ওভারলোডের কারণে শর্ট সার্কিট হয়ে গিয়ে যাতে আগুন লাগার ঘটনা না ঘটে, তার জন্য পুর-বাজারগুলির বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে ‘সার্কিট ব্রেকার’ লাগানোর কাজ শুরু করেছে সিইএসসি। কোনও কারণে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ টানা হলে ওই সার্কিট ব্রেকারের মাধ্যমে খুব সহজেই বাজারের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যাবে। এর ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে বলে মনে করছেন সিইএসসি-র কর্তারা।
সিইএসসি-র এক কর্তা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ আগুন লাগার ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় গ্রাহকদের দিক থেকেই কোনও না কোনও অসতর্কতার কারণে দুঘর্টনা ঘটে। তিনি বলেন, “শহরের বহুতল বাড়িগুলির পাশাপাশি পুরসভা বা বেসরকারি বাজারগুলিতেও নিয়মিত ওভারলোড হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সে কারণে প্রাথমিক ধাপে পুর-বাজারগুলির বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে সার্কিট ব্রেকার লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
সম্প্রতি শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনায় মৃত্যু হয় ২১ জনের। তার পরেই শহরের অন্যান্য বাজারের হাল কেমন, তা জানতে সমীক্ষার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার নির্দেশ মতো শহরের বাজারগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে সুনির্দিষ্ট একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। এই কাজে পুরসভার পাশাপাশি সিইএসসি কর্তৃপক্ষও সামিল হয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে দমকলের ছাড়পত্র ছাড়াই শহরে রমরমিয়ে চলছে ২৪০টি বাজার। অন্তত ১৪৫টি বাজারে ইলেকট্রিক ওয়্যারিংয়ের অবস্থা তথৈবচ। এ ছাড়া অন্যান্য গাফলতি তো আছেই। ওই রিপোর্টটি ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু তার মধ্যেই সিইএসসি কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে কিছু ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। যার মধ্যে সার্কিট ব্রেকার অন্যতম।
সিইএসসি ঠিক করেছে শুধু সার্কিট ব্রেকারই নয়, পুর-বাজারগুলির মধ্যে তাদের নিজস্ব ওয়্যারিং লাইনও বদলে ফেলা হবে। বসানো হবে নতুন আরও একটি করে কেব্ল লাইন। যাতে চাহিদা বাড়লে একটি লাইনে লোড না থেকে দু’টি কেব্লের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। সংস্থাটির দাবি, বাজারগুলির মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় তাদের দিক থেকে পরিকাঠামোগত কোনও ত্রুটি যাতে না থাকে, তার জন্য যেখানে যা করার দরকার তা করা হবে। বাজারের গ্রাহকেরা সচেতন না হলে তাদের কিছুই করার নেই।
বড়-ছোট মিলিয়ে শহরের মধ্যে এখন মোট বাজারের সংখ্যা ৩৫৮। তার মধ্যে কলকাতা পুরসভার নিজস্ব বাজার ৪৬টি। বাকি বাজার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলে। পুরসভার বাজার দফতরের এক অফিসারই জানাচ্ছেন, “সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে অধিকাংশ বাজারের ভিতরে ওয়্যারিং বেশ খারাপ। যেখান-সেখান থেকে লাইন টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোনও নিয়ম মানা হয় না। ওই অফিসার জানান, ল্যান্সডাউন বাজার পুরসভার নিজস্ব বাজার। আর সেই বাজারেই দু’টি ইলেকট্রিক মিটার ওভারলোডে চলে। যা থেকে যে কোনও সময়ে শর্ট সার্কিট হতে পারে।
সিইএসসি-র এক কর্তা বলেন, “প্রথমে পুর-বাজারগুলিতে সার্কিট ব্রেকার বা অন্যান্য পরিকাঠামোগত পরিবর্তন করা হবে। পরে বেসেরকারি বাজারগুলিতেও হাত দেওয়া হবে।” |