গর্ভবতী ও প্রসূতিদের মিষ্টিমুখ পুরুলিয়া জেলায় শিশুমৃত্যু ঠেকাতে এটাই নিদান রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের!
গর্ভাবস্থায় ছ’মাস ও সন্তান প্রসবের পরে ছ’মাস, টানা এক বছর পুষ্টিকর মিষ্টি ও হালুয়াতেই শিশুমৃত্যু ঠেকানো যাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। মঙ্গলবার জেলার জঙ্গলমহলের বলরামপুর ব্লকের বাঁশগড় গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘সম্পূরক পুষ্টি প্রকল্প’ নামে ওই পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন করেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প বিষয়ক মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে বর্তমানে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩১। পুরুলিয়ার ক্ষেত্রে তা ৩৩। রাজ্যের হিসেবের সঙ্গে পুরুলিয়ার খুব বেশি ফারাক না থাকলেও শান্তিরামবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেন, সদ্যোজাতের মৃত্যুহার ঠেকাতে মায়েদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। সেই দর্শন মেনেই এই প্রকল্প বলরামপুর শুরু হল। পরবর্তীকালে জেলার আরও কয়েকটি ব্লকে তা চালু করা হবে। এখানে এই প্রকল্পে কেমন ফল মেলে, তা দেখার পরে অন্য জেলায় কার্যকর করার কথা ভাবা হবে।” স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা অবশ্য আশাবাদী এই কারণে যে, এই পুষ্টিকর লাড্ডু ও হালুয়া গর্ভবতী ও প্রসূতিদের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি ও প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে সক্ষম। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, অপুষ্টিজনিত কম ওজনের শিশুর জন্মরোধ এবং শিশুমৃত্যুর হার ঠেকানো।
জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের জেলা স্তরের পদস্থ আধিকারিক আজিজুর রহমান বলেন, “গর্ভসঞ্চারের তিন মাস পর থেকে টানা ছ’মাস এবং সন্তান প্রসবের পরে টানা ছ’মাস, এই এক বছর লাড্ডু ও হালুয়া দেওয়া হবে। প্রোটিন, ক্যালোরি, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, মাল্টিভিটামিন-সহ এক জন গর্ভবতী বা প্রসূতির শরীরে যতটুকু অণুপুষ্টির প্রয়োজন, তা রয়েছে এই মিষ্টিতে। আপাতত এক জন মহিলা মাসে ১৪ দিন করে এই খাবার পাবেন। কোনও প্রসূতি বা গর্ভবতীকে মাসে সাতটি লাড্ডুর প্যাকেট ও সাতটি হালুয়ার প্যাকেট দেওয়া হবে।” |
স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে, প্রসূতি ও গর্ভবতীর সার্বিক স্বাস্থ্যোন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে। বলরামপুরের পরে এই প্রকল্প জঙ্গলমহলের আরও চারটি ব্লক বাঘমুণ্ডি, বান্দোয়ান, ঝালদা-২ ও আড়শায় চালু করা হবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, দরিদ্র পরিবারের প্রসূতিদের মধ্যে ক’জন বাড়িতে খাবার নিয়ে গিয়ে সেই খাবার নিজেরা খাবেন? গ্রামের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ও পারিবারিক কাঠামোয় অনেক ক্ষেত্রে সেই খাবার যে মহিলারা বাড়ির পুরুষ ও অন্য শিশুকে খাইয়ে দেবেন সে কথা স্বীকার করছেন স্বাস্থ্যকর্তারাই। গর্ভবতীর পেটেই যদি খাবার না যায় তা হলে প্যাকেটে করে বাড়িতে খাবার দিয়ে লাভ কী? সরকারের এমন পরিকাঠামোও নেই যাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গভর্বতীরা সরকারের দেওয়া পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে কিনা তার নিয়মিত তদারকি করা যায়।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস এ ব্যাপারে বলেন, “এতদিন পর্যন্ত কোনও পুষ্টি প্রকল্প ছিল না। এখন শুরু হল। মানলাম অনেক প্রসূতি নিজে না খেয়ে বাড়ির লোকেদের খাইয়ে দেবেন। তবুও কিছু প্রসূতি তো খাবেন। সেটাই আমাদের সাফল্য। চেষ্টা করতে হবে খুব বেশি এলাকায় এই প্রকল্পকে ছড়িয়ে না দিয়ে সত্যিকারে যে এলাকায় গর্ভবতী ও সদ্যজাতের সাধারণ স্বাস্থ্য খারাপ সেখানে একে সীমাবদ্ধ রাখা। এতে এক-একজন গর্ভবতীকে বেশি খাবার দেওয়া যাবে। তাতে বাড়ির লোকেদের খাবার দিয়েও তাঁদের জন্য কিছুটা বাড়বে।”
স্বাস্থ্যকর্তাদের কথায়, যে এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল বা যে পরিবারে আর্থিক দৈন্য বা খাবারের অভাব নেই সেখানে খাবার না দিয়ে প্রকৃত দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতীদের মধ্যেই এই প্রকল্প সীমাবদ্ধ রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ তাঁরা জলপাইগুড়ি চা বাগান এলাকা এবম জঙ্গলমহল এলাকার কথা চিন্তাভাবনা করছেন। সাবসেন্টারগুলির রিপোর্ট দেখে কোথায় কম ওজনের সদ্যজাত বেশি জন্মাচ্ছে তা বিচার করে সেখানে এই প্রকল্প জোরদার করার কথা ভাবছে স্বাস্থ্যদফতর। |