এলাকায় রয়েছে ব্লক কার্যালয়। তারই অদূরে আর একটি পার্টি অফিসের উদ্বোধন করলেন পুরুলিয়ার তৃণমূল বিধায়ক কে পি সিংহদেও। এই ঘটনাকে ঘিরে জেলা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এল।
পুরুলিয়া শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বোঙাবাড়ি এলাকায় রয়েছে পুরুলিয়া ২ ব্লক তৃণমূলের কার্যালয়। ব্লক তৃণমূল সভাপতি কাঞ্চন দিগর বলেন, “২০১০ সালে পুরনো কার্যালয়টির উদ্বোধন করেছিলেন আইএনটিটিইউসি-র তৎকালীন রাজ্য সভাপতি, বর্তমানে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। সে দিন থেকে সেটিই ছিল ব্লক তৃণমূলের সদর কার্যালয়। কিন্তু, সোমবার আমাদের অন্ধকারে রেখে স্থানীয় বিধায়ক এই পার্টি অফিসের কিছুটা দূরে নতুন একটি কার্যালয় উদ্বোধন করলেন।” তাঁর অভিযোগ, তাঁকে তো বটেই, এমনকী সংশ্লিষ্ট রাঘবপুর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি ক্ষুদিরাম রাজোয়াড়কে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। কাঞ্চনবাবু পুরো ঘটনাটি জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকে জানিয়েছেন।
এ দিন বিকেলে তৃণমূলের নতুন ‘বিধানসভা কমিটি কার্যালয়’-এর উদ্বোধন করেন কে পি সিংহদেও। উপস্থিত ছিলেন ব্লক ও অঞ্চলের শ’দুয়েক দলীয় কর্মী-সমর্থক। বিধায়কের বক্তব্য, “আগের অফিসটি ইচ্ছেমতো খোলাবন্ধ হচ্ছিল, এমন অভিযোগ আমার কাছে আসছিল। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই সময় তো নিচুতলার কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের নেতাদের যোগাযোগ থাকাটা দরকার। কিন্তু, সেই যোগাযোগটা ব্লক সভাপতি ও তাঁর কিছু অনুগামী নেতা রাখছিলেন না বলে আমার কাছে খবর ছিল। আমি তো বসে থাকতে পারি না! সে জন্যই এ দিন বিধানসভা কমিটির কার্যালয় চালু করলাম।” তাঁর মন্তব্য, এ দিন থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচন ও দলের ব্লক সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম নতুন অফিস থেকে হবে।
ঘটনা হল, উদ্বোধনের সময় অদূরের ব্লক কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন কাঞ্চনবাবু। তাঁকে কেন ডাকা হল না? বিধায়কের জবাব, “দল বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে যদি কেউ কাজকর্ম করেন, তা বিধায়ক হিসাবে মেনে নিতে পারি না। সে ব্লক সভাপতিই হন বা অন্য কেউ।” তা হলে কি দলের দু’টি গোষ্ঠী দু’টি পৃথক অফিস থেকে কাজ করবে? কে পি সিংহদেহ বলেন, “গোষ্ঠীর কোনও ব্যাপারই নেই। নতুন অফিস থেকেই সব কাজ হবে, তা সকলকে বলে দেওয়া হয়েছে। আমি এই বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান।” তাঁর আরও দাবি, গত ২৩ মাসে তিনি বিধায়ক হিসাবে কী কী কাজ করেছেন, তা দলের স্থানীয় কর্মীদের কাছে তার খতিয়ান দিয়েছেন তিনি।
জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, একটা সময় কাঞ্চনবাবু ছিলেন কে পি সিংহদেও গোষ্ঠীর লোক। বর্তমানে সে সমীকরণ বদলে ব্লক সভাপতি জেলা সভাপতির অনুগামী হিসাবেই পরিচিত। বস্তুত, জেলা সভাপতি শান্তিরামবাবুর সঙ্গে পুরুলিয়ার বিধায়কের দ্বন্দ্বের কথাও দলে অজানা নয়। মাস দুয়েক আগেই পুরুলিয়া শহরে জেলা প্রশাসনের একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে উপযুক্ত সম্মান দেওয়া হয়নি। এই অভিযোগে শান্তিরামবাবুর সামনেই মঞ্চ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন কে পি সিংহদেও। তার পরে ফের এই ঘটনা। তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই বলছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলার দুই শীর্ষ নেতার এই দ্বন্দ্ব নিচু তলায় ভুল বার্তা দেবে।
শান্তিরামবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “ঘটনাটি শুনেছি। ব্লক কমিটির অফিস যেমন আছে থাকবে। ব্লক কমিটি তাদের কাজও করবে। বিষয়টি নিয়ে আমি বিধায়কের সঙ্গে কথা বলব।” |