ইডেনে আইপিএল-এর লড়াই শেষে ঘরমুখী জনতার ভিড়ে রাতের যাত্রীবাহী লঞ্চ তখন ভরে উঠেছে। জেটিতেও বেশ ভিড়। এই পরিস্থিতিতে লঞ্চ ছাড়ার পরে তাতে লাফিয়ে উঠতে গেলেন কিছু যাত্রী। তখনই গঙ্গায় পড়ে যান পাঁচ জন। তাঁদের মধ্যে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এখনও নিখোঁজ ২৫ বছরের এক তরুণী। পুলিশের ডুবুরি-বাহিনী জলে নেমে তল্লাশি চালালেও রাত পর্যন্ত ওই তরুণীকে উদ্ধার করা যায়নি। শনিবার রাত সওয়া আটটা নাগাদ চাঁদপাল ঘাটে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
আইপিএল-এর খেলা দেখতে যাত্রীরা মাঠে আসা থেকে শুরু করে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত সব কিছু যাতে সুষ্ঠু ভাবে ঘটে, তা নিয়ে প্রতি বারই দফায় দফায় বৈঠক করে থাকেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু তাতেও লঞ্চের ভিড়-গাদাগাদিতে দুর্ঘটনা ঠেকানো গেল না। পুলিশ জানায়, মামাবাড়ি বেড়াতে এসে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংস-এর রুদ্ধশ্বাস টক্কর দেখতে মুখিয়ে ছিলেন দুই বোন মৌটুসি সরকার ও মৌসুমি সরকার। তাঁদের বাড়ি আসানসোলে। এক মামা ও পরিবারের একটি শিশুকে নিয়ে বালি থেকে ইডেনে গিয়েছিলেন তাঁরা। খেলা দেখে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতেই চাঁদপাল ঘাট থেকে হাওড়াগামী লঞ্চ ধরতে যায় দলটি। |
পুলিশ সূত্রের খবর, রাত সওয়া আটটার লঞ্চটির পরে সাড়ে আটটা নাগাদ জেটি থেকে শেষ লঞ্চ ছাড়ার কথা ছিল। ফলে ইডেন-ফেরত অনেকেই ঝুঁকি নিতে চাননি। যে ভাবে পারেন, আগের লঞ্চে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয়। আর তাতেই বিপত্তি ঘটে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানিয়েছেন, লঞ্চটিতে তিল-ধারণের জায়গা ছিল না। যাত্রী বোঝাই অবস্থায় ওই লঞ্চ জেটি ছাড়ার সময়েও কয়েক জন শেষ মুহূর্তে লাফিয়ে তাতে ওঠার চেষ্টা করেন। তখনই গঙ্গায় পড়ে যান ওই পাঁচ যাত্রী।
পুলিশ জানায়, দিদি মৌসুমি ও বোন মৌটুসি দু’জনেই গঙ্গায় পড়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরাই সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে বিপন্ন যাত্রীদের উদ্ধার করেন। মৌসুমি উদ্ধার হলেও পাওয়া যায়নি মৌটুসিকে। কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফে ডুবুরি নামিয়ে উদ্ধার-কাজ শুরু হয়ে যায়। মৌসুমি-মৌটুসির এক কাকা কলকাতা পুলিশের ওয়্যারলেস শাখার ইনস্পেক্টর তরুণ সরকার। মৌটুসির বাবা এবং ওই পুলিশ অফিসার দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপাল ঘাটে চলে আসেন। এ দিকে, গঙ্গা থেকে উদ্ধার হওয়া চার জনকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তাঁদের মধ্যে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। মৃতের নাম সুধীন হাজরা (৪০)। বাড়ি মেদিনীপুরে।
এই দুর্ঘটনার জন্য চাঁদপাল ঘাটে পুলিশি নজরদারির হাল নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ইডেনে খেলা থাকা সত্ত্বেও বাড়তি লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কি না? হুগলি জলপথ পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, অন্য দিনের তুলনায় বেশিসংখ্যক লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাঁর আরও বক্তব্য, প্রতিবার খেলার সময়ে যে ক’টি লঞ্চের ব্যবস্থা থাকে, এ দিনও তেমনই ছিল। জেটিতে ভিড়ও না সামলানোর মতো ছিল না। সাড়ে আটটার লঞ্চ প্রায় খালিই গিয়েছে। যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ির জেরেই এমন দুর্ঘটনা ঘটে গেল।
লালবাজারের কর্তাদের বক্তব্য, যা ঘটেছে তা দুভার্গ্যজনক। হঠাত্ করে অনেক যাত্রী জেটিতে নেমে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে লঞ্চে ওঠার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠাতেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। |