সম্পাদক সমীপেষু...
দুই মন্তব্যের তুলনা চলিতে পারে না
আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় (‘অরণ্যে রোদন’, ৬-৪) পড়িয়া সত্যই স্তম্ভিত হইয়া গিয়াছি। এক জন ব্যবহারজীবী হিসাবে সওয়াল করিবার সময়ে তথাকথিত ‘অসংবেদী’ বক্তব্যের (যদি বলিয়াই থাকি) সহিত বর্তমান মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমমনস্কতা বা মানুষের মৃত্যু সম্পর্কে সমান উদাসীনতার উদাহরণ হিসাবে দেখাইবার এই চেষ্টা শুধু অবিশ্বাস্য প্রয়াস নহে, তাহাতে সত্যের অপলাপেরও চেষ্টা করা হইয়াছে।
আমার ‘উক্তি’ প্রায় ২৯ বৎসর পূর্বে একটি মামলায় করা হইয়াছিল বলিয়া আপনারা উল্লেখ করিয়াছেন। আমার ধারণা, সেই মামলা সম্বন্ধে বর্তমান প্রজন্ম বিশেষ অবগত নহেন। তাহার বিবরণও আপনারা দেন নাই। প্রায় তিরিশ বৎসর পূর্বে বামফ্রন্টের শাসনকালে সঞ্জীব ও তীর্থঙ্কর নামক দুই তরুণের অস্বাভাবিক ও মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। খুবই স্বাভাবিক ভাবে তাহা জনসাধারণকে বিশেষ ভাবে আলোড়িত করিয়াছিল এবং তাহার কারণ সম্বন্ধে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন মত পোষণ ও প্রকাশ করিয়াছিলেন। সঙ্গত কারণে বিভিন্ন সংবাদপত্র, যাহার মধ্যে আপনার সংবাদপত্র মুখ্য ভূমিকা লইয়াছিল, বিশেষ প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশ করিতেন। সেই সময়ে যে বিষয় বিশেষ ভাবে আলোচিত হইয়াছিল যে, সেই অস্বাভাবিক ও মর্মান্তিক মৃত্যুর তদন্ত কাহারা করিবে রাজ্য সরকারের পুলিশ না কেন্দ্রীয় সরকারের সিবিআই? আপনারাও অনেকে মত প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, সত্য উদ্ঘাটনের জন্য রাজ্য সরকারের পুলিশের স্থানে কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর তদন্তের ভার দেওয়া প্রয়োজন।
তিন দশক আগে। আনন্দবাজার পত্রিকা, ৮ জুন, ১৯৮৩
তদানীন্তন রাজ্য সরকারের বক্তব্য ছিল যে, রাজ্য সরকারের পুলিশ সেই অস্বাভাবিক মৃত্যু দুটির সঠিক ভাবেই তদন্ত করিতেছে এবং তাহাতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপের কোনও প্রয়োজন নাই। ইহা স্মরণ করা বিশেষ প্রয়োজন যে, সেই দুটি মর্মান্তিক মৃত্যু সম্বন্ধে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কোনও মন্ত্রী বা আধিকারিক তদন্ত চলাকালে কোনও মন্তব্য বা মতামত দেন নাই, যাহা তদন্তকে প্রভাবিত করিতে পারিত যাহা সাম্প্রতিক ঘটনাবলির সম্পূর্ণ বিপরীত।
কে তদন্ত করিবে, রাজ্য সরকারের পুলিশ না কেন্দ্রীয় পুলিশ, এই বিতর্ক শেষ পর্যন্ত বিচারালয়ে গিয়া পৌঁছয়। সেই মামলা রুজু করেন আপনাদেরই সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকা। স্বভাবতই ওই মামলার সওয়াল ইত্যাদি লইয়া রোজই আনন্দবাজার পত্রিকা বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করিত (প্রসঙ্গত, মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট আনন্দবাজারের সাংবাদিককে নির্দেশ দিয়াছিলেন যেন সঠিক সংবাদ প্রকাশিত হয়)।
সুপ্রিম কোর্টের কাছে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, ওই অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্বন্ধে সরকারের পুলিশ সঠিক ভাবে তদন্ত করিতেছে কি না এবং রাজ্য সরকারের পুলিশের জায়গায় সিবিআই-এর উপর সেই তদন্তভার ন্যস্ত করা প্রয়োজন কি না।
তদানীন্তন এক জন সরকারি আইনজীবী হিসাবে আমার উপর রাজ্য সরকারের পক্ষে মামলা পরিচালনা করিবার দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছিল। রাজ্য সরকারের পক্ষে সেই মামলায় আমার সওয়ালের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল যে, রাজ্যের পুলিশ বিভাগ সঠিক ভাবেই তদন্ত করিতেছে, তাহাতে কোনও অসম্পূর্ণতা ছিল না এবং সরকার বা পুলিশের পক্ষ হইতে কোনও অন্যায় বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয় নাই। সুতরাং, রাজ্য সরকারের পুলিশের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের সিবিআই-কে দিবার কোনও প্রয়োজন নাই।
সুপ্রিম কোর্টের সেই মামলা সম্বন্ধে যাঁহারা সঠিক তথ্য অবগত নন, তাঁহাদের জ্ঞাতার্থে জানাই, সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের পক্ষে রায় দেন যে, রাজ্য সরকারের পুলিশ সঠিক ভাবেই তদন্ত করিতেছে ও তাহাতে কোনও ভুল বা অপদার্থতা ছিল না এবং মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা খারিজ করিয়া দেন, এই বলিয়া যে, সিবিআই দ্বারা তদন্তের কোনও প্রয়োজন নাই।
পাঠকমণ্ডলী নিশ্চয় উপলব্ধি করিবেন, রাজ্য সরকারের পক্ষে আমার সওয়ালের কোনও অংশেই সেই মর্মান্তিক মৃত্যুর গুরুত্বকে লঘু করা হয়নি। ইহা আমার সওয়াল ছিল যে, দুর্ভাগ্যক্রমেই খুন হওয়ার বিভিন্ন ঘটনা প্রায়ই ঘটে, তাহা অতীব দুঃখজনক এবং বিতর্কমূলক হইলেও তাহার তদন্ত রাজ্য পুলিশই করে। সুতরাং, রাজ্য পুলিশের কোনও গাফিলতি এই তদন্তে প্রমাণ না হইলে পুলিশই সত্য উদ্ঘাটিত করিতে পারিবে, যতই সে মৃত্যু সম্বন্ধে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করা হউক না কেন।
আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে, প্রায় তিরিশ বৎসর পূর্বে কোর্টে এক আইনজীবীর প্রতিপাদ্য বিষয়ের সওয়ালের এক অংশকে লইয়া সম্পূর্ণ বিপরীত পরিস্থিতিতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করিবার প্রচেষ্টা করিয়াছেন, যতই আপনাদের উদ্দেশ্য সাধু হোক না কেন। কারণ, ইহার দ্বারা শুধু এক জন ব্যবহারজীবীকে কালিমালিপ্ত করিবার বিস্ময়কর চেষ্টা করিয়াছেন তাহা নয়, তৎসহিত তদানীন্তন সরকারের সহিত অপ্রাসঙ্গিক তুলনা করিয়াছেন। কোনও বিচারের সময় কোনও ব্যবহারজীবীর সওয়ালের সহিত কোনও মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ও মতামতের তুলনা হইতে পারে না।
বর্তমানে যে ঘটনার আপনারা উল্লেখ করিয়াছেন, তাহার সহিত তিরিশ বৎসরের পুরাতন মর্মান্তিক ঘটনার কোনও প্রাসঙ্গিকতা নাই। তদানীন্তন সরকারের মন্ত্রী বা প্রতিনিধি তাহাকে ‘ছোট’ বা ‘তুচ্ছ’ ঘটনা বা তাহার জন্য তদন্তের প্রয়োজন নাই বা তাহা এক দুর্ঘটনা ছিল বলিয়া মন্তব্য করে নাই, বরং সেই সরকার সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ে প্রমাণ করিয়াছিল, রাজ্য সরকারের পুলিশ সঠিক ভাবে তদন্ত করিতেছে ও করিয়াছে।
একটি বিচারালয়ে এই সওয়ালের তথাকথিত বক্তব্যের সহিত বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত যিনি, তাঁহার বক্তব্যের (যাহা সঠিক তদন্তের বাধা হইবে বলিয়া আপনারাও মতামত দিয়াছেন) তুলনা করিয়া আপনারা যে ভাবে তাহাদের মধ্যে এক সমমনস্কতার ‘প্রমাণ’ দিয়াছেন, তাহা দায়িত্বপূর্ণ আচরণের পরিপন্থী এবং তাহার আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
তিস্তা ফিরে আসুক
সোজা কথাটি এত দিন কেউ বলছিলেন না, যা দেবেশ রায় বললেন। (‘তিস্তাকে তিস্তায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক’, ১৯-৩)) আমি নিজে খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও দেখেছি, উত্তরবঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে কী বিচিত্র ভাবে চলছে অর্থ লুণ্ঠন! তিস্তা নদীটি নিজেই তো বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে, অথচ সেই নদীকেই অন্য জায়গায় নালা কেটে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো কেবল অর্থহীন নয়, রীতিমত অবৈজ্ঞানিক। আসলে তিস্তা নদীর জল যে-জায়গা থেকে নালা কেটে বাংলাদেশে পাঠাবার কথা, সেখান থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে তিস্তা নিজস্ব গতিতেই বাংলাদেশে পৌঁছে যাচ্ছে। তা হলে বাংলাদেশ তিস্তার জল থেকে বঞ্চিত হল কোথায়? গাজলডোবা থেকে নালা কেটে বাংলাদেশকে জল পৌঁছে দেওয়ার যে-পরিকল্পনা অপ্রাকৃতিক উপায়ে ভাবা হয়েছে, তার প্রয়োজনই বা কেন থাকবে, যখন একই নদী জলপাইগুড়ির অপর অংশ বোয়ালমারি নন্দনপুর এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.