আইপিএলের সৌরজগতে কত তাড়াতাড়ি সব পাল্টে যায়!
আজ যে ‘ডেভিড’, বছর ঘুরতে না ঘুরতে সে ‘গোলিয়াথ’। অধঃপতনের গলি ছেড়ে রাতারাতি উত্তরণের রাজপথে। চ্যাম্পিয়নেরও এই মহাবিশ্বে ক্ষমা নেই। কয়েকটা ভুলভ্রান্তি, দু’টো ম্যাচে পরপর হার, এখানে নিমেষে চ্যাম্পিয়নকেও ছুড়ে ফেলবে কর্দমাক্ত পৃথিবীতে। আর যে এত দিন ছিল ‘ফেল’ করা ছাত্র, সে তিনটে ম্যাচ জিতে ফেললে মুহূর্তে ‘ডার্ক হর্স’! চ্যালেঞ্জার!
রবিবাসরীয় ইডেনে কেকেআর বনাম হায়দরাবাদ সানরাইজার্স ম্যাচের আবহ ধরতে গেলে, উপরের তুলনাটা আসা অস্বাভাবিক নয়।
দু’টো আইপিএলের মাঝে একটা বছরও কাটল না। অথচ ওই সংক্ষিপ্ত সময়েই ব্যালেন্স শিট ওলট-পালট। এত দিন হায়দরাবাদ বনাম কলকাতা ম্যাচ মানে ছিল, কলকাতার বাঁধা জয়। কেকেআর ক্যাপ্টেন সৌরভ হোক বা গম্ভীর হায়দরাবাদ ম্যাচে ডিজে-র ‘করব, লড়ব, জিতব রে’-র জগঝম্প শুনতে শুনতে মাঠ ছাড়ায় অভ্যস্ত ছিলেন দর্শক। কিন্তু রবিবার ওই একই জিনিস হবে, বুক ঠুকে কেউ বলছে কোথায়? |
শনিবারের ইডেন
ম্যাকালাম পারবেন নাইটদের টেনে তুলতে? |
শনিবার বিকেলের ইডেনে বরং কিছু অদ্ভুত দৃশ্যের খোঁজ পাওয়া গেল। সানরাইজার্সের অ্যাম্বাস্যাডর কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত ইডেনের পিচ দেখতে চিবিয়ে-চিবিয়ে বলে যাচ্ছেন, “কেকেআর ভাল। কিন্তু আমরাও তিনটে ম্যাচ এমনি এমনি জিতিনি!” টিম মেন্টর ভিভিএস লক্ষ্মণ ক্লাবহাউস গেট দিয়ে বেরোচ্ছেন, মিডিয়ার ‘বুম’ অনবরত খুঁচিয়ে চলেছে। নাইট মিডল অর্ডারের ‘রক্ষাকবচ’ ওয়েন মর্গ্যান পাঁচটার মধ্যে তিনটে প্রশ্ন পাচ্ছেন লাগাতার দু’টো ম্যাচে হারের বিপর্যয় নিয়ে। উদাস গলায় বলে দিচ্ছেন, “টি-টোয়েন্টি খুব মজার খেলা।” শুনলে দিল্লি-বধ দিয়ে আইপিএল সিক্সে স্বপ্নের শুরুকে প্রগৈতিহাসিক মনে হবে। আবহ, পরিবেশ দেখলে প্রাসঙ্গিক মনে হবে লিগ টেবলের অঙ্ককে।
সানরাইজার্স, তিন।
কেকেআর, সাত।
প্রথম টিম গত বছরের চূড়ান্ত ‘নন পারফর্মার’।
দ্বিতীয় টিম গত বছর চিপকের মায়াবী রাতে ট্রফি হাতে আবেগে ভেসেছে। |
পিচের সামনে সানরাইজার্স শিবিরের বৈঠকে মুডি-শ্রীকান্ত-লক্ষ্মণ। |
নতুন জার্সি, টিমের নতুন নাম, নতুন স্পনসর, পেপসি আইপিএলে হায়দরাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজির বদলেছে অনেক কিছু। বিস্ময়কর ভাবে বদলেছে ভাগ্যও। কেকেআরে আবার বিস্ময়ের অভাব। টিমের মিস্ট্রি স্পিনার সুনীল নারিনের রহস্য আর ততটা ধোঁয়াটে নেই। নতুন ‘মিষ্ট্রি’ আমদানির কারণেই বোধহয়, রবিবার নামানোর কথা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার স্পিনার সচিত্র সেনানায়কে-কে। রাতের খবর, ইডেনের ‘টার্নারে’ (কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের কথামতো স্পিনিং ট্র্যাক হচ্ছে) তাঁর নামা অনেকটাই নিশ্চিত। আর আছেন ‘বিগ ম্যাক।’ গত বছরও কেকেআরেই ছিলেন। কিন্তু আইপিএল ফাইভ ফাইনালের প্রথম এগারোয় জায়গা হয়নি। এ বারও চোটের জন্য প্রথম তিনটে ম্যাচে তাঁকে পাওয়া যায়নি। আইপিএল সিক্সে তাই ব্রেন্ডন ম্যাকালাম এখন নতুন-ই। এ দিন নেটে ব্যাটিং, গ্লাভস পরে কিপিং কোনও কিছুই বাদ রইল না। রবিবার ম্যাকালামের নামার সম্ভাবনাও যথেষ্ট। ফিরতে পারেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল-ও।
তাতে স্টেইন-গানে মরচে পড়বে তো? শহরে দুপুরে ঢুকলেও ইডেনের দিকে আসেননি স্টেইন। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসকে একাই ধ্বংস করে রবিবার নামছেন কেকেআরের বিরুদ্ধে। তাঁকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে কেকেআর? মর্গ্যান একবার বললেন, “গত বছর ইডেনে খুব ভাল কিছু করেনি স্টেইন।” পরমুহূর্তেই আবার বলে উঠলেন, “স্টেইনের মতো পেসারকে আটকানো যায় না। আলাদা স্ট্র্যাটেজি করে লাভ নেই।”
কথাবার্তার অসঙ্গতি যথেষ্ট অর্থবহ! |
আতঙ্কের নাম স্টেইন
রবিবার ইডেনে কী করতে পারেন ডেল স্টেইন? কী ভাবে
সামলানো যায় তাঁর গোলাগুলি? অশোক মলহোত্রর প্রেসক্রিপশন... |
• ইডেনের উইকেট কিছুটা স্লো। তাই হয়তো গতিতে মারতে পারবে না ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু নতুন বলের পালিশটা কাজে লাগাবে।
• নতুন বলে স্টেইনকে সামলানোর দায়িত্বটা নিতে হবে গম্ভীরকেই। বাঁ হাতি বলে স্টেইনের আউটসুইঙ্গার সামলানোর সেরা লোক ওই। ডান হাতিরা সমস্যায় পড়তে পারে।
• স্টেইনকে শুরু থেকে মারতে হবে। ওকে মাথায় চড়তে দেওয়া চলবে না। তবে স্টেইনকে উইকেট না দেওয়ার ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে।
• ম্যাচ ৪ উইকেট ৬ ইকনমি ৪.৭৩ সেরা বোলিং ৩-১১ দ্রুততম বল ঘণ্টায় ১৪৬.৮১ কিমি। (চলতি আইপিএলে স্টেইন) |
|