|
|
|
|
কোলাঘাট সেতুতে |
বড় চুরি, এড়ানো গেল ক্ষতি |
নুরুল আবসার • কোলাঘাট |
যান চলাচলের জন্য মাসখানেক আগে চালু হয়েছে রূপনারায়ণ নদের উপরে কোলাঘাটের নতুন সেতু। শুক্রবার সেই সেতুরই গুরুত্বপূর্ণ কিছু নাট-বোল্ট চুরি হয়ে গেল। সেতু নির্মাণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মীরা চুরির বিষয়টি টের পেয়ে দুষ্কৃতীদের ধাওয়া করেন। কিন্তু তাদের নাগাল মেলেনি। নতুন যন্ত্রাংশ দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করে দেওয়া হলেও এই ঘটনায় সেতুর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেতুটির নির্মাণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের আশঙ্কা, চুরির বিষয়টি নজরে না পড়লে যানবাহনের চাপে সেতুটি ভেঙে পড়তে পারত। পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
১,১০০ মিটার লম্বা সেতুটিকে ধরে রেখেছে ১৯টি স্তম্ভ। প্রতিটি স্তম্ভের উপরে পাশাপাশি ১০ ফুটের ব্যবধানে পাঁচটি করে ইস্পাতের ‘গার্ডার’ আছে। গার্ডারগুলি যাতে সরে যেতে না পারে, সে জন্য ইস্পাতের ফালি দিয়ে একটি গার্ডারের সঙ্গে আর একটিকে নাট-বোল্টের সাহায্যে জোড়া হয়েছে। তার উপরে পাতা হয়েছে কংক্রিটের স্ল্যাব। এর উপরেই সেতুর রাস্তা। |
|
কোলাঘাট সেতুর এই অংশ থেকেই চুরি হয়ে গিয়েছে নাট-বোল্ট। সুব্রত জানার তোলা ছবি। |
পুলিশ ও ওই নির্মাণকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ এক দুষ্কৃতীকে কোলাঘাটের দিকের ১৩ এবং ১৪ নম্বর স্তম্ভের মধ্যবর্তী অংশের ‘গার্ডার’-এর নাট-বোল্ট খুলতে দেখেন কয়েক জন শ্রমিক। সেই সময়ে নীচে নদীতে ভুটভুটি নিয়ে অপেক্ষা করছিল আর এক দুষ্কৃতী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপরে থাকা দুষ্কৃতী একটি করে নাট-বোল্ট খুলে ভুটভুটিতে ফেলতে থাকে। নির্মাণকারী সংস্থার মজুরেরা তা দেখে চিৎকার করে ওঠেন। ঘটনাস্থলে যান সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার নরেন দুবে। তাঁকে দেখে সেতুর স্তম্ভের কাছে থাকা দুষ্কৃতী নদীতে ঝাঁপ মারে। সঙ্গী তাঁকে ভুটভুটিতে তুলে নিয়ে চম্পট দেয়। পরে সংস্থার কর্মী এবং ইঞ্জিনিয়াররা ওই ‘গার্ডার’ পরীক্ষা করে দেখেন, অন্তত ৫০টি নাট-বোল্ট খোলা।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সেতুর নাট-বোল্ট এত সহজে খুলল কী করে দুষ্কৃতীরা? নির্মাণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছেন, ব্রিটিশ আমলে নাট-বোল্টের মাথা ‘রিভেট’ করে দেওয়া হত। তাতে ওই যন্ত্রাংশ সহজে খোলা যেত না। কিন্তু বর্তমানে আর ওই পদ্ধতি মানা হয় না। দুষ্কৃতীরা নাট-বোল্ট খুলে নেওয়ায় কোলাঘাটের সেতুটির দু’টি ‘গার্ডার’-এর জোড় আলগা হয়ে গিয়েছিল। কোনও একটি ‘গার্ডার’ সামান্য সরে গেলেও গাড়ির চাপে উপরের স্ল্যাব হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে পারত। সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক প্রদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এক-একটা নাটের ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম। ওই নাট-বোল্ট বিদেশ থেকে আসে। আমাদের কাছে বাড়তি কিছু ছিল। তা দিয়েই চুরি যাওয়া অংশ মেরামত করা হয়েছে। না হলে সেতুতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হত। এ বার আমরাও নজরদারি বাড়াব।”
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে। সেতুতে নজরদারি বাড়ানো হবে। নাট-বোল্ট খোলার পিছনে নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|