বিনোদন হাঁড়ি উপুড় করলেও
কিন্তু পড়বে না একফোঁটা দই

বাঙালির পরিচয় তার মিষ্টির রেকাবিতে। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, নানা জেলায় অপূর্ব সব মিষ্টির পসরা। কোচবিহারের মন্ডা, বহরমপুরের ছানাবড়া, কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া, বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, জেলার নামেই মিষ্টির ব্র্যান্ডনেম।
তবে সেরা মিষ্টির খোঁজে যেতে হতে পারে সদর থেকে ভিতরে। যেমন জলপাইগুড়ির বেলাকোবার চমচম। দুধ, চিনি, ময়দা আর খোয়া ক্ষীরের ঠিক মিশেল হলে তবেই আসবে তার লালচে রঙ, জানালেন বাদল দত্ত। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বেলাকোবা স্টেশন রোডে তিনি বিক্রি করছেন এই মিষ্টি। একই রকম জনপ্রিয় মালদহের রসকদম্ব বা ক্ষীরকদম্ব। জনশ্রুতি, সুলতান হুসেন শাহের আমলে চৈতন্যদেব গৌড়ে এসে কেলিকদম্ব গাছের নিচে রূপ সনাতনকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। সেই কদম্ব গাছ থেকেই নাকি রসকদম্বের সৃষ্টি। ইতিহাস না লোককথা?
ইতিহাস রয়েছে রায়গঞ্জের অমৃতিরও। দেশভাগের পর বাংলাদেশ থেকে ময়রারা এখানে এসে প্রথম অমৃতি তৈরি করেন। দেবীনগরে অমৃতি বাজারই গড়ে উঠেছে। উপাদান মাসকলাইয়ের ডাল। কারিগর ভোম্বল ঘোষ বলেন, প্রতিটি অমৃতি ছয় পাকে ভেজে মধুর মতো গাঢ় রসে ৩ মিনিট চুবিয়ে রাখতে হয়।
হুগলির প্রাচীন জনপদ জনাই বিখ্যাত মনোহরার জন্য। বানানোর পদ্ধতিও রীতিমত রহস্যময়। মনোহরার উপরে থাকে চিনির আস্তরণ, ভিতরে ঝুরঝুরে সন্দেশ। কড়াইতে চিনি জ্বাল দিয়ে রস এমন ঘন করতে হবে, যাতে কড়াইয়ের গায়ে আস্তরণ পড়ে যায়। সেই রসে সন্দেশ ফেলে চামচে করে তুলে রাখতে হয় কলাপাতায়।
বানিয়ে নিন বাড়িতেই
পুরুলিয়ার নিখুঁতি
উপকরণ: ছানা ৬০০ গ্রাম, বুটের বেসন ৪০০ গ্রাম, গাওয়া ঘি, এলাচ, চিনি।

পদ্ধতি: ছানা ও বেসন ভাল করে মাখতে হবে। তাতে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে নিতে হবে। ওই মিশ্রণ থেকে ল্যাংচার আকারে মিষ্টিগুলো তৈরি করে ঘাওয়া ঘিয়ে লাল করে ভাজতে হবে। তার আগে পাতলা চিনির রস তৈরি করে রাখতে হবে। ভাজার পরে নিখুঁতি ওই রসে চুবিয়ে তুলে নিতে হবে। ছানা ও বেসনের মিশ্রণে টক দইও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সামান্য তিল দিয়ে মুচমুচে করে তৈরি হয় লালগোলার খাজা। মেদিনীপুরের ক্ষীরের চপ, বাঁকুড়ার ছাতনার প্যাড়া পরিচিত। তুলনায় কম জানা মিষ্টি পুরুলিয়ার কস্তার লাড্ডু। খোয়া বা ক্ষীরের সঙ্গে অ্যারারুট বা ময়দা ভাল করে মাখতে হয়। যোগ হয় জায়ফল, জৈত্রি, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, নাগেশ্বরকুসুম ফুল, জাফরান, কেশর গুঁড়োর মিশ্রণ। নিট ফল অনবদ্য এই লাড্ডু।
আর দই? প্রথমেই আসবে দক্ষিণ দিনাজপুরের দইয়ের নাম। বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুরে গরুর দুধে তৈরি খাসা দই, সাদা মিষ্টি দই, ক্ষীর দই এবং টক দইয়ের সুখ্যাতি সর্বত্র। এক হাঁড়ি দই কিনে রেখে সাত থেকে আট দিন পরেও খাওয়া যায়, জানালেন বালুরঘাট খাদিমপুরে মিষ্টান্ন কারিগর পানু ঘোষ। নবদ্বীপও কম যায় না। প্রায় দু’কেজি ওজনের মিষ্টি হাঁড়ির দই কতটা জমাট তা বোঝাতে দোকানদার ক্রেতার সামনে হাঁড়ি উপুড় করে দিলেন। দই যেমনকার তেমন রইল। একটুও পড়ল না। দোকানদার বললেন, ‘বুঝলেন এর নাম নবদ্বীপের লালদই। যে দই বসার পর চাকু দিয়ে না কাটলে হাঁড়ি থেকে পড়বে না।’ এ জন্য এর আর এক নাম চাক্কু দই। এই লাল দইয়ের জন্য চাই মোষের খাটি দুধ।
এমন বৈচিত্রের জন্যই কেক-পেস্ট্রির রমরমা বাজারেও সন্দেশ-দইয়ের স্থান অটুট। মিষ্টিমুখেই পূর্ণ হয় ষোলআনা বাঙালিয়ানা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.