অভিযুক্ত শাসক দল দুর্গাপুরের মাল্টিপ্লেক্সে ছবির প্রদর্শনীতে বাধা
য়েকটি দৃশ্য রাজ্যের শাসক দলের ভাবমূর্তি খারাপ করছে, এই দাবিতে দুর্গাপুরে একটি মাল্টিপ্লেক্সে একটি নতুন বাংলা ছবি দেখানোয় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কিছু যুবকের বিরুদ্ধে। বাধাদানকারীরা নিজেদের ‘তৃণমূল কর্মী’ পরিচয় দিয়েছে বলে মাল্টিপ্লেক্সের কর্মীরা দাবি করেছেন।
বুধবার ওই ঘটনার পরেই রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘কানামাছি’ ছবিটি দেখানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে সেটির কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত বলেন, “ঝামেলায় না গিয়ে ওখানে কানামাছি দেখানো বন্ধ করে দিয়েছি।”
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি তথা দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “এমন ঘটনা কাঙ্খিত নয়। কিন্তু মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো। এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, দলের তরফে আমি খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” গত ১৫ মার্চ মুক্তির পর থেকেই দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ওই মাল্টিপ্লেক্সে চলছিল ‘কানামাছি’। সেখানকার কর্মীদের দাবি, বুধবার দুপুরে কয়েক জন যুবক সেখানে গিয়ে দাবি করে, অবিলম্বে সিনেমাটি দেখানো বন্ধ করতে হবে। তারা নিজেদের তৃণমূল কর্মী দাবি করে জানায়, সিনেমার কিছু দৃশ্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। মাল্টিপ্লেক্সের কর্মীদের দাবি, ওই যুবকদের তাঁরা বোঝাতে চান, সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে সমস্যা ছাড়াই চলেছে। তা শুনে সিনেমা বন্ধ না করা হলে মাল্টিপ্লেক্স ভাঙচুরের হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়।
ওই মাল্টিপ্লেক্সের কর্ণধার তথা একটি সিরিয়াল ও সিনেমা নির্মাতা সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অরিজিৎবাবু শনিবার কলকাতা থেকে ফোনে বলেন, “দুর্গাপুরের কর্মীরা আমাকে যে ই-মেল পাঠিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, কিছু তৃণমূল কর্মী সিনেমাটি দেখানো বন্ধ করতে বলেছেন।” তাঁর ক্ষোভ, “সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র দিয়েছে। এখন যদি আবার এ ভাবে পলিটিক্যাল সেন্সর বোর্ড এসে হাজির হয় তবে তো খুব চিন্তার বিষয়!” সিটি সেন্টারের অন্য একটি মাল্টিপ্লেক্সেও বৃহস্পতিবার থেকে সিনেমাটি দেখানো বন্ধ হয়েছে। তবে সেখানকার আধিকারিকেরা দাবি করেছেন, প্রযুক্তিগত কারণেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণের ছায়া থাকায় গত নভেম্বরে সরকারি প্রেক্ষাগৃহ স্টার থিয়েটারে ‘তিন কন্যা’র প্রদর্শনে শাসকদলের তরফে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। স্তালিনের প্রতি অসম্মানসূচক মন্তব্য রয়েছে অভিযোগে ফেব্রুয়ারিতে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশনের কলকাতা অফিস ‘কাঙাল মালসাট’-এর সার্টিফিকেশন আটকে দেয়। চলতি বছরের গোড়ায় নাটকের সংলাপে ‘মা-মাটি-মানুষ’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করায় দিনহাটায় কলকাতার নাট্যদলের উপরে খড়্গহস্ত হয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। বিক্ষোভ দেখিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় নাট্যকর্মীদের।
‘কানামাছি’তে কী এমন রয়েছে যা নিয়ে আপত্তি উঠতে পারে? প্রযোজক সংস্থা সূত্রের খবর, সিনেমায় একটি রাজনৈতিক দলের প্রচারে বিস্ফোরণের ঘটনা দেখানো হয়েছে। সেই দলই ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে। এর পরে এক সাংবাদিক সন্দেহ করেন, জনসাধারণের সহানুভূতি আদায় করতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। সিনেমায় ‘মা-মাটি-মানুষ’ শব্দবন্ধও ব্যবহৃত হয়েছে। তবে আপত্তির কারণ ঠিক এগুলোই কি না, তা স্পষ্ট নয় প্রযোজক সংস্থার কাছে।
ছবিটির প্রযোজক অশোক ধানুকার বক্তব্য, “এই ঘটনার পরে মনে হচ্ছে, কলকাতায় শাসক দলের যা মুখ, রাজ্যের অন্যত্র তা আলাদা।” পরিচালক রাজ চক্রবর্তী জানান, তিনি পুরুলিয়ার গ্রামে একটি ছবির শু্যটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।
তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা যায়, যে যুবকেরা মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ তারা দুর্গাপুর শহরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর হিরালাল বাউড়ির অনুগামী। হিরাবাবুর দাবি, “ওই দুই মাল্টিপ্লেক্সে কিছু ঠিকা শ্রমিকের বেতন নিয়ে আমাদের কিছু ছেলে কথা বলতে গিয়েছিল। তখন হয়তো সিনেমাটির বিষয় নিয়েও আপত্তি জানিয়ে থাকতে পারে। তা আমার জানা নেই। তবে সিনেমা বন্ধ করতে বলা হয়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.