বসিরহাট থেকে গ্রেফতার হয়েছে নারী পাচারচক্রের অন্যতম মূল পাণ্ডা এক মহিলা। শুক্রবার দুপুরে সিআইডি-র অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটের অফিসার শর্বরী ভট্টাচার্য এবং বসিরহাট থানার আইসি শুভাশিস বণিক যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত মহিলার নাম সাহিদা বিবি। তার বাড়ি বসিরহাটের ইটিন্ডার সীমান্তবর্তী নাকুয়াদহ গ্রামে। ধৃতকে এ দিনই কলকাতায় ভবানিভবনে নিয়ে আসা হয়।
রাজ্য গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ জানুয়ারি হাওড়ার রামরাজাতলা স্টেশনে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে প্ল্যাটফর্মে পড়ে আহত হয় এক কিশোরী। তার সঙ্গে এক যুবকও প্ল্যাটফর্মে ঝাঁপ দেয়। আহত হয় সেও। শালিমার থানার পুলিশকে ওই কিশোরী জানায়, তার বাড়ি বাংলাদেশে। কাজের লোভ দেখিয়ে তাকে বসিরহাটের নাকুয়াদহ গ্রামে নিয়ে আসার পর আমেদাবাদে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে কোনও রকমে পালালেও ফের পাচারকারীদের হাতে ধরা পড়ে সে। এরপর তাকে কলকাতায় আনা হয়। সেখানে কিছু দিন রাখার পর ফের তাকে ট্রেনে করে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বুঝতে পেরে সে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেয়। পুলিশ কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে তার সঙ্গী বাংলাদেশি যুবক আজগার আলি সর্দারকে গ্রেফতার করে। জানা যায়, তাঁর বর্তমান ঠিকানা বসিরহাটের নাকুয়াদহ গ্রামে।
ধৃত সাহিদা বিবি।--নিজস্ব চিত্র। |
ঘটনার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তে ওই কিশোরীকে জিজ্ঞাসা করে সিআইডি জানতে পারে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এই চক্রটি। এর পর সিআইডি বসিরহাটের নাকুয়াদহ থেকে গ্রেফতার করে মনিরুল সর্দার নামে এক দুষ্কৃতীকে। তাকে জেরা করে আমেদাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয় মুন্না ভাই ও জনি শরিফ নামে আরও দুই দুষ্কৃতীকে। তাদের জেরা করে জানা যায় বাবু ভাই নামে আরও এক দুষ্কৃতীর নাম। জানা যায়, আরও তিনটি মেয়েকে নিয়ে মুম্বইয়ের যাওয়ার কথা রয়েছে বাবুর। সেই মতো অভিযান চালিয়ে হাওড়া স্টেশন থেকে মুম্বইয়ের ট্রেন ধরার আগেই বাবুকে স্টেশন থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। সব শেষে ধরা পড়ে সাহিদা বিবি।
পুলিশ জানিয়েছে, সাহিদার বাড়ি বাংলাদেশের বাগচাড়া গ্রামে। স্বামীর মৃত্যুর পর অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে এ পারে এসে মুম্বইয়ের পুনেতে চলে যায় সে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় মনিরুলের। মনিরুল সাহিদাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে বসিরহাটের নাকুয়াদহ গ্রামে। সাহিদার কাজ ছিল বাংলাদেশ থেকে কাজের লোভ দেখিয়ে কিশোরীদের এ দেশে এনে তাদের বাড়িতে রাখা। কিছুদিন সেখানে রাখার পর মুম্বই, আমেদাবাদ, দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিক্রি করে দেওয়া হত। স্ত্রীর এই কাজে অন্যতম সহযোগী ছিল মনিরুল এবং আজগার-সহ আরও কয়েকজন।
ঘটনার তদন্তকারী অফিসার শর্বরী ভট্টাচার্য বলেন, “একটি আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এই চক্রটি। তাদের মাধ্যমে বহু বাংলাদেশি মহিলা রাজ্যের বিভিন্ন নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রি হয়েছে। কোনও অভিযোগ হত না বলে পুলিশের অজ্ঞাতে এরা ভালই ব্যবসা ফেঁদেছিল।” শীঘ্রই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতার করা যাবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। |