ভারত পথিক মোদীর পথে কলকাতা
ই শহরের এক নরেন্দ্রনাথ সে যুগে বেরিয়েছিলেন ভারত পথিক হয়ে। ভারতীয় এক নরেন্দ্র এ যুগে বেরিয়েছেন ভারত পরিক্রমায়। গন্তব্যের পথে তাঁর তরীখানা আজ, মঙ্গলবার থামতে চলেছে এই কলকাতার ঘাটে!
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদী আসছেন কলকাতা সফরে। আসলে এসে গিয়েছেন সোমবার রাতেই। শহরে আজ তাঁর বণিকসভার সঙ্গে মোলাকাত এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি। তবে সবই নেহাত উপলক্ষ। বিজেপি-র মধ্যে আসল বিজেপি-র মুখ হিসেবে নিজেকে পেশ করতে চেয়ে তাঁর যে ভারত যাত্রার বৃহত্তর কর্মসূচি, প্রকৃত পক্ষে তারই একটা বিন্দু হতে চলেছে কলকাতা।
দলের মধ্যে তাঁর অনেক লড়াই। আগামী লোকসভা ভোটে তিনিই বিজেপি-র যোগ্যতম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কি না, তা-ই নিয়ে বিস্তর জল্পনা। একাধারে তাঁকে কখনও লড়তে হচ্ছে নাগপুরের সঙ্ঘ সদরের সঙ্গে। আবার সরাতে হচ্ছে নীতীশ কুমারের কাঁটাও! মোদীকে তুলে ধরা মানে কট্টর হিন্দুত্বের বার্তাই সামনে নিয়ে আসা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে সেই আপসে নারাজ নীতীশেরা। দিল্লির দরবারে তিনি নিজেকে যেই দৃঢ় ভাবে তুলে ধরছেন, কংগ্রেসের দিক থেকে প্রবল আক্রমণ আসছে। কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর সঙ্গেই ভবিষ্যতের ভারতীয় রাজনীতিতে মোদীর লড়াই, এমন ছবিও কল্পনা করে নেওয়া হচ্ছে। তবু নিজের ক্যারিশমাতেই মোদী লড়ছেন যাবতীয় প্রতিকূলতার সঙ্গে।
কলকাতায় এলেন নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাতে বিমানবন্দরে। ছবি: সুদীপ আচার্য।
বস্তুত, জাতীয় রাজনীতির যাঁরা খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের মতে, মোদীর সংগ্রাম অনেকটা ইন্দিরা গাঁধীর মতো। দলের মধ্যে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যে ইন্দিরাকে দাঁড়াতে হয়েছিল। আবার মিল আছে পুরনো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। যুব কংগ্রেসে থেকে এ রাজ্যে সোমেন মিত্রদের দাপটের বিরুদ্ধে যিনি নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য নেত্রী হিসাবে তুলে ধরেছিলেন। মোদীও এখন এই বার্তা নিয়ে ছড়িয়ে পড়ছেন গোটা দেশে যে, তাঁকে অনুসরণ করাই আসল বিজেপি-র পাশে দাঁড়ানো।
সদ্য বিজেপি-র সংসদীয় বোর্ডে তাঁর জন্য নৈবেদ্য সাজানো হয়েছে। সামনে কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচন। দলের সম্ভাব্য বহু প্রার্থীই চাইছেন, তাঁদের কেন্দ্রে মোদীর পা পড়ুক। গুজরাতে বিপুল জয়ে কয়েক মাস আগে চতুর্থ বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। আর তার পর থেকেই মোদীর দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছে বাকি দেশের দিকে। সেই নজর-বলয়েই এ বার ঢুকছে কলকাতা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শহরে অবশ্য মোদীকে নিয়ে বিস্তর হুড়োহুড়ি। রাজ্যের জন্য আর্থিক দাবি আদায়কে গুরুত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা কলকাতা ছেড়েছেন মোদীর পদার্পণের আগেই। মোদীর দল বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব-সহ অনেকেই বলছেন, কৌশলে মোদীকে এড়াতে চেয়েই দিল্লির কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিয়েছেন মমতা। মোদীর দলীয় সংবর্ধনার জন্য নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম না-দেওয়ায় তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অসৌজন্যের অভিযোগও উঠেছে। বিতর্ক যা-ই থাক, নিজের রাজ্যে উন্নয়নের কোন মডেল মেনে চলায় মোদী সফল, তারই কাহিনি আজ তাঁর মুখে শুনতে চায় কলকাতার বণিকমহল। ধর্মতলা এলাকার পাঁচ তারা হোটেলে আজ বণিকসভাগুলির মুখোমুখি হবেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। মধ্যাহ্ন ভোজের পরে কথা বলবেন সাক্ষাৎপ্রার্থী শিল্প ও বণিকমহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। বিকালে মহাজাতি সদনে যাওয়ার কথা বিজেপি-র অনুষ্ঠানে।
মোদীর কথা শুনতে চেয়েও বণিক মহলে হুড়োহুড়ি থাকলেও তাঁর মঞ্চে উঠতে এ রাজ্যের শিল্পপতিদের দ্বিধা ইতিমধ্যেই চর্চার বিষয় হয়েছে। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে থেকে পাছে এ রাজ্যের শাসকদের উষ্মার পাত্র হতে হয়! যে বিষয়টাকে খুঁচিয়ে দিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিনই মন্তব্য করেছেন, “নতুন করে এ রাজ্যে কেউ বিনিয়োগ করতে আসতে চাইছেন না। ইতিমধ্যেই যাঁদের টাকাপয়সা ঢালা হয়ে গিয়েছে, তাঁরা একটু ভয় পাচ্ছেন! কত জন শেষ পর্যন্ত মোদীর অনুষ্ঠানে যাবেন, জানি না। যদিও আমরা গুজরাত মডেলকে অনুকরণযোগ্য বলে মনে করি না।” সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবুর আরও বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদী আসতেই পারেন। কিন্তু ওঁর দল, ওঁদের নীতির ধারাবাহিক বিরোধিতায় আমরা প্রথম সারিতে আছি। অনেকেরই সেই রেকর্ড নেই!”
সূর্যবাবুদের ইঙ্গিত যে বর্তমান শাসকদের দিকে, তাঁদের তরফে কারও মোদীর অনুষ্ঠানে থাকার কথা নয়। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “কেউ এখানে আসতেই পারেন। কারও সঙ্গে দেখাও করতে পারেন। উনি (মোদী) কার সঙ্গে দেখা করবেন বা কথা বলবেন সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত, অধিকার। তবে এ রাজ্যের পরিস্থিতি যে বদলেছে, সেটা ওঁর সফরের পরিকল্পনায় স্পষ্ট।” শিল্প-পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত শিল্পমন্ত্রীর। ব্যক্তিত্ববান কিন্তু বিতর্কিতও বটে। সেই মোদীর সফরের বিরোধিতা করে আজ শহরে বিক্ষোভের কর্মসূচি রয়েছে একাধিক সংগঠনের। তবে রাজ্য বিজেপি-র এক নেতার কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের বদনাম হওয়ার মতো এমন কোনও কাজ আশা করি কেউ করবেন না!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.