সম্পাদকীয় ১...
অবাঞ্ছিত রাজনীতি
ঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত না-হইলে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামোন্নয়ন বাবদ বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অনুদানের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিবে বলিয়াছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। তাঁহার এই ঘোষণা কার্যত হুমকি সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। বস্তুত, অনৈতিক, অযৌক্তিক এবং অগণতান্ত্রিকও। গ্রামোন্নয়নে কেন্দ্রীয় অনুদানের বরাদ্দের সহিত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সম্পর্ক থাকিবে কেন? এ কথা সত্য যে পঞ্চায়েতের হাত দিয়াই ওই তহবিল খরচ হয় এবং সরাসরি পঞ্চায়েতের হাতেই তহবিলের টাকাও জমা পড়ে। কিন্তু তাহার অর্থ এই নয় যে, একশো দিনের কাজের প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পে দেয় কেন্দ্রীয় অর্থের বরাদ্দ পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়া বা না-হওয়ার উপর নির্ভর করে। যদি এ ক্ষেত্রে কোনও আইনি সমস্যা থাকে, জনস্বার্থেই তাহার নিরসন করিতে হইবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কাজটি সরকারি স্তরের, জনসভার মঞ্চ হইতে হুমকি দেওয়া অত্যন্ত অশোভন। নৈতিক ভাবে এই ধরনের প্রকল্পের টাকা যে কোনও পরিস্থিতিতেই বরাদ্দ করিতে হইবে, কারণ ইহার লক্ষ্য হতদরিদ্র শ্রেণির মানুষ। লক্ষণীয়, অন্ধ্রপ্রদেশে প্রায় এক দশক যাবৎ আইনি জটিলতার কারণে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইতে পারে নাই। তথাপি গ্রামোন্নয়নের বিবিধ খাতে কেন্দ্রীয় অর্থ দিব্য রাজ্যে আসিতেছে। প্রসঙ্গত জয়রাম রমেশ সেই রাজ্য হইতেই নির্বাচিত সাংসদ।
দৃশ্যত, জয়রাম রমেশ রাজনীতিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। শিলিগুড়ির জনসভায় বক্তৃতা করিতে গিয়া কংগ্রেসের এই রাজনীতিক সম্ভবত তৃণমূল কংগ্রেসের সহিত মনান্তরের সাম্প্রতিক পটভূমিকেই অধিকতর গুরুত্ব দিয়া ফেলিয়াছেন। বিস্মৃত হইয়াছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে নিজের ভূমিকাটি। যদি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হিসাবে তিনি কথা বলিতেন, তবে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতগুলিকে তাহাদের প্রাপ্য হইতে বঞ্চিত করার হুমকি তাঁহার মুখে উচ্চারিত হইত না। তিনিই কিন্তু দার্জিলিঙে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার স্বতন্ত্র রাজ্য কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার ‘রাজনৈতিক দাবি’ দূরে সরাইয়া রাখিয়া উন্নয়নে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান। উন্নয়ন যে রাজনীতির কারণে ব্যাহত হইতেছে, তাহাও বলেন। তাহা হইলে রাজ্যের পঞ্চায়েত বিষয়ে তাঁহার এই নিরঙ্কুশ মন্তব্য কেন? এ ব্যাপারে অবশ্য জয়রাম একা নন, এ দেশে ইহাই রাজনীতিকদের রেওয়াজ। প্রশাসনের মঞ্চকেও তাঁহারা প্রায়শ রাজনীতির কাজে ব্যবহার করিয়া ফেলেন। কিংবা দলীয় মঞ্চ হইতে এক রকম, আর প্রশাসনের মঞ্চ হইতে আর এক রকম, বস্তুত সম্পূর্ণ বিপরীত রকম বক্তব্য ব্যক্ত করিয়া থাকেন। সমর্থক-অনুগামীরা এবং জনসাধারণও নেতা-মন্ত্রীদের এ হেন আচরণে যৎপরোনাস্তি বিভ্রান্ত হইয়া পড়েন। একই কণ্ঠে এত সুর শুনিয়া তাঁহারা বুঝিতে পারেন না, কাহার কথা সত্য মন্ত্রী তথা প্রশাসকেরর কথা, না কি রাজনীতিকের কথা।
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথাই ধরা যাক। কিছু কাল আগে রাজ্যপালের একটি মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাইতে গিয়া তিনি তাঁহাকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখাইয়া বসেন, এবং ভবিষ্যতে ‘লাল কার্ড’ দেখাইবারও হুমকি দেন। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান সম্পর্কে এমন কথাবার্তা এক জন মন্ত্রীর পক্ষে শোভন নয়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও তাহার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সম্পর্কেও পঞ্চায়েত মন্ত্রীর বক্তব্য অশ্রদ্ধাসূচক, মর্যাদাহানিকর এবং অবাঞ্ছিত। মন্ত্রিমহোদয় কমিশনারের এক্তিয়ার ও অভিপ্রায় সম্পর্কে বিভিন্ন অযাচিত এবং অযৌক্তিক মন্তব্য করিয়া এ ক্ষেত্রেও কার্যত নিজের সাংবিধানিক এক্তিয়ারই লঙ্ঘন করিয়াছেন। নির্বাচন কমিশন ‘আমাদের পয়সায় মামলা’ করিতেছে, মামলা করিয়া ‘রাজ্যের টাকা অপচয়’ করিতেছে, এমন উদ্ভট কথাও তাঁহার মুখে শোনা গিয়াছে। নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মের খরচ তো সরকারকেই বহন করিতে হয়! তাহা না-জানিয়াও কি মন্ত্রী হওয়া যায়? এ প্রসঙ্গে শাসক দলের ‘সর্বভারতীয় সভাপতি’র বক্তব্য আরও বেশি আপত্তিকর, তবে তিনি কেবল দলীয় পদাধিকারী এবং দলীয় মঞ্চেই কথা বলিতেছেন, এই ঢালটুকু ব্যবহার করার সুযোগ তাঁহার আছে। পঞ্চায়েত মন্ত্রীর কিন্তু সেই অবকাশও নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.