রাখেন। তিনি পথটিকে ‘এসকেপ রুট’ বলেছেন এবং এটিকে পরিহার করে কঠিন পথটি ধরার পরামর্শই দিয়েছেন।
সবার সুযোগ সমান নয়, তাই সংরক্ষণ চাই
সংরক্ষণ নিয়ে একটি নিবন্ধে (২৬-৩) আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার নানা দিক অত্যন্ত সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন কুমার রাণা। সংরক্ষণ বিরোধিতার পিছনে যে জাতীয় স্বার্থ নেই, আছে ব্যক্তি স্বার্থ, জাতি বিনির্মাণে অনীহা এবং প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতি অশ্রদ্ধা তা ‘মেধাবীদের’ না-বোঝার কথা নয়। সব বর্ণ, শ্রেণির প্রতিনিধিত্বের বিপরীতে থাকে একাধিপত্য। মেধার শাক দিয়ে সে মাছ ঢাকার চেষ্টা চলছে অনবরত। তাই কোটায় থাবা বসায় ‘অন্যরা’। সবার জন্য শিক্ষা চাকরির সুযোগ থাকলে সে প্রশ্ন উঠতই না।
স্বাধীনতার প্রথম তিরিশ বছরে শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে সংরক্ষণ তেমন ভাবে প্রযুক্ত হয়নি। কোন স্বর্ণসুফল সে সময়ে আমরা পেয়েছি, তুলনামূলক সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। সংরক্ষণের অন্য ক্ষেত্র হল নির্বাচনে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে আসন, মহিলাদের জন্যও এখন যা প্রসারিত করার চেষ্টা চলছে।
মজার কথা হল, শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে যাঁরা সংরক্ষণ বিরোধী, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা কিন্তু ভিন্ন। সে বেলা অর্থনৈতিক মানদণ্ডের দাবিও তাঁরা তোলেন না। সংরক্ষণ নিয়ে রয়েছে এই দ্বিচারিতা। অবশ্য শিক্ষা ও চাকরির মতো রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সামাজিক আধিপত্যবাদ সমান সক্রিয়। তাই বর্তমান পার্লামেন্টে বা রাজ্যের পূর্ণমন্ত্রিত্বে বাংলার বৃহত্তম তফসিলি জনগোষ্ঠী নমঃশূদ্রদের (‘নম-রা সব খেয়ে নিল’?) কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। এ দেশের গণতন্ত্রের ছবিটা এ রকমই জটিল ও বিচিত্র।


বিলুপ্ত বাংলা
সম্প্রতি দিঘার নেহরু মার্কেটের একটি দোকান থেকে কাজু বাদাম কিনেছিলাম। প্যাকেটের গায়ের মূল দিকে হিন্দি, ইংরেজি ও ওড়িয়া ভাষায় বড় বড় করে কাজু কথাটি লেখা। বাংলা ভাষার চিহ্নমাত্র নজরে এল না। ভয় হল, হয়তো এক দিন দিঘা স্টেশনের ফলকে কেবল হিন্দি, ইংরেজি ও ওড়িয়াতে ‘দিঘা’ দেখব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.