সম্পাদকীয় ১...
মানুষ হউক
পাঁচ বৎসরের শিশুকে যাহারা ধর্ষণ করিতে পারে, তাহারা সব সংজ্ঞার অতীত। তাহাদের ‘পশু’ বলিয়া পশুদের অপমান করিবার অর্থ হয় না। কিন্তু, এমন ভয়াবহ অপরাধের শিকার হইয়া মানুষ যে পুলিশের দ্বারস্থ হয়, সেই পুলিশকে দেখিয়াও আতঙ্ক হয়। তাহারাও কি মনুষ্যপদবাচ্য? পর পর দুই দিন দুইটি শিশু-ধর্ষণের ঘটনা ঘটিল। প্রথম দিন আলিগড়ে, দ্বিতীয় দিন দিল্লিতে। আলিগড়ে ধর্ষিত ও হত শিশুটির বাড়ির লোক থানায় নালিশ করিতে গেলে পুলিশ প্রথমে অভিযোগ লইতে অস্বীকার করে, তাহার পর শিশুটির মায়ের উপর চড়াও হয়, তাঁহাকে নিগ্রহ করে। দিল্লিতে ধর্ষিত শিশুটির এক ক্ষুব্ধ আত্মীয়াকে পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক চপেটাঘাত করেন। তাহার পূর্বে অবশ্য দুই হাজার টাকা লইয়া আপসে মীমাংসা করিয়া লইবার প্রস্তাবও দিয়াছিল পুলিশ। উর্দি পরিহিত এই অসভ্য, ইতর প্রাণীগুলির উপর নাগরিক নিরাপত্তাবিধানের ভার ন্যস্ত করিয়াই ভারতীয় গণতন্ত্র চলিতেছে এই চিন্তাটি রাতের ঘুম উড়াইয়া দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে তাহাদের ন্যূনতম ধারণা নাই, কিন্তু রাষ্ট্রপ্রদত্ত ক্ষমতার আঠারো আনা উশুল করিয়া লইবার পদ্ধতিগুলি তাহারা বিলক্ষণ রপ্ত করিয়াছে। অভিযোগ আসিলে সত্বর তদন্ত আরম্ভ করিতে হইবে, এই সাধারণ কথাটি পুলিশ বিস্মৃত হইয়াছে। রাজনৈতিক প্রভুদের অঙ্গুলিনির্দেশ ভিন্ন কাজ না করিবার অভ্যাসটি তাহাদের মজ্জাগত। অনুমান, তাহাদের গায়ের চামড়াও চাকুরিজীবনের দৈর্ঘ্যের অনুপাতে মোটা হইয়া যায়দেশ জুড়িয়া যে তীব্র ধিক্কার উচ্চারিত হইতেছে, তাহাতে তাহাদের কিছু যায় আসে না।
কেন পুলিশ এমন অসংবেদনশীল? কারণ, পুলিশবাহিনীর বড় অংশই অশিক্ষিত, পিতৃতন্ত্রের জঠরে লালিতপালিত। আশঙ্কা হয়, যাহারা ধর্ষণ করে, তাহাদের সহিত পুলিশবাহিনীর এই কর্মীদের মানসিক গঠনের ফারাক দুস্তর নহে। পিতৃতন্ত্রে পুরুষের ক্ষমতার ধারণাটি তাহাদের কার্যত জন্মগত। তাহার সঙ্গে যোগ হয় রাষ্ট্রের দেওয়া ক্ষমতা, কার্যক্ষেত্রে যাহা অপরিসীম, অনিয়ন্ত্রিত এবং প্রশ্নাতীত। সবের সম্মিলিত ফল আলিগড়ের থানার ওসি, অথবা দিল্লির অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। হাতে ক্ষমতা থাকিলে নিজেকে ‘ঈশ্বর’ জ্ঞান করা অশিক্ষিতের একটি ব্যাধিবিশেষ। ক্ষমতার উচ্চাবচ সম্পর্কের বিপজ্জনক প্রান্তটিতে যাঁহারা আছেন, তাঁহাদের প্রতি এই গোত্রের ক্ষমতাবানরা অবজ্ঞাই বরাদ্দ করিয়া থাকে। ক্ষমতাহীনদের হাঁকাইয়া দেওয়া যায়, প্রয়োজনে দুই-চার ঘা লাগাইয়া দিতেও সমস্যা নাই। আর, পুরুষতন্ত্রের মাপকাঠিতে ধর্ষণ তেমন কোনও অপরাধ নহে ধর্ষিতা অবশ্য অপরাধী। ফলে, ধর্ষণের বিচার চাহিতে গেলে পুলিশ চটিয়া যায় বইকী। ভারতের দুর্ভাগ্য, এই দেশের পুলিশবাহিনী এই গোত্রের বীরপুঙ্গবেই বোঝাই। থানায় থানায় তাহারাই সর্বময়।
দিল্লির অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের আচরণে প্রধানমন্ত্রীও নাকি বিচলিত। তিনি বিবৃতি দিয়াছেন, এই পুলিশকর্মীকে কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হউক। পুলিশের কেমন শাস্তি হয়, সাধারণ মানুষ বিলক্ষণ জানেন এক থানা হইতে অন্য থানায় বদলি, বড় জোর কয়েক মাসের জন্য বরখাস্ত করা। এই শাস্তিতে কাহারও শিক্ষা হয় না। ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ কথাটি ভারতের নেতারা শুনিয়াছেন কি? এমন শাস্তি প্রয়োজন, যাহা দৃষ্টান্ত হইয়া থাকিবে। তাহার জন্য প্রয়োজনে আইন বদলাইতে হইবে। পুলিশের উপর আইনরক্ষার ভার ন্যস্ত, তাহার ক্ষমতাও অসমঞ্জস রকম বেশি। ফলে, কোনও একটি অপরাধ করিলে সাধারণ মানুষের যে শাস্তি প্রাপ্য, পুলিশের প্রাপ্য তাহার ঢের বেশি। তাহাদের গুরু পাপ গুরুতর শাস্তি বিধেয়। বিচারপতি বর্মার সুপারিশটি এই সুরেই বাঁধা ছিল। প্রধানমন্ত্রী আজও সেই সুপারিশে কর্ণপাত করিতে পারেন নাই। শুধুমাত্র বিবৃতি দিলেই তাঁহার দায়িত্ব ফুরায় না। আলিগড়, দিল্লির অপরাধী পুলিশকর্মীদের এমন শাস্তি দেওয়া হউক যাহাতে আর পাঁচ জন পুলিশকর্মীর মনে ভয় অনপনেয় হয়। তবে, শুধু শাস্তিই নহে, পুলিশের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সংস্কার কর্মসূচি অতি জরুরি। আজ অবধি সরকারের তরফে সেই চেষ্টার নামমাত্র দেখা যায় নাই। পুলিশকে ‘মানুষ’ করিবার দায়িত্বটি এড়াইয়া গেলে ভবিষ্যৎ আরও ভয়ঙ্কর হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.