বেলা তিনটে। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছিল। বান্দুং থেকে বালির দেনপাসার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিল লায়ন এয়ার। নামার জন্য তৈরিও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রানওয়ে টপকে বিমান ছুটল সমুদ্রের দিকে। ১০৮ জন যাত্রীকে নিয়ে নেমে পড়ল বালি সাগরে। তবে বেঁচে গেলেন সকলেই। ঠিক যেন মিরাকল!
ইন্দোনেশিয়ার ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে তৃতীয় এই দেনপাসার বিমানবন্দর। ৯৮৪২ ফুট দীর্ঘ রানওয়ে ঢুকে গিয়েছে সমুদ্রের মধ্যে। সাগরের এই অংশটাই ইন্দোনেশিয়ার মূল ভূখণ্ড জাভা থেকে আলাদা করে রেখেছে বালিকে। বিমান জলের মধ্যে ঢুকতেই চিৎকার করতে শুরু করেন যাত্রীরা। বিমানের এক যাত্রী দেওয়ি বললেন, “আমাদের বিমানটা ঠিকঠাকই নামছিল। হঠাৎ সমুদ্রের দিকে চলে গেল, আর তার পর জলের উপর নেমে পড়ল।” তিনি আরও বলেন, “জলে ডুবে যাবে ভেবে সবাই তত ক্ষণে আর্তনাদ শুরু করে দিয়েছেন। সব জিনিস ফেলে রেখেই আপৎকালীন দরজা দিয়ে বেরিয়ে জলে ঝাঁপ দিই। উদ্ধারকর্মীরা আসার আগেই সাঁতরে পারে চলি আসি।” |
বালি সাগরে আছড়ে পড়ে দু’টুকরো লায়ন এয়ারের যাত্রীবোঝাই বিমান।
শনিবার ইন্দোনেশিয়ার দেনপাসার বিমানবন্দরের উপকূলে। ছবি: এপি |
দেওয়ির মতো আরও অনেকেই আপৎকালীন দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসেন। গায়ে লাইফ জ্যাকেট পরে নিয়েছিলেন সকলেই। উদ্ধারকর্মীরাও সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আহতদের উদ্ধার করে তাঁরাই স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান।
কিন্তু কেন এমন হল?
সে বিষয়ে কেউই কিছু বলতে পারছেন না। পরিবহণ মন্ত্রকের এক কর্তা হেরি ভক্তি বলেন, “দুর্ঘটনার কারণ একেবারেই অস্পষ্ট। তদন্তের পরেই জানা যাবে।” হেরি প্রথমে বলেছিলেন, বিমান রানওয়েতেই নেমেছিল। তার পর রানওয়ে ছাড়িয়ে নেমে যায় জলে। কিন্তু পরে তিনি জানান, বিমান সরাসরি সমুদ্রেই নেমেছিল। রানওয়ের শেষে সমুদ্রের ধারে জলে ডুবে থাকা পাথুরে অংশটায় আছড়ে পড়ে। এর পর মাঝ বরাবর ভেঙে দু’টুকরো হয়ে যায় বিমানটি। ভেঙে যাওয়া পিছনের অংশটাতেও আবার চিড় ধরে গিয়েছিল। তবে বিমান পুরোপুরি জলে ডুবে যায়নি, এই যা বাঁচোয়া। হেরি বললেন, “ভাগ্য ভাল, ওখানে জল কম ছিল।”
উড়ান সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, বিমানে ১০১ জন যাত্রী ও সাত জন কর্মী ছিলেন। কমবেশি আহত হয়েছেন প্রায় সকলেই। তবে কারও প্রাণহানির আশঙ্কা নেই।
সম্প্রতি নিরাপত্তার কথা মাথা রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো লায়ন এয়ারকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। তার পরে আজকের এই ঘটনা, সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল। |