বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে দৈনিক মজুরি সংক্রান্ত নানা অভিযোগ তুলে সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহের পাম্প হাউস বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখালেন ঠিকা শ্রমিকেরা। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জল সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে, এর জেরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হয়নি।
নিতুড়িয়া ব্লকের রায়বাঁধ পঞ্চায়েতের ভিরিঙ্গি গ্রামে দামোদর নদের ইনটেক পাম্প হাউস থেকে জল সরবরাহ হয় সাঁওতালডিহি বিদ্যুৎকেন্দ্রে। পাম্প হাউস পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি ঠিকা সংস্থা। এ দিন ওই গ্রামে জনা আঠেরো ঠিকা শ্রমিক বিক্ষোভ দেখান। তৃণমূল সমর্থক হিসাবে এলাকায় পরিচিত হলেও শ্রমিকদের দাবি, এই আন্দোলনের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে এ দিন ভিরিঙ্গি গ্রামে যান রঘুনাথপুর ২ ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি স্বপন মেহেতা। বিদ্যুৎকেন্দ্রর আধিকারিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনার সময় তিনিও ছিলেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পাম্প হাউস তৈরি হওয়ার সময় থেকে দীর্ঘ দশ বছর তাঁরা এখানে কাজ করছেন। বর্তমানে পাম্প হাউস পরিচালনার বরাত প্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাটি তাঁদের নিয়মিত বেতন দিচ্ছে না। শ্রমিক ধনঞ্জয় ভান্ডারী, রোহিত ভান্ডারী, বিশ্বনাথ ভান্ডারীদের ক্ষোভ, “ঠিকা সংস্থা আমাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা করেনি। সরকার নির্ধারিত হারে দৈনিক মজুরি দেয় না। বেতনের সঙ্গে দেওয়া হয় না ‘পে-স্লিপ’। নেই চিকিৎসা সংক্রান্ত ভাতাও।” দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে প্রশাসনকে সমস্যার কথা জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। তাই বাধ্য হয়ে পাম্প হাউস বন্ধ করে আন্দোলন করেছেন তাঁরা।
জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে উৎপাদনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কায় এ দিন ভিড়িঙ্গি গ্রামে গিয়ে দ্রুত শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই আধিকারিক সমীর চক্রবর্তী ও চিন্ময় গোস্বামী। সঙ্গে ছিলেন বেসরকারি সংস্থাটির মালিক, সাঁওতালডিহির বাসিন্দা দীপক স রকার। বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রের খবর, শ্রমিকদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে দেখে সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ওই দুই আধিকারিক। চলতি মাঝামাঝি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের সিদ্ধান্তও হয়েছে। শ্রমিকরাও জানিয়েছেন, আলোচনায় তাঁরা সন্তুষ্ট। তাই এ দিন বিকেল থেকে পাম্প হাউসের পাঁচটি পাম্পই চালানোর কাজে আর বাধা দেওয়া হয়নি।
বিক্ষোভকারীদের অবশ্য তাঁর সংস্থার শ্রমিক হিসাবেই মানতে চাননি দীপকবাবু। তিনি বলেন, “কাজের ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী পাম্প হাউস পরিচালনার কাজে ২৪ জন শ্রমিক কাজ করবেন। বাস্তবে বিভিন্ন চাপে পড়ে অনেক বেশি শ্রমিক রাখতে বাধ্য হয়েছি। সকলকে সমান সুবিধা দেওয়া কখনওই সম্ভব নয়।” তাঁর আরও দাবি, “যে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে পাম্প হাউস বন্ধ করেছিলেন, তাঁদের প্রয়োজন ভিত্তিক কাজ দেওয়া হয়। ফলে মাসে যত দিন কাজ করানো হয়, তাঁরা তত দিনের মজুরি সরকার নির্ধারিত হারেই পান। তাঁরা সংস্থার স্থায়ী ঠিকা শ্রমিক না হওয়ায় প্রভিডেন্ট ফান্ড-সহ অন্য সুযোগ দেওয়ার অবকাশ নেই আমাদের।” |