প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা প্রায় তিনতলা বাড়ির সমান। রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি। আছে লিফটও। সেই লিফট অবশ্য প্রতিবন্ধীদের জন্য। কিন্তু তাতে কী! মেট্রো আসুক বা না আসুক, লিফট উপরে উঠে যাচ্ছে। তার পরে আর নামছে না। আবার উপর থেকে নামতে শুরু করলে নীচে ফিরছে না। মাঝপথে থেমে রয়েছে।
ভৌতিক ব্যাপার নয়। যাত্রীদেরই একাংশের এমন সব কাণ্ডকারখানা মেট্রো কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেট্রো সূত্রে খবর, এই উপদ্রব ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ এখন লিফটের বাইরে আরপিএফ প্রহরার কথা ভাবছেন। পাশাপাশি, মেট্রোর ভিতরে সিসিটিভির নজরদারি ক্যামেরা লাগানোর কথাও ভাবা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, লিফটম্যান থাকে না কেন? সে ব্যাপারে মেট্রোর বক্তব্য, ‘প্রতিবন্ধীরা বেশি মাত্রার প্রতিবন্ধী হলে তাঁদের সঙ্গে এক জন সহযোগী থাকবেন। ফলে তিনিই প্রয়োজনে বোতাম টিপে দিতে পারবেন। আর কম মাত্রার প্রতিবন্ধী নিজেই বোতাম টিপে লিফট চালাতে পারবেন। তাই লিফটম্যানের পদ এ ক্ষেত্রে নেই।’
সুড়ঙ্গের বাইরে কলকাতা মেট্রোর যে ক’টি স্টেশন তৈরি হয়েছে, সব ক’টিরই প্ল্যাটফর্ম উঁচুতে হওয়ায় সেগুলিতে চলন্ত সিঁড়ির পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের জন্য লিফট-এর ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ। আপ ও ডাউন প্ল্যাটফর্মে একটি করে লিফট রয়েছে। কিন্তু মেট্রোর অভিযোগ, লিফটে যাঁরা উঠছেন তাঁরা কেউই প্রতিবন্ধী নন। সাধারণ মানুষজন। অনেক সময়ে নিভৃতির খোঁজে প্রেমিক-প্রেমিকাও লিফটে উঠে পড়ে কিছুক্ষণ ধরে যাওয়া-আসা করছেন। যার জেরে প্রতিবন্ধীরা অনেক সময়েই লিফট পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, মাঝেমধ্যেই লিফট মাঝপথে থামিয়ে রাখারও চেষ্টা করা হচ্ছে। তাতে বিপদও ঘটছে।
বুধবার রাতে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে মাস্টারদা সূর্য সেন স্টেশনে। পৌনে ৮টা নাগাদ আচমকাই স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে লিফটের সতর্ক অ্যালার্ম বেজে ওঠে। বাইরেও বাজতে শুরু করে বিপদ ঘণ্টি। বোঝা যায়, লিফট আটকে গিয়েছে। লিফটে প্রতিবন্ধীরা রয়েছেন, ভেবে উত্তেজনাও বেড়ে যায়। পুরসভা থেকে দমকল সবাইকেই খবর দেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে মেট্রো। এ ভাবেই কেটে যায় প্রায় ২০ মিনিট। স্টেশন ম্যানেজার জানান, ওই সময়ে তাঁর ঘর থেকেই লিফটে থাকা সাউন্ড সিস্টেমে আটকে পড়া আরোহীদের আশ্বস্ত করা হয়। তার পরে মেট্রোরই ইঞ্জিনিয়ারেরা লিফটের দরজার লক ভেঙে যাত্রীদের উদ্ধার করেন।
মেট্রো সূত্রে জানানো হয়েছে, উদ্ধারের সময়ে দেখা যায়, ১০ জনের বহনক্ষমতার লিফটে উঠেছেন প্রায় ১৪ জন। এবং যাঁরা বেরিয়ে আসছেন, তাঁরা কেউই প্রতিবন্ধী নন। সকলের বয়সই ১৮ থেকে ২০-র মধ্যে। কিন্তু সবাই নিজেদের মেট্রোর যাত্রী বলেই দাবি করেছেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে মেট্রোর দাবি, ওই লিফটটি আটকে যায়নি। সম্ভবত উল্টোপাল্টা বোতাম টিপে থামিয়ে ফেলা হয়েছিল। মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “লিফট থেমে যাওয়ার পরেও আটকে পড়া ওই যাত্রীদের ভ্রূক্ষেপ হয়নি। উদ্ধারকাজ চলাকালীন আটকে পড়া যুবকদের কয়েক জনকে সাহায্য করতে বলা হচ্ছিল। কিন্তু তাঁরা কর্ণপাতও করেননি।” |