সম্পাদকীয়...
রূপের কূপ
র ও নারীর পারস্পরিক আকর্ষণকে যাঁহারা অতি ন্যক্কারজনক কাণ্ড বলিয়া বিশ্বাস করেন, তাঁহারা সাধারণত নারীর স্কন্ধেই এই লীলা-রসায়নের সমগ্র দোষটি চাপাইয়া দিতে ব্যগ্র। রক্ষণশীল বয়ানে: বেচারা পুরুষ অসহায় হইয়া বারংবার সুন্দরী নারীর বিচিত্র ছলনাজালে আপনাকে জড়াইয়া ফেলে এবং স্বধর্মচ্যুত হয়। কিন্তু একই সমীকরণ অনুযায়ী, পুরুষও কিছু কম ঘরভাঙানে পরজ্বালানে নহে। বহু পুরুষের সম্মোহক অঙ্গসৌষ্ঠব ও মুখশ্রী দেখিয়া নারীগণ চঞ্চলা হইয়া উঠে, তাহাদের আত্মচরিত্র রক্ষা দুষ্কর হইয়া দাঁড়ায়। এলভিস প্রেসলির গাড়ির সম্মুখের কাচ লিপস্টিকের দাগে সম্পূর্ণ ঢাকিয়া যাইবার কাহিনি আমরা শুনিয়াছি। এই উন্মাদনার স্বীকৃতি রক্ষণশীলরা দেন না তাহা নহে, তাঁহারা নারীকেই পর্দানশিন করিয়া ইহার সমাধান বাতলাইতে চাহেন। কিন্তু এই বার সেই প্রাচীন পদ্ধতি পরিবর্তিত হইল। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি হইতে একটি দল সৌদি আরবে আসিয়াছিল এক সাংস্কৃতিক উৎসবে যোগ দিবার জন্য। উৎসবের কর্তৃপক্ষ কিঞ্চিৎ অধিক ধর্মবিলাসী ও সুতরাং সামাজিক আড়ষ্টতার পূজারি। ওই দল হইতে তিন জন পুরুষকে তৎক্ষণাৎ দেশে ফেরত পাঠানো হইয়াছে, কারণ তাঁহারা অত্যন্ত রূপবান এবং সেই রূপ দেখিয়া উৎসবে অংশী নারীগণের চিত্তচাঞ্চল্য উপস্থিত হইবার সমূহ সম্ভাবনা। আবার, ওমান-এ মার্কিন পপ-গায়ক জাস্টিন বিবার-এর জলসা নিষিদ্ধ করা হইল, কারণ তিনি অত্যন্ত যৌন আবেদনময় এবং তাঁহার মঞ্চানুষ্ঠান দেখিয়া সেই দেশের নারীগণের ‘নৈতিক স্বাস্থ্য’ ভাঙিয়া পড়িতে পারে। এই জলসার দিনক্ষণ সকলই স্থির হইয়া গিয়াছিল, তাহার পর উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতৃত্বে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফোরাম ও ব্লগে বিবার-বিরোধী প্রচার শুরু হয় এবং অনুষ্ঠানটির আয়োজক ‘হাই এফএম’ রেডিয়ো চ্যানেলটিতে বোমা বিস্ফোরণের হুমকি দেওয়া হইতে থাকে।
দুইটি ভুল মিলিয়া একটি ঠিক-এর জন্ম দেওয়া প্রায় অসম্ভব, কিন্তু ক্রমাগত একটি ভুল করিয়া চলার অপেক্ষা বৈষম্য-মোচক দ্বিতীয় ভুল করা ভাল। ভাল না হইলেও, অধিক মজার। রামকে যে খাইতে দেয় না, সে শ্যামকেও খাইতে না দিলে কোথাও তো একটা সাম্যের ব্যবস্থাপনা হইল! অপনা মাংসে কেবল হরিণা বৈরী হইবে আর পুং-হরিণ মহানন্দে শিং নাচাইয়া ঘুরিয়া বেড়াইবে, ইহার চেয়ে সে-ও নিজ মাংসবশে বিপন্ন হইলে, অন্তত সমগ্র হরিণজাতির দিক হইতে সমস্যাটি অবলোকনের সম্ভাবনা জাগিয়া উঠে। কেবল নারীকে তাহার রূপের জন্য দোষী করিব, আর যে-পুরুষ সেই রূপে উত্তেজিত হইয়া কুকর্ম করিতেছে তাহাকে নিঃশর্ত খালাস দিব, সমাজের এই অভ্যাস পুরুষজাতিকে অন্যায়টি টিকাইয়া রাখিবার প্রতি উৎসাহী করিয়া তুলিতে পারে। কিন্তু পুরুষ-নারী নির্বিশেষে সকল রূপবানের প্রতি অত্যাচার শুরু হইলে, সংখ্যাধিক মানুষের টনক নড়িয়া উঠিবার ক্ষেত্র প্রস্তুত। যদিও লক্ষণীয় প্রকৃত বিপজ্জনক মনোভাবটি হইল: মানুষকে তাহার ইচ্ছা ও কীর্তি নিরপেক্ষ বিষয়ের জন্য দোষী ধার্য করা। ইহা সাচ্চা সাম্প্রদায়িকতা। ধর্ম অধিকাংশ সমাজকে এই কদর্য অভ্যাসে দীক্ষিত করিয়া থাকে। দেহ-সৌন্দর্য কাহার অধিক হইবে, কাহার ন্যূন, তাহা রূপাধিকারীর হাতে নাই। তাই তাহাকে নির্বাসন দেওয়ার অর্থ নিজ বুদ্ধিকে নির্বাসন দেওয়া, এবং সেই রূপ দেখিয়া সংযত থাকিবার দায়কে নির্বাসন দেওয়া। সৌন্দর্য আপেক্ষিক, কিন্তু নিজ স্বভাবের দায়িত্ব অন্যের উপরে ন্যস্ত করিয়া তাহাকে দণ্ড দেওয়ার রীতি পরম ও নিঃশর্ত কুৎসিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.