দু’ডজন কলার ঠেলায় চোরের পেট থেকে বেরোল হার
লাঠি নয়, গুলি নয়, মারধর নয়। পুলিশের কলার গুঁতোর যে এত জোর, আগে জানত না সুজাহার।
ট্রেনে-বাসে মহিলাদের গয়না চুরি বা হাত-সাফাইয়ে সিদ্ধহস্ত বাদুড়িয়ার বাগজোলার বছর তেত্রিশের সুজাহার মণ্ডল। কিন্তু পুলিশ তাকে কখনও ধরতে পারেনি। ‘মহাবিদ্যা’র সে মহাগুরু। গয়না পেলেই চালান করে দিত নিজের পেটে। পুলিশের সাধ্য কী তা ধরার! কিন্তু শুক্রবার রাতে ২৪টি সিঙ্গাপুরী কলা আর কিছু ওষুধ খাইয়ে পুলিশ যে তার পেট থেকে চুরি করা সোনার হার বের করে নেবে, তা সুজাহারের কল্পনারও অতীত।
শনিবার সকালে শ্রীঘরে যাওয়ার সময়ে ক্লান্ত সুজাহার বলেই ফেলে, “এত কলা খাওয়ালে কী আর পারা যায়!”
অথচ, শুক্রবার দুপুরে ভিড়ে ঠাসা বনগাঁ লোকাল দেখে তাঁর মনটা নেচে ওঠে। এই পরিবেশেই তার ‘কাজ’ করতে সুবিধা। শেষ চৈত্রের গরমে যাত্রীরা কাহিল। ট্রেন বিভূতিভূষণ হল্ট স্টেশনে ঢোকার সময়েই সুজাহার সোমা ঘোষ নামে এক মহিলার সোনার হার ছিনতাই করে নেমে পড়ে। অবশ্য সে অন্য কোথাও না গিয়ে উঠে পড়ে ওই ট্রেনেরই অন্য কামরায়। সোমাদেবীরা তা দেখতে পেয়েছিলেন। পরে বনগাঁ স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই সুজাহার নেমে পালানোর চেষ্টা করলে লোক জন তাকে ধরে ফেলেন। আসে রেল পুলিশ।
কিন্তু সুজাহারের কাছে হার কোথায়? তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রেল পুলিশ তার কাছ থেকে হার বের করতে পারেনি। সোমাদেবীরাও দমে যাওয়ার নন। তাঁরা যে নিজের চোখে সুজাহারকে হার ছিনিয়ে নিতে দেখেছেন।
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
অতীত অভিজ্ঞতায় পুলিশ দেখেছে, এ ধরনের ছিনতাইবাজ হার বা আংটি পেটে চালান করে দেয়। পরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে সেই গয়না তারা বের করে নেয়।
সুজাহারও তেমন কিছু করেনি তো? সন্দেহ দানা বাঁধে রেল পুলিশের। তারা স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে সুজাহারকে নিয়ে যায়। এক্স-রে রিপোর্টে ধরা পড়ে হার আটকে রয়েছে সুজাহারের গলায়।
এ বার উপায়?
বুদ্ধি বাতলান চিকিৎসকই। তাঁর কথামতো থানায় নিয়ে এসে সুজাহারকে সিঙ্গাপুরী কলা খাওয়ানো শুরু করে রেল পুলিশ। ব্যাজার মুখে একের পর এক কলা গিলতে হয় সুজাহারকে। রাতে আবার এক্স-রে। দেখা যায়, হারের অবস্থান গিয়েছে বদলে। গলা থেকে নেমেছে পেটে। হার উদ্ধার শুধু সময়ের অপেক্ষা, দ্বিগুণ উৎসাহে ফের শুরু হয় কলা খাওয়ানো। হারের নিম্নগতি আরও দ্রুত করতে খাওয়ানো হয় পেট পরিষ্কারের ট্যাবলেটও।
কলা ও ট্যাবলেটের যৌথ আক্রমণের সামনে সুজাহার আর প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। শনিবার সকালে ২৪ নম্বর কলা গলাধঃকরণ করা মাত্র প্রকৃতির ডাক এসে যায় তার। বেরিয়ে আসে আস্ত সোনার হার!
কিন্তু আইনের হাত থেকে সুজাহার আর বেরোতে পারেনি। বিচারক তাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাতভর লড়াইয়ের পরে যুদ্ধজয়ের আনন্দ বনগাঁর রেল পুলিশের কর্তাদের মুখে। এক কর্তা তো বলেই ফেললেন, “কলা কিনতে গ্যাঁটের ৫০ টাকা খরচ হয়েছে। তবে, ব্যাটা শিল্পী। এটা মানতেই হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.