সম্পাদকীয় ১...
প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মালবিকা সরকার পশ্চিমবঙ্গবাসীকে আশ্চর্য করিলেন। তাঁহার প্রতিষ্ঠানের উপর রাজনৈতিক হামলার খানিক পরই শোনা গেল তাঁহার স্থির কণ্ঠস্বর, স্পষ্ট ধিক্কারবাক্য। যে প্রতিষ্ঠানের ভার তাঁহার উপর ন্যস্ত, তাহার সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রশ্নে তিনি যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, রাজ্যবাসী তাহা চর্মচোখে প্রত্যক্ষ করিলেন। এবং বিস্মিত হইলেন। বিস্ময়ের কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক শীর্ষকর্তারা সত্যই রাজনীতির স্বার্থের উপরে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে স্থান দিতে পারেন, আর সব ভুলিয়া নিজ প্রতিষ্ঠানকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিতে পারেন, এমন দৃষ্টান্ত তাঁহাদের অভিজ্ঞতায় সুলভ নহে। উপাচার্যের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও শিক্ষকদেরও গলা মিলাইতে দেখিয়া কেহ ভাবিতেই পারেন তাঁহারা রাজনৈতিক অভিসন্ধিপূর্ণ, রাজ্যবাসী কিন্তু অন্য সিদ্ধান্ত করিবেন। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এই সম্মেলক পদক্ষেপ একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা বলিয়া সাব্যস্ত করিবেন। এই তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের ছত্রছায়াতেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় বিরল উৎকর্ষ-পথের পথিক হইয়াছে, উপাচার্য, আধিকারিক ও অধ্যাপকরা সেই যাত্রাপথের কাণ্ডারি হইয়াছেন: ইহা মনে রাখিলে বোঝা যায়, এই স্পষ্টবাদিতা সহজসাধ্য ছিল না। স্পষ্টবাদিতার ফলও মন্দ হয় নাই। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী উপাচার্যের সহিত আলোচনা করিয়া সংকটের মীমাংসা খুঁজিতেছেন। যে পশ্চিমবঙ্গ কর্তাভজা প্রজাতির নেতৃত্ব ও বন্ধ্যা প্রজাতির প্রশাসন দেখিতে দেখিতে ক্লান্ত ধ্বস্ত ত্রস্ত, তাহার নিকট এই দৃষ্টান্ত বৈপ্লবিক বলিলে অত্যুক্তি হয় না।
প্রতিষ্ঠান, বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির যে সামাজিক অঙ্গনে একটি গুরুতর ভূমিকা রহিয়াছে, সেখানে কর্মরত কিংবা পাঠরত মানুষগুলির ভালমন্দের দায় গ্রহণের একটি কর্তব্য রহিয়াছে, গত কয়েক দশকে এ রাজ্য তাহা অনেকটাই বিস্মৃত হইয়াছে। প্রতিষ্ঠানগুলির অস্তিত্ব এখানে সম্পূর্ণ উপগ্রহসদৃশ, কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাচারী হিসাবেই তাহারা কার্যনির্বাহী। কোন ঘটনা কী ভাবে ঘটিবে, এবং কোন ঘটনার কী ব্যাখ্যা কিংবা প্রতিক্রিয়া হইবে, তাহা কখনওই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে নির্ধারিত হয় না, রাজনৈতিক হিসাব দ্বারা চালিত হয়। রাজনৈতিক দল ও নেতারাই এই বিশদ কু-বন্দোবস্তের জন্য দায়ী, সাধারণত ইহাই শোনা যায়। শোনা যায় না অন্য দিকটির কথা: প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বভার যাঁহাদের উপর থাকে, তাঁহাদের কথা। নেতারা না হয় প্রভাবিত করেন: কিন্তু তাঁহারা কেন প্রভাবিত হন? রাজনৈতিক দল না হয় চোখ রাঙায়: তাঁহারা কেন প্রতিবাদ করেন না? কেন আগাইয়া আসিয়া বলেন না: ইহা আমাদের প্রতিষ্ঠান, ইহার বিষয়ে আমরাই সিদ্ধান্ত লইব? প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ আজ যাহা করিতেছে, কেন গত চার দশকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তেমন একটি আত্মমর্যাদাময় স্বকণ্ঠ শোনাইতে পারে নাই? যখন কোনও দলের গুন্ডাগিরির প্রাবল্যে দিনের পর দিন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢুকিতে পর্যন্ত দেওয়া হয় নাই, তখন কী করিতেছিলেন সেখানকার আধিকারিকরা, শিক্ষকরা, ছাত্ররা? কেন তাঁহারা বলেন নাই যে, ইনি আমাদের উপাচার্য, আমরাই ইঁহার প্রবেশের বন্দোবস্ত করিব? বলেন নাই কি রাজনীতির ভয়ে? না রাজনীতির প্রতি আনুগত্যে? না কি, রাজনীতির অর্থ ইহাই, এই ভ্রান্তদর্শন হইতে? যে কারণটিই হউক, এই নৈঃশব্দ্য ও নৈষ্কর্ম দিয়াই তাঁহারা রাজ্যের সর্বনাশ নিশ্চিত করিয়াছেন। এ রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি যে আজ রাজনীতিপঙ্কে আশাহীন ভাবে নিমজ্জিত, তাহার জন্য কেবল রাজনীতিকরাই দায়ী নন, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরের এই নাগরিকরাও সমপরিমাণে দায়ী।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় যে উৎকর্ষের অভিমুখে যাত্রা করিতেছে, সেই লক্ষ্য পূরণ হইবে কি না, সময়ই তাহা বলিবে। কিন্তু তাহার এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপ স্মরণ করাইয়া দিল একটি অত্যন্ত মৌলিক সত্য। তাহা হইল: উৎকর্ষের প্রাথমিক শর্ত সর্বদাই আত্মমর্যাদা এবং নির্ভীকতা। নিজেকে কোনও মূল্যে না বিক্রয় করিয়া প্রতিষ্ঠান যদি স্বমহিমায় স্থিত হয়, নিজ স্বার্থরক্ষায় অবিচলিত হয়, একমাত্র তবেই তাহার পক্ষে উৎকর্ষসাধনার স্বপ্ন দেখা সম্ভব।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.