|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
ইতিহাস যখন সুসংস্কৃত |
বাঙালির গত শ’দেড়েক বছরের ইতিহাস চর্চায় আঞ্চলিক ইতিহাসের পাল্লা রীতিমতো ভারী। দুই বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে শুরু করে মৌজা গ্রাম পাড়া নগর জনপদ নিয়ে কত যে ইতিহাস লেখা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও তৈরি হয়নি। একই জেলা নিয়ে আছে বিভিন্ন জনের লেখা ইতিহাস। লেখকরা খুব নগণ্য সংখ্যায় পেশাদার ঐতিহাসিক। হয়তো সে কারণেই বহু কষ্টে ও পরিশ্রমে, দীর্ঘ দিনের ক্ষেত্রসমীক্ষার পর অধিকাংশ সময় নিজের খরচে বই প্রকাশ করে সে বইয়ের সংশোধিত পরবর্তী সংস্করণ চোখে দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য খুব কম আঞ্চলিক ইতিহাসকারেরই হয়েছে। কেউ কেউ এক খণ্ডের প্রথম সংস্করণকে ভেঙে দ্বিতীয় সংস্করণে দুটি খণ্ডের পরিকল্পনা করে শেষ পর্যন্ত একটির বেশি প্রকাশ করতে পারেননি, যেমন যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তর বিক্রমপুরের ইতিহাস। আবার সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোহর-খু্লনার ইতিহাস-এর ক্ষেত্রে বিপুল সংযোজন সম্ভব হয়েছিল শিবশঙ্কর মিত্রের মতো পুত্র থাকায়।
হুগলী জেলার ইতিহাস প্রণেতা সুধীরকুমার মিত্রের (১৯০৯-’৯৩) ক্ষেত্রে অবশ্য বিষয়টি অন্য রকম হয়েছিল। ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে হুগলি চর্চার এই উৎসগ্রন্থটি ১৯৪৮-এ এক খণ্ডে প্রথম প্রকাশের পর ’৬১-’৬৮-র মধ্যেই তিন খণ্ডে পরিবর্ধিত সংস্করণের (হুগলী জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ) সৌভাগ্য লাভ করে। পরবর্তী সিকি শতাব্দীর জীবৎকালে লেখক আরও বহু সংশোধন-সংযোজন করেছিলেন, কিন্তু ’৯০-এর পুনর্মুদ্রণে তা অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। সুধীরবাবুর প্রয়াণের পর কেটে গিয়েছে দু’দশক। অতিক্রান্ত হয়েছে তাঁর শতবর্ষও। এত দিনে সৌমিত্রশংকর সেনগুপ্ত ও পল্লব মিত্রের সম্পাদনায় লেখক-পরিকল্পিত সংযোজন ছাড়াও অতিরিক্ত বহু তথ্য, সুধীরবাবুর প্রাসঙ্গিক কয়েকটি লেখা এবং তিনশোর মতো ছবি সহ হুগলী জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ (দে’জ, দুই খণ্ড মোট ১৬০০.০০) শতবার্ষিকী সংস্করণ বাংলা নববর্ষে প্রকাশিত হতে চলেছে। প্রথম খণ্ডে আছে জেলার পরিচয়বাচক অধ্যায়গুলি, আর দ্বিতীয় খণ্ডে সুধীরকুমারের ‘নিবিড় অঞ্চল পরিক্রমার সারাৎসার’ স্থান-বিবরণ। নতুন প্রচ্ছদ পূর্ণেন্দু পত্রীর করা পুরনোটিরই অনুসরণে, সেই অলঙ্করণও ব্যবহৃত। সুধীরকুমার বেঁচে থাকলে সংস্করণের বিন্যাস এই রকম না-ও হতে পারত, কিন্তু তথ্যের দিক থেকে এই আকরগ্রন্থ আজ যে পরিমাজির্র্ত চেহারা পেল, তা আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে দিকচিহ্ন হয়ে থাকবে, সন্দেহ নেই। |
|
|
|
|
|