|
|
|
|
তারাবাজি |
 |
কালিস থাকে যে কোনও সমস্যায়
হারের মধ্যেও মিলেমিশে থাকার চেষ্টা।
বুকাননের খ্যাপামি থেকে ঘরের ছেলেদের লড়াই।
কেকেআর অন্দরমহলের খবর দিচ্ছেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায় |
|
দ্বিতীয় আইপিএল। কলকাতা নাইট রাইডার্স ক্যাম্প করেছে ব্লুমফনটেনে। অনেক প্লেয়ার খেলতে পারছে না। কিন্তু টিম স্পিরিটটা অটুট আছে। ওখান থেকে প্রথম ম্যাচ খেলতে আমরা কেপ টাউনে এলাম।
ম্যাচের ঠিক দু’দিন আগে বোমাটা ফাটালেন জন বুকানন। আইকন প্লেয়ার সৌরভকেই সরিয়ে দিলেন অধিনায়কত্ব থেকে। তখনও কিন্তু সৌরভ ভারতের সফলতম অধিনায়ক। সঙ্গে আমদানি করলেন ‘মাল্টিপল ক্যাপ্টেন্সি’র তত্ত্ব। এমনিতেই ব্যাপারটা কনফিউজিং। সব থেকে বড় কথা, সৌরভকেই যদি রাতারাতি সরে যেতে হয়, অন্য প্লেয়ারদের ভরসা কোথায়? একটা ইনসিকিউরিটি তো ছড়িয়ে যেতে বাধ্য। সেটাই হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স টিমে। অনেক প্লেয়ার নেই। তার উপর সৌরভের অপসারণের এমন রুড শক। দিন পনেরো আগে সরালে হয়তো আঘাতটা অতটা লাগত না। কিন্তু এই ঘটনার পর আত্মবিশ্বাসের গোড়াটাই নড়ে গিয়েছিল সবার।
বুকানন আগাগোড়াই এমন ‘আউট অব দ্য বক্স’। ক্যাম্পে অনেক বোলার আনতেন যারা দু’হাতে বল করতে পারে। ম্যাচেও অদ্ভুত সব সাইন ব্যবহার করতে বলতেন। ক্যাপ্টেন ম্যাকালাম সাইন করবে কভারে থাকা ভাইস-ক্যাপ্টেনকে। ভাইস ক্যাপ্টেন বল কী হবে, ক্যাপ্টেনের দেওয়া সেই সাইন পাস করবে বোলারকে। বোলার সেই বল করতে স্বচ্ছন্দ হলে সাইন করে জানাবে। আর কমফর্টেবল না হলে সেটাও জানাবে। এই পুরো প্রসেসটা চলবে দু’টো বল করার মাঝের ওইটুকু সময়ে। এই রকম ‘আউট অব দ্য বক্স’ ভাবনা আর ইনসিকিওরিটি— ফল? ১৩টা ম্যাচের মধ্যে ১০টায় হার। |
 |
আইপিএল-য়ে হাজারো পরিবর্তন এল। কিন্তু একটা ব্যাপারের কোনও পরিবর্তন হতে দেখলাম না। ‘এক্সপেক্টেড’ শব্দটাই কোনও দিন ঢুকল না আইপিএল-য়ের ডিকশনারিতে।
কলকাতা নাইট রাইডার্স-য়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
হারলে তো খারাপ লাগবেই। জেতা ম্যাচ হেরে গেলে, খারাপ লাগার রেশটা আরও অনেক সময় ধরে থেকে যায়। কিন্তু টিম হারলেও একটা নেগেটিভ কমেন্টও আসেনি ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে। কোনও দিন কোনও বাজে সমালোচনা শুনিনি ম্যানেজমেন্ট থেকে।
বিশ্বস্ত সূত্রে শোনা, আইপিএল-য়ের এক ফ্র্যানচাইজির মালিক ফাইনালে উঠে হেরে যাওয়ায়, খেলার পর টিমের সঙ্গে দেখা না করে নিজের শহরে ফিরে গিয়েছেন। কেকেআর-য়ে এটা কখনও হয়নি। ম্যাচ হারুক কী জিতুক জে মেহতা এসেছেন, শাহরুখ খান এসেছেন কেকেআর ড্রেসিং রুমে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্লেয়ারদের সঙ্গে কাটিয়েছেন টিম রুমে। হেরে গেলে আরও বেশি করে।
এটাই কেকেআর-য়ের প্লেয়িং অ্যাটিচিউড। এটাই ‘নাইট’দের স্পিরিট। কলকাতা নাইট রাইডার্স-য়ের এমন প্রফেশনাল মানসিকতার পিছনে হয়তো মালিকদের প্লেয়িং ব্যাকগ্রাউন্ডটাই কারণ। শাহরুখ, জে দু’জনেই অ্যাক্টিভলি খেলাধুলো করেন। চান খেলাকে প্রোমোট করতে।
উৎসাহ দেওয়ার ব্যাপারে কেকেআর-য়ের অধিনায়করাও একই রকম। এমনিতেই সৌরভ আর
গম্ভীরের মধ্যে অনেক মিল। মাঠের বাইরে দু’জনেই কাম অ্যান্ড কমপোজড। মাঠের মধ্যে লাউড অ্যান্ড ফায়ারি।
আর এই দুই এক্সট্রিমকে খুব সুন্দর অন-অফও করতে পারে। সৌরভকে হোটেলের রুমে দেখে মনে হয়েছে, এই লোকটাই এক ঘণ্টা আগে অমন ভয়ঙ্কর ছিল! গম্ভীরকে টিম বাসে দেখে বুঝতেও পারবেন না, মাঠের মধ্যে এই লোকটাই বিপক্ষকে ছিঁড়ে ফেলতে পারে!
দু’জনের মধ্যে আরও একটা মিল দেখেছি, সব সময় বহুবচনে কথা বলতে। জিতলে বলে, আমরা জিতেছি। হারলে বলে, আমরা হেরেছি। কেউ খুব খারাপ ব্যাট বা বল করলেও, কখনওই দেখিনি সৌরভ বা গম্ভীর তাকে ব্যক্তিগত ভাবে কিছু বলছে। সব সময় বলে, আমাদের বোলিংটা ভালও হয়নি। উইকেটের স্যুইংটা আমরা ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারলাম না। বা বলে, টেলএন্ডারদের জন্য আমাদের অত রান রাখা উচিত হয়নি। এটাই তো কাপ্তানি।
আর দু’জন ওভারসিজ প্লেয়ারের নাম না করে পারছি না। জাক কালিস আর রিকি পন্টিং। পন্টিং প্রথম আইপিএল-য়ে কয়েকটা ম্যাচে ছিল। কালিস আসা থেকে ওর উপস্থিতি বুঝিয়ে আসছে। দু’জনেই টিমের কাছে স্তম্ভের মতো। গেইলকে আউট করতে হোক, কী দুর্ধর্ষ ক্যাচ ধরা, কালিস অপরিহার্য। শুধু তাই নয়, গোটা টিমকে মানসিক সাপোর্ট দিতেও সব সময় পাবেন কালিসকে। টিমের সবাই জানে যে কোনও সমস্যা হোক, কালিস আছে।
হোম ম্যাচে খেলার একটা বাড়তি চাপ থাকে। সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমার কিন্তু একটু অন্য রকম মনে হয়। ইডেনে কেকেআর-য়ের যা ফর্ম সেটাই বরং বিপক্ষকে বাড়তি চাপ দেবে। আর এই রকম নিবেদিতপ্রাণ কেকেআর সমর্থক! ওই রকম শব্দব্রহ্ম। গ্যালারিতে শাহরুখের কন্সট্যান্ট চিয়ার করে যাওয়া। এর পরেও বিপক্ষের প্যালপিটেশন হবে না! |
 |
হোম ম্যাচের কথাই যখন উঠল তখন হোম বয়দের কথাও বলি। লক্ষ্মীরতন শুক্লা, মনোজ তিওয়ারি, দেবব্রত দাস আর সামি আহমেদ।
লক্ষ্মীকে দেখছি সেই আন্ডার নাইন্টিন থেকে। আমার মনে হয় ও এই মুহূর্তে ভারতের সেরা অলরাউন্ডার। ওর ভাল খেলাটা কেকেআর-য়ের ক্ষেত্রেও খুব দরকারি। মনোজ হার্ডওয়ার্কার। ভীষণ পজিটিভ অ্যাটিচিউডের এক জন প্লেয়ার। এক মাস ইনজিওর্ড থাকার পর মাঠে নামছে। হ্যাঁ, সেই গ্রুভটা হয়তো এখনও আসেনি। তবে ওকে তো আমি চিনি, জানি সামনের এই পরপর হোম ম্যাচকেই ও পাখির চোখ করবে। আমি আশা করি দেবব্রতও ভাল করবে, কেকেআর-য়ের হয়েও, বাংলার হয়েও। সামির ক্ষেত্রেও তাই হবে। ওয়াসিম আক্রম ওকে তৈরি করেছে। হোল্ডিংয়ের যেমন স্টেপিংয়ের শব্দ শোনা যেত না, সামিরও তাই। এতই স্মুথ রান আপ। কয়েকটা ম্যাচ যেতে দিন, ঠিক স্পিডটা ধরে নেবে।
আসলে আইপিএলে-য়ের মতো টুর্নামেন্টে এটা হয়ই। প্রায় দু’মাসের টুর্নামেন্ট। প্রথম দিকে ভাল খেলল না খারাপ তাতে কিচ্ছু এসে যায় না। দরকারের সময় কেমন খেলল সেটাই ম্যাটার করে। গত বছরও তো প্রথম পাঁচ ম্যাচে তিনটে হার দিয়ে শুরু করেছিল কেকেআর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তো ম্যান ইউ-ও কখনও হেরে যায় লিগের নীচের দিকে থাকা টিমের কাছে।
আসল দরকার হল দমে না যাওয়া। আত্মবিশ্বাস না হারানো।
কেকেআর-য়ে সেটাই হয়। এটাই জয়ের মন্ত্র। |
|
|
 |
|
|