তাঁদের মেলামেশা-ঘনিষ্ঠতায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, এই দাবিতে এক যুবক-যুবতীকে হেনস্থা-মারধরের অভিযোগ উঠল কৃষ্ণনগরে। সিঁদুরের কৌটো এনে কয়েক জন প্রতিবেশী তাঁদের জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন। রাজি না হওয়ায় যুবকটিকে মারধর ও জরিমানা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে। মেয়েটির বাবা পুলিশের কাছে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্তেরা পলাতক।
শুক্রবার রাতে কৃষ্ণনগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাঝেরপাড়ায় কিছু বাসিন্দার এই আচরণের নিন্দা করেছেন শহরের অনেকেই। স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলর সমীর দাসের কথায়, “খুব অন্যায় হয়েছে। এ ভাবে কাউকে মারধর করা যায় না।” শহরের এক মানবাধিকার কর্মী ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “ওই দু’জনের মেলামেশা কারও আপত্তিকর বলে মনে হলে প্রশাসনকে জানাতে পারতেন। কিন্তু কেউ আইন হাতে নিতে পারেন না।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আট বছর আগে পাড়ারই এক জনের সঙ্গে বিয়ে হয় ওই যুবতীর। দম্পতির একটি ছ’বছরের ছেলে রয়েছে। এখন তাঁদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা চলছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েক মাস আগে শহরের এক ব্যবসায়ী যুবকের সঙ্গে ওই যুবতীর ঘনিষ্ঠতা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁরা দু’জন পার্কে দাঁড়িয়েছিলেন। যুবকটির অভিযোগ, “হঠাৎ দেখি, বাইরে আমার গাড়ির আশপাশে কয়েক জন ঘোরাফেরা করছে। আমি সে দিকে এগিয়ে গেলে গালিগালাজ শুরু হয়। বলা হয়, এ ভাবে মেলামেশা করা চলবে না। তাদের বোঝানোর জন্য আমি পার্কের বাইরে বেরোই। কিন্তু সিঁদুরের কৌটো বের করে তারা দাবি করে, এখনই বিয়ে করতে হবে। রাজি না হওয়ায় আমাকে মারধর শুরু হয়। কুড়ি হাজার টাকা জরিমানাও দাবি করা হয়।”
যুবতীর বাবা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, স্থানীয় ওই বাসিন্দারা দাবি করেছে, এর আগেও না কি বেশ কয়েক বার তাঁদের দু’জনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গিয়েছে। বারণ করা সত্ত্বেও শোনেননি। তাই তারা এ ভাবে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
পার্কের বাইরে রাখা ওই যুবকের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের সম্পর্কে এ ভাবে বাধা দেওয়া যায় কি না, সে প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার কয়েক জনের দাবি, ওই দু’জনের মেলামেশায় এলাকার ‘পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল’।
ওই যুবক বলেন, “আমি ওই মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাই। তবে ওঁর বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলায় তা এখনই সম্ভব নয়। এ কথা পাড়ার সবাই জানে। তার পরেও যে আচরণ করা হল, আমি মর্মাহত।” মেয়েটির বাবার বক্তব্য, “আমার মেয়ে বা ওই ছেলেটি কোনও অন্যায় করেনি। বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলেই ওরা বিয়ে করবে।” কৃষ্ণনগরের আইসি অলোকরঞ্জন মুন্সি বলেন, “এলাকার কিছু লোক জনের থেকে খবর পেয়েই আমরা ওই দু’জনকে উদ্ধার করে আনি। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।” |