|
|
|
|
সিভিক পুলিশে চাকরি |
হুমায়ুনের পুত্রের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ |
শুভাশিস সৈয়দ • বহরমপুর |
পুলিশে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করে দেওয়ার নামে এক যুবকের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠল মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের ছেলে গোলাম নবি আজাদ ওরফে রবিনের বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের শক্তিপুরের মধ্য কাটাইকোনা গ্রামের বাসিন্দা সেই যুবক শ্রীমন্ত প্রামাণিক শক্তিপুর থানায় রবিনবাবুর বিরুদ্ধে ৯ এপ্রিল অভিযোগও দায়ের করেছেন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেছেন, “ওই ঘটনায় একটি জেনারেল ডায়েরি হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখছি।” সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, সিভিক পুলিশে নিয়োগ নিয়ে কোনও দুর্নীতি হচ্ছে না।
রবিনেরও দাবি, ওই যুবককে তিনি চেনেনই না। প্রাণিসম্পদ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হুমায়ুনও বলেছেন, “ষড়যন্ত্র করে আসলে আমাকেই ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
শ্রীমন্তের কিন্তু সোজাসুজি অভিযোগ, “সিভিক পুলিশ পদে চাকরি করে দেবেন বলে আমার কাছ থেকে মোট ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন রবিন। তার মধ্যে ১০ হাজার টাকা আমি দিয়েছি। বাকি ২৫ হাজার টাকা চেয়ে গত ৮ এপ্রিল আমাকে শক্তিপুরে তৃণমূলের একটি দফতরে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়েছে।” তার পরেই তিনি শক্তিপুর থানায় সেই অভিযোগ দায়ের করেন।
হুমায়ুন কবীরের
ছেলে রবিন |
সিভিক পুলিশ পদে জেলার ২৬টি থানাতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত মাস থেকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তার মধ্যে শক্তিপুর থানা এলাকায় নেওয়া হবে ১৩১ জনকে। বছরে অন্তত ১২০ দিন তাঁদের ১৪১ টাকা রোজে পুলিশের কোনও কাজ দেওয়ার কথা। ১৬ থেকে ২০ মার্চ সে জন্য আবেদনকারীদের শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে শক্তিপুর থানা লাগোয়া ময়দানে। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন শ্রীমন্ত। তিনি জানান, তার পরেই রবিনবাবু ও তাঁর কয়েক জন সঙ্গী তাঁকে টোপ দেন যে, তাঁদের ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ দিলে তাঁরা তাঁকে এর পরে ইন্টারভিউতেও পাশ করিয়ে দেবেন। সেই মতোই ২ এপ্রিল তিনি তাঁদের ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন বলে জানান শ্রীমন্ত। তিনি বলেন, “কিন্তু বাকি টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তাই আমি চাকরির আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।” তবে অভিযোগ, রবিনবাবু এর পরেও শ্রীমন্তকে মাধ্যমিক পরীক্ষার শংসাপত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। প্রথমে শ্রীমন্ত যেতে রাজি হননি। তাঁর কথায়, “রবিনবাবুর এক সঙ্গী আমাকে বাড়ি থেকে জোর করে নিয়ে যায়। তাঁর চাপে ওই শংসাপত্রও সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়েছিল। সেটিও রবিনবাবুরা কেড়ে নিয়েছেন।” পুলিশ সুপার হুমায়ুন বলেন, “ওই শংসাপত্র জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে কি না, তা-ও আমরা খতিয়ে দেখছি।”
রবিনবাবুর বক্তব্য, “শ্রীমন্ত নামেই কাউকে চিনি না আমি। আমি কোনও ভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। তাই ওই তৃণমূল দফতরেও আমি সাধারণত যাই না। বাবাকে অসম্মান করতেই আমার নাম জড়ানো হয়েছে।” মন্ত্রী হুমায়ুনের দাবি, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার পর থেকেই তাঁকে নানা ভাবে অসম্মান করার চেষ্টা হচ্ছে। এটাও তারই অঙ্গ। তাঁর কথায়, “রেজিনগর উপনির্বাচনে হারার পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে মন্ত্রী করে রেখে দিয়েছেন। তাই ঈর্ষা থেকেই সিপিএম ও কংগ্রেস মিলেমিশে এই ষড়যন্ত্র করেছে।”
কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অধীর চৌধুরীও অবশ্য সরাসরি হুমায়ুনকেই বিঁধেছেন। তাঁর বক্তব্য, “দুর্নীতি করবেন বলেই তো হুমায়ুন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এর আগেও খুনের হুমকি দেওয়া এবং ঘুষ চাওয়ার আরও অভিযোগ রয়েছে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী যদিও চোখে কালো কাপড় পরে বসে রয়েছেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের দাবি, গোটা জেলা জুড়েই শাসক দল তৃণমূল নানা দুর্নীতি করছে। এই ঘটনাও তারই উদাহরণ।
আজ, শনিবার সিভিক পুলিশ পদে ওই নিয়োগের ইন্টারভিউ রয়েছে বহরমপুরে। |
|
|
|
|
|