সপ্তাহের ফি মঙ্গলবার ভাগীরথীর পূবর্পাড়ে বসে বেলডাঙা পশুহাট। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। আগের দিনেই ব্যবসায়ীরা হাজির হন বেলডাঙায়। রাতটুকু কোনও হোটেলে কাটিয়ে পরদিন সাতসকালেই শুরু হয় বিকিকিনি। এক দিনেই কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা চলে এই হাটে। এই হাট ভবিষ্যতে বেলডাঙা ও আশপাশ এলাকার অর্থনীতি বদলে দিতে পারে, এই মত রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর।
নানা সমস্যার মধ্যে তা কি সম্ভব। আর্থিক সম্ভবনাময় এই পশুহাট পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে। হাটের অবস্থান পুরসভা নাকি পঞ্চায়েত এলাকায় তা নিয়েই রয়েছে বিরোধ। তাই হাটের সংস্কার নিয়ে পুরসভা ও স্থানীয় পঞ্চায়েত উদাসীন। উভয়েই নিজের ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে হাত ধুয়ে বসে রয়েছে। হাটের সঠিক আয়তনও অজানা প্রশাসনের। এলাকার আনাচে কানাচে এ নিয়ে চলে রসিকতাও। এত অবহেলার মধ্যে সত্যিই কি এলাকার অর্থনীতি বদলাতে পারবে এই হাট।? সেটাই দেখার। বেলডাঙার বড়ুয়া মোড় লাগোয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশের ওই হাটে মূলত নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর ২৪ পরগনার ব্যবসায়ীরা আসেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জামাকাপড়ের কেনাবেচা পাইকারি ও খুচরো কেনাবেচা সাঙ্গ হলেই শুরু হয় পশুহাট। ছাগল, গরু ও মোষের কেনাবেচায় জমে ওঠে হাট। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দেশি, জার্সি, হলেস্টিয়ান, গির, মুন্ডি প্রভাতি প্রজাতির গরু রমরমিয়ে বিক্রি হয় হাটে। দুধ দেওয়ার পরিমানের ওপর চড়ে গাইগরুর দাম। ভালো জাতের একটি গরুই বিকোয় ১৮-২০ হাজার টাকায়। এক জোড়া মোষ বিক্রি হয় প্রায় ৬০-৮০ হাজার টাকায়। বলদের জোড়া ৩০-৪০ হাজার। কালো দেশি ছাগলের চাহিদা বেশ ভালো। তা ছাড়া হাটের এক প্রান্তে প্রাত্যহিক সব্জির পাইকারি কেনাবেচাও চলে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এত গুরুত্বপূর্ণ হাটের প্রতি প্রশাসনের কোনও নজরই নেই। হাটের নেই কোনও আচ্ছাদন। তাই প্রকৃতি বিরুপ হলেই মাথায় ওঠে বেচাকেনা। মালপত্র সামলাতে শশব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। নিকাশি নালাও অনুপস্থিত। এক পশলা বৃষ্টিতেই পুরো এলাকা সোঁতার আকার নেয়। হাট বসতে পারে না নির্দিষ্ট স্থানে। তখন হাট চলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ ধারে। তৈরি হয় যানজট। বড়ুয়া মোড় থেকে থানা পর্যন্ত মাত্র কয়েকশো মিটার পথ পেরোতেই লেগে যায় পাক্কা আধ ঘণ্টা।
নিকাশি ব্যবস্থা নেই কেন? বেলডাঙা পুরসভার পুরপ্রধান কংগ্রেসের অনুপমা সরকার বলেন, “ওই হাটের সংস্কার আমরাও চাই। কিন্তু পুরসভা হাট থেকে কোনও কর পায় না। আদালতের দ্বারস্থ হয়েও কাজের কাজ কিছু হয়নি।”
দেবকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের শেখ শাহনওয়াজ বলেন, “নথি অনুসারে ওই হাটের জমি রয়েছে ‘দেবকুণ্ডু এস্টেট’-এর নামে। ফলে আমরাই ওই জমির ট্যাক্স গ্রহণ করি।” তাহলে হাটের দশা ফেরে না কেনো? প্রধানের বক্তব্য, “জাতীয় সড়ক সম্প্রসারনের জন্য হাটের কিছু অংশ অধিগ্রহনের নোটিশ এসেছে। ওই পর্ব সাঙ্গ হলেই আমরা হাটের পরিকাঠামোর কাজে হাত দেব।” পুরপ্রধান অবশ্য চান এই পশুহাটকে অধীগ্রহন করে নিজেদের হেফাজতে আনতে। পুরপ্রধান অনুপমাদেবী বলেন, “হাটের উপর ৩০টির বেশি পরিবার চলে। আমার চাই ওঁদের ক্ষতিপূরন দিয়ে হাটকে নিজেদের কব্জায় আনতে। তারপর হাটতে ঢেলে সাজাতে চাই আমরা। এ জন্য আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছি আমরা।” হাট মালিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইকবাল রশিদ বলেন, “ওই জমিই অনেক পরিবারের এক মাত্র সহায়। তাদের ঠিক মতো মূল্য দিলে জমি নিশ্চয় হস্তান্তর হতে পারে।” স্বত্ত্ব নিয়ে এই দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে কবে হাল ফিরবে হাটের? |