বহু বছর ধরে পাড়ার অনেক বাড়িতেই তৈরি হচ্ছিল চোলাই। দেদার চোলাইয়ের টানে ভিন এলাকার নেশাড়ুদের যাতায়াতও বাড়ছিল দুলে পাড়ায়। চোলাই নিয়ে ঝগড়া, মারপিঠেরও কমতি ছিল না। এক কথায়, চোলাইয়ের জেরে শান্তি ছিল না এলাকায়। অবশেষে চোলাই রুখতে এগিয়ে এলেন এলাকার মেয়েরা। শুক্রবার সকালে ২০ জন মহিলার একটি দল অভিযান চালিয়ে ভেস্তে দিল ১৪টি চোলাইয়ের ঠেক।
দুলে পাড়ায় ১০০ ঘর বাসিন্দার বাস। বেশিরভাগ পরিবারই খেতমজুরি করেন। বাসিন্দারা জানান, একে অভাবের সংসার। তার উপর নেশার বালাই। সারা দিনের পরিশ্রমের আয়ের বেশিরভাগ অংশই চলে যাচ্ছিল চোলাইয়ের পিছনে। ছোটরাও বাদ যাচ্ছিল না। প্রাথমিকের গণ্ডী পেরোলেই মদের নেশায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল পড়াশোনার চাহিদা। এই ভয়ঙ্কর অবস্থার শিকার হচ্ছিলেন মেয়েরা। কিন্তু প্রতিবাদ করতে গেলেই তাঁদের কপালে জুটত মার।
কিন্তু এক সময়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। পরিস্থিতি বদলাতে বৃহস্পতিবারই এক জোট হন গ্রামের কিছু মহিলা। ঠিক করেন, পরের দিন সকালে পুরুষেরা কাজে বেরোলেই, তারা নিজেরা চোলাইয়ের ঠেক ভাঙবেন। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। |
শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোলেন মিনতি ধারা, শঙ্করী ঢক, সনকা ঢক, সুমিত্রা মালিক, সোমা ধারারা। পর পর ১৪টি ঠেকে অভিযান চালালেন। মদ রাখার পাত্র থেকে মদ তৈরির উপকরণ, সবই নষ্ট করে দিলেন তাঁরা। প্রায় ৩২ ড্রাম চোলাই এ দিনের অভিযানে নষ্ট করেছেন বলে হিসেব তাঁদের। এত কিছু করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন বাসন্তী, শঙ্করীরা। তৃপ্ত দেখায় তাঁদের মুখ। বাসন্তীর কথায়, “গ্রামের পরিবেশ ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। অন্য গ্রামের কাছেও আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছিল। আশা করি, কারবারিরা এ বার সচেতন হবে।” বিধবা শঙ্করী বলেন, “টানা মদ্যপানের জেরে ছেলেদের স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কিছু বললেই অশান্তি হবে। নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিই, গ্রাম থেকে হটাতেই হবে এই বেআইনি চোলাই কারবারিদের। আশা করছি, এ বার মদ বিক্রির রমরমা বন্ধ হবে। তৃণমূল নেতা সুকুর শেখ জানান, দুলে পাড়ায় শিক্ষার বড় অভাব। আশা করছি, গোটা গ্রামের চোখ খুলবে।
অভিযান চলাকালীন খবর পৌঁছয় বুলবুলিতলা পুলিশ ফাঁড়িতে। ততক্ষণে অবশ্য বেশিরভাগ কারবারিই এলাকা ছাড়া। পুলিশ বেআইনি কারবারিদের নাম লিখে নিয়ে যায়। পুলিশের তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, পরে এমন কারবারের খবর পৌঁছলে কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন, আবগারি দফতরের কালনা থানার ওসি প্রদীপ ঘোষও। তিনি জানান, ভৈরব নালা গ্রামে ইতিমধ্যেই দু’বার অভিযান চলেছে। গ্রামবাসীরাই এ বার যে ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন, তা অভাবনীয়। |