দু’দেশের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের মাঝখান থেকে সীমান্তের বেড়া সরিয়ে নিতে এ বার সরাসরি ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানাবেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারির আমন্ত্রণে বুধবার তিনি দিল্লি আসছেন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার বৈঠকে বসবেন তিওয়ারির সঙ্গে। সেখানেই তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে চান বলে শনিবার আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন ইনু।
বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীর কথায়, দু’দেশের বাজার খুলে গেলে বাংলা চলচ্চিত্রের এখনকার রংচটা ছবিটাই বদলে যাবে। যৌথ প্রযোজনায় অনেক সিনেমা তৈরি হবে, অনেক বড় বাজেটের সিনেমা তৈরি হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে।
|
হাসানুল হক ইনু |
দু’দেশের অভিনেতা-কলাকুশলীরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে এ বিষয়ে এগোচ্ছেন। টালিগঞ্জের অভিনেতা প্রসেনজিত, পরিচালক গৌতম ঘোষ, ঋতুপর্ণ ঘোষেরা বাংলাদেশের শিল্পী-কলাকুশলীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন। প্রযোজকরাও উৎসাহ দেখাচ্ছেন। ভারতের অন্যতম প্রধান বণিকসভা ফিকি-ও বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে এসেছে। ইনু বলেন, “ভারতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শনের বাধা হিসেবে কোনও আইন থাকলে, তা বাতিল করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আর্জি জানাব।” বাংলাদেশের মন্ত্রী জানান, কয়েকটি সহজ শর্তে তাঁদের দেশে ভারতের চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হয়েছে। তিনি দায়িত্ব নিয়েই এ বিষয়ে আইনগত বাধা-নিষেধ দূর করতে উদ্যোগী হয়েছেন। ভারতও এগিয়ে এলে দু’দেশে এই শিল্পে যুক্ত হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবেন।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরে তথ্য ও সম্প্রচার ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দূরদর্শন ও বি-টিভির অনুষ্ঠান বিনিময় ও যৌথ প্রযোজনায় অনুষ্ঠান নির্মাণ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ মউ স্বাক্ষর করে। এই সহযোগিতার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার জন্যই ইনুকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মণীশ তিওয়ারি। এই আলোচনায় বাংলা চলচ্চিত্রের হাল ফেরানোর বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে উত্থাপন করতে চাইছেন ইনু। একই সঙ্গে যৌথ সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে একটি সবিস্তার তথ্যচিত্র নির্মাণের প্রস্তাবও মণীশকে দেবেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বেসরকারি স্তরে কিছু কাজকর্ম হলেও সরকারি ভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ আজও নেওয়া যায়নি। অথচ তার ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বাংলাদেশে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেক দাবি-পাল্টা দাবি রয়েছে। ইনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গাঁধীর নেতৃত্ব ভারতের অবদান বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল স্মরণ করবে। ভারত সরকারের ফিল্ম ডিভিশনের কাছে সেই সময়ের বহু গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। একমাত্র সরকারি উদ্যোগে তথ্যচিত্র নির্মাণ হলে তবেই সেগুলি পাওয়া সম্ভব। এই তথ্যচিত্র তৈরি হলে অনেক প্রশ্নেরই সমাধান হয়ে যাবে।
ভারতের প্রায় সব হিন্দি ও বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলই বাংলাদেশে দেখা যায়। এই চ্যানেগুলির নানা অনুষ্ঠান বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। ইনু বলেন, বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতেও বহু জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হয়। ধারাবাহিক নাটক ও গানের অনুষ্ঠানগুলি পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের অন্যত্র বসবাসকারী বাঙালিদেরও ভাল লাগবে। দু’দেশের মানুষের মধ্যে একটা সাংস্কৃতিক যোগাযোগও এ ভাবে তৈরি হতে পারে। কিন্তু কোনও কারণে ভারতে বাংলাদেশের প্রধান টেলিভিশন চ্যানেলগুলি আজও দেখা যায় না। তিনি বলেন, দু’ দেশের সরকারই ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের চ্যানেলগুলিকে এ দেশে সম্প্রচারের ব্যবস্থা হলে বিষয়টি যে অনেক সহজ হয়ে যায়, মণীশকে তিনি তা বোঝাবেন। |