ব্রকোলি, বেবি কর্নের বাঁকে বাঙালির বিবর্তিত ব্যঞ্জন |
আসানসোলের কালীবাড়ি বাজারে ঢুকলে এখন মনটা খারাপ হয়ে যায় মধ্য তিরিশের অর্ণব ঘোষালের। একমুঠো ‘খোসলা’ খুঁজে পাওয়া যেন লটারির টিকিট-প্রাপ্তি! এ হল রাঢ়বাংলার ‘পুওরম্যান্স পোস্ত’! মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ এখনও অর্ণবের জিভে লেগে।
‘সবুজ ফুলকপি’ ব্রকোলি, রংবেরঙের ক্যাপসিকাম থেকে ঠান্ডা স্যালামি-হ্যাম সে-কালেও মিলত ঠিকই। কিন্তু এতটা রমরমা ছিল না। ডুমুরফল এবং ‘কুড়কুড়ে ছাতু’ (এক ধরনের মাশরুম) এখন ঢের ‘এক্সোটিক’। তবে আসানসোলে না মিললেও মোটরবাইক ছুটিয়ে বাঁকুড়ার স্কুলে যাতায়াতের ফাঁকে তা মাঝেমধ্যে খুঁজে পান অর্ণব। বর্ষায় বেগুন-সর্ষেবাটা ও ঝিরিঝিরি আলু দিয়ে রাঁধা গুগলিও তখন ঘর-কে-ঘর হতো। এখন সে সবই ক্রমশ অলীক।
আদ্যিকালের বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলার মেজ-সেজ শহরগুলোয় বড় আকারের খুচরো-বিপণিরও প্রবল রমরমা। মাছে-ভাতে বাঙালির পাতেও যা পরিবর্তনের ছোঁয়া আনছে। অলিভ অয়েল আগে বড়জোর শীতে বাচ্চাদের মালিশ করতে কাজে লাগত। এখন নেট খুলে ইউ-টিউবে শেখা ইতালিয়ান চিকেন রাঁধতেও কাজে লাগছে। ব্রকোলি-বেবি কর্নরাও যাকে বলে ঘরের লোক। শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ার পাঞ্চালি মুখোপাধ্যায় আলু-ব্রকোলির ডালনা রাঁধেন। একদম আলু-ফুলকপির ঢঙে। পাঞ্চালির ‘হোম-ডেলিভারি’র কারবার। মেনুতে এই নতুন সংযোজনটির বেশ কদর। বেবি কর্নের পদও মোটেও চিনে রেস্তোরাঁর একচেটিয়া নয়। মরিচ দিয়ে ঝাল-ঝাল বেবি কর্নের সোয়াদ দিব্যি ঘরে-ঘরে বঙ্গলক্ষ্মীর বারোমাস্যায় মানিয়ে গিয়েছে।
শুধু শিলিগুড়ি-আসানসোলই নয়, খড়্গপুর, হলদিয়া, দুর্গাপুর, বর্ধমানেও মল-সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া হোক বা কৃষ্ণনগর, ব্রিসবেন বা বেলিয়াতোড় ফেসবুক, ইউ-টিউবের জগৎটা তো আদতে সেই এক। এমনই একটি মল-চেনের পূর্ব ভারতের মার্কেটিং কর্তা মণীশ অগ্রবাল বলছিলেন, “পাল্টানোর ঝোঁকে ছোট বা বড় শহরকে এখন আলাদা করা মুশকিল। প্যাকেটের তৈরি খাবার, নানা কিসিমের কর্নফ্লেক্স গোছের সিরিয়াল, বিদেশি সস থেকে রকমারি কেক-কুকি সর্বত্রই স্বাগত। নতুন পণ্য হাতের কাছে পেলে এবং পড়তায় পোষালে সকলেই তা চেখে দেখতে সমান আগ্রহী।”
একদা কলকাতায় তিন বেলা ভাতের সঙ্গে ময়দা তথা লুচির ঘটা ছিল দস্তুর। এখন ঘোর মফস্সলেও একটু প্যাকেট-বন্দি পাস্তা পেলে বরং উজ্জীবিত হবে কোনও স্কুলবালক। গত শতকে আশির দশকেও এক বাক্স মুচমুচে ওয়েফার দেখলে রোমাঞ্চিত হতো খুদেরা। এখন তা গা-সওয়া। চকো-পাই বা ব্ল্যাক কুকি-র সাম্রাজ্য গমগম করছে। প্রজাপতি বিস্কুটের কালে-ভদ্রে দেখা মেলে।
স্বাদ-বদলের ঝোঁক অবশ্য তখনও ছিল। ভীষণ রোগা, কোনও কিছু খেতে না-চাওয়া টিংটিঙের জিভে তার আনতে লীলা মজুমদারের বই ঢুঁড়ে হাল্কা খিচুড়িতে চিকেন ছড়ানো পিশপ্যাশ বা ভ্যানিলা-সুরভিত দুধে ডিম ঢেলে এগ-নগ বানাতেন মরিয়া মায়েরা। এখন টিভি-র রান্নাঘরের প্রেরণায় হেঁসেলে হোটেলকে প্রতিষ্ঠার হিড়িক প্রায় সর্বজনীন। কলকাতার রেস্তোরা-কর্ত্রী বিবি সরকার নিয়মিত রান্না শেখানোর ক্লাস করেন। তিনি জানালেন, ইদানীং নতুন রান্না শেখার জন্য মফস্সল থেকেও অনেকেই খোঁজ-খবর করছেন। হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান মুখিয়ে আছে মেইফুন বা হানি-লেমন চিকেন শেখার জন্য।
নতুনের চাহিদাটা স্রেফ বড় শহরের চৌহদ্দিতে আটকে থাকছে না। বাঙালির নতুন গান, পোশাক বা ভাষার মতো রোজকার ভোজের পাতেও অতএব এই নতুন বাঁক।
|
বিজেপির বাংলা বাঁচাও অভিযান |
তৃণমূল এবং সিপিএমের হানাহানির প্রতিবাদে আজ, রবিবার থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ‘বাংলা বাঁচাও অভিযান’ করবে বিজেপি। আজ দলের রাজ্য দফতর থেকে মেট্রো চ্যানেল পর্যন্ত মিছিল করে অভিযানের সূচনা হবে। পরবর্তী দিনগুলিতে ব্লকে, পাড়ায়, বাজারে পথসভা চলবে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ শনিবার এ কথা জানান। তিনি আরও জানান, অভিযান পর্বে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে পরে সেগুলি রাজ্যপালকে জমা দেওয়া হবে। |