বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেঘের বরফকণায় রোদ
ভেঙে ভেঙে রঙের খেলা

চৈত্রশেষের সূর্য আগুন ছড়াচ্ছে। তবু সেই গনগনে রোদের মধ্যেই কলকাতা আকাশমুখী। শুধু মহানগর নয়, ঊর্ধ্বমুখী দক্ষিণবঙ্গের অন্য কয়েকটি জেলাও।
কেন?
মেঘের আশায় নয়। ইউএফও বা অজানা কোনও উড়ন্ত বস্তুর আবির্ভাব ঘটেনি। ছিল না সূর্যগ্রহণও। তবে সূর্যের চার পাশে ছিল এক আশ্চর্য রঙিন বলয়। সেই জ্যোতির্বলয় দেখতেই রবিবার ভিড় জমল রাস্তায়, ছাদে, মাঠেঘাটে। রাহুর পূর্ণগ্রাসে সূর্যের চার দিকে যে-দুর্লভ ডায়মন্ড রিং বা হীরক-অঙ্গুরীয় দেখা যায়, তার থেকে কিছু কম ছিল না এই মহাজাগতিক দৃশ্যের আকর্ষণ। যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন, সূর্যের চার পাশে এই রঙিন বলয় কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। প্রকৃতির খেয়ালে মাঝেমধ্যে এর দেখা মিলতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন বলছেন, এই বলয়ের নাম ‘সৌর বলয়’। বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে মেঘ কেটে যাওয়ার পরে এমন ঘটনা ঘটে।
সূর্যকে ঘিরে বলয়। রবিবার দুপুরে। মেদিনীপুরে। ছবি: কিংশুক আইচ।
কী ভাবে?
সঞ্জীববাবু বলছেন, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫-১০ কিলোমিটার উপরে থাকা মেঘ কেটে গেলে আকাশে ষড়ভুজাকৃতি বরফকণা ভেসে বেড়ায়। সেই সব কণা আকাশে নির্দিষ্ট ভাবে সজ্জিত থাকলে তার ভিতর দিয়ে সূর্যের আলোর প্রতিসরণ ঘটে। প্রতিসৃত সেই সূর্যকিরণ সাতটি রঙে ভেঙে যায়। তার ফলে এমন দৃশ্য দেখা যায়। যে-ভাবে জলকণার ভিতর দিয়ে প্রতিসৃত সূর্যের আলো রামধনু তৈরি করে। এবং শুধু দিনে নয়, রাতে চাঁদের চার পাশেও এই ধরনের রঙের খেলা দেখতে পাওয়া সম্ভব।
সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ একসঙ্গে সব জায়গা থেকে দেখা যায় না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, একসঙ্গে সব জায়গা থেকে দেখা যায় না এই বলয়ও। এ দিন কলকাতা, মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে সূর্যের এই বলয় দেখা গিয়েছে। বেলা ১১টা নাগাদ শুরু হয়ে এই মহাজাগতিক রঙের খেলা চলে ঘণ্টাখানেক। দুপুরে এমন ঘটনা দেখে বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ খালি চোখেই দেখেছেন। কেউ বা মোবাইলে এবং ক্যামেরায় ছবি ধরে রেখেছেন সৌর বলয়ের।
কিছু কিছু এলাকার প্রতি মহাজগতের এই পক্ষপাত কেন?
আবহবিজ্ঞানীরা জানান, আসলে এই খেলার মঞ্চ তৈরিতে এক ধরনের মেঘেরও ভূমিকা আছে। সিরাস মেঘ। ওই সব এলাকার আকাশে শনিবার রাত থেকেইসিরাস মেঘ ছিল। রবিবার সকাল থেকে সেই মেঘের সৌজন্যেই এই দৃশ্যের জন্ম হয়।
কিন্তু কী এই সিরাস মেঘ?
আবহবিদেরা জানান, বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে হাল্কা, বরফকণা ভর্তি পেঁজা পেঁজা মেঘকে আবহবিজ্ঞানের ভাষায় সিরাস মেঘ বলা হয়। আর এই মেঘ তৈরির পিছনে কাজ করে আবহাওয়ার কিছুটা খামখেয়ালিপনাই।
কী ভাবে তৈরি হয় সিরাস মেঘ?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে স্থিতিশীলতার অভাব থাকলে এবং জলীয় বাষ্প বেশি থাকলে সিরাস মেঘ তৈরি হয়। তাতে বরফকণা থাকে। এই মেঘে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে না বলে জানাচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা।

মহাকাশ চেনাতে শিবির
আকাশে চোখ। রবিবার রায়গঞ্জের মোহনবাটি হাইস্কুলে তোলা নিজস্ব চিত্র।
রায়গঞ্জের মোহনবাটি হাইস্কুলের দশম শ্রেণির বটেশ্বর দাস এত দিন বইয়েই ধ্রুবতারা, শনি দেখেছে। টেলিস্কোপের সাহায্যে সেগুলি চোখে দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠল বটেশ্বর। সারদা বিদ্যামন্দিরের অষ্টম শ্রেণির বিনিতা দে টেলিস্কোপে সূর্যের কলঙ্ক ও চাঁদের উল্কাগহ্বর দেখে আপ্লুত। বটেশ্বর ও বিনিতার মতো রায়গঞ্জের নানা স্কুলের ষষ্ঠ-দ্বাদশ শ্রেণির ১৫০ পড়ুয়াকে নিয়ে রবিবার মোহনবাটি হাইস্কুলে শুরু হল মহাকাশ প্রশিক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ শিবির। রায়গঞ্জের পরিবেশপ্রেমী সংগঠন স্টাডি অব নেচার অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমি ফর পিপল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত এই তিন দিনের শিবিরে জ্যোর্তিবিদ শুভাশিস চিরকল্যাণপাত্র হাজির হয়ে পড়ুয়াদের মহাকাশ, গ্রহ ও নক্ষত্র সম্পর্কে সচেতন করেন। প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯ টা অবধি শিবির চলবে। সোসাইটির পক্ষ থেকে বিশ্বজিৎ রায়, অভিজিৎ সরকার জানান, শুধু বই পড়ে মহাকাশ, গ্রহ ও নক্ষত্র সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা যায় না। শিবিরটি দুই ভাগে পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথমার্ধে প্রশিক্ষণ ও দ্বিতীয়ার্ধে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পর্যবেক্ষণ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.