|
এক ঝলকে... |
পৃথিবী
৩১ মার্চ - ৬ এপ্রিল |
|
• পিয়ং ইয়াং •উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রনায়ক কিম জং-আন (ছবিতে, বাঁ দিকে) দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রণহুঙ্কারের সুর রোজ এক পর্দা চড়াচ্ছেন। এবং হুমকিটাকে কেউই যে হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল বরাবর মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র-ঢাল মোতায়েনের সিদ্ধান্ত। পিয়ংইয়াং-এর একনায়ক কিম তাঁর দেশের শাসক পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম। পিতামহ কিম ইল-সুং’এর কাল থেকে দ্বিখণ্ডিত কোরিয়ার উত্তরাংশে যে কমিউনিস্ট স্বৈরতন্ত্র কায়েম, তা দেশবাসীর সড়ক-বিজলি-পানির সমস্যা না মিটিয়ে পারমাণবিক মারণাস্ত্র নির্মাণের উপর জোর দিয়েছে। হুমকি দিয়েই এই তন্ত্র নিজেকে টিকিয়ে রাখতে চায়। দক্ষিণের সমর্থনে আমেরিকা তার সমরশক্তি নিয়োগ করবে জেনেই বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম সেনাবাহিনীর অধিকারী দেশটি এখনও সার্বিক যুদ্ধে নামেনি। কিন্তু বিক্ষিপ্ত হামলা, দক্ষিণের নৌজাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে নৌসেনাদের হত্যা, এ সব প্ররোচনা অব্যাহত থেকেছে।
|
সবার ওপরে মূল লক্ষ্য রয়েছে পরমাণু বোমা বানিয়ে নির্ণায়ক শক্তিতে পরিণত হওয়ার অভীপ্সা। বোমা তৈরির প্রক্রিয়া থেকে উত্তর কোরিয়াকে নিরস্ত করার আন্তর্জাতিক প্রয়াস সফল হয়নি। এ ব্যাপারে তার একমাত্র অভিভাবক চিনকে চাপ দিয়েও লাভ হয়নি। পিয়ংইয়াং-এর ‘দুষ্টু ছেলেটি’ যে সব সময় বেজিং-এর সব নির্দেশ মেনে চলে, তা নয়। অতীতে বার বার দেখা গেছে, পশ্চিমের সঙ্গে দরকষাকষির জন্য পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ ও যুদ্ধের হুমকি দিলেও একেবারে খাদের কিনারে এসে শেষ মুহূর্তে তাঁরা পশ্চাদপসরণ করেছেন। পূর্বপুরুষদের মতোই কিম জং-আনও সেনাবাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে ‘শত্রুদের কোমর ভেঙে দিয়ে গলার নলি কেটে দেওয়া’র হুমকি দিচ্ছেন, ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছেন উপকূলে, বিদেশি দূতাবাসগুলিকে নিজেদের লোকজন সরিয়ে নিতে বলছেন। এটা যে স্রেফ যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সত্যিকারের যুদ্ধ নয়, সেই গ্যারান্টি কে দেবে?
|
• কায়রো • শহুরে শিক্ষিত নাগরিকদের কাছে তাঁর বেশ নাম-ডাক। ব্যঙ্গচিত্র-শিল্পী বাসেম ইউসেফ-এর কার্টুন ইন্টারনেটের বিবিধ সাইটে দেখা যায়। পেশায় ডাক্তার। তবে ২০১১ সালের হোসনি মুবারক-বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই দারুণ দারুণ রাজনৈতিক কার্টুন এঁকে জনপ্রিয় হয়েছেন। সাড়া ফেলেছে তাঁর ছবি: প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুর্সি ফারাও-এর মতো সাজপোশাকে বসে আছেন! প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মুর্সি যে সংস্কার শুরু করেছেন, তাকে ব্যঙ্গ করাই এই ছবির উদ্দেশ্য। একে প্রেসিডেন্টের অপমান, তায় ফারাও-এর অপমান? চিত্রপাঠ গ্রেফতার! তত্ক্ষণাত্ টুইটার ও ইন্টারনেট উত্তাল, রাস্তাতেও জনবিক্ষোভ। তার জেরেই হয়তো, জামিনে ছাড়া পেলেন ইউসেফ। বিচারের খাঁড়া যদিও তাঁর অপেক্ষায়!
|
ছেলেটিকে আবার হাজতে পোরার আদেশ এসেছে। এই নিয়ে অষ্টম বার জেলে যাচ্ছে সে। গত বছরটা জুড়ে তো উনিশ-বছরের নেদান ব্ল্যাঙ্ক এই করেছে। স্কুল থেকে হাজত। হাজত থেকে ছাড়া। পেয়ে দিনকয়েক না কাটতেই আবার হাজত। ১৯ সপ্তাহে ১০০ দিন জেলবাস, ৮ খেপে! কারণ? তার এক কথা: না! সামরিক বাহিনীতে নাম লেখাব না! ড্রাফ্ট পেপারে সই করব না! কিছুতেই না! কত বার জেলে ঢোকাবে, ঢোকাও, আমি শুনব না!
কে না জানে, ইজরায়েলে প্রতিটি সুস্থ ছেলেমেয়ের নাগরিক হওয়ার প্রথম ধাপ: সামরিক বাহিনীতে ‘সার্ভ’ করা। আঠারো বছর বয়সে তারা সাবালকত্ব পায়, হাই স্কুলের পড়াশোনাও তখনই শেষ। আঠারোতেই ‘ড্রাফ্ট’ আসে প্রত্যেকের নামে, প্রত্যেকে যাতে রুটিনমাফিক সেনাদলে নাম লেখায়। মেয়েরাও। আবশ্যিক এই পর্ব শেষ করে তবে তারা ফিরে আসে নিজের নিজের জায়গায়।
কেউ কেউ ছাড় পায়। প্রধানত অসুস্থতার কারণে। অনেকে আবার ভুয়ো মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখায়। নেদান ব্ল্যাঙ্ক তা করতে রাজি নয়। “কেন ভুয়ো রিপোর্ট দেখাব? এটা তো আমার নীতির প্রশ্ন!” কেউ আবার ‘শান্তি-কামিতা’র ভিত্তিতেও ছাড় প্রার্থনা করে। তারা লড়াই করতে চায় না: এই মর্মে আবেদন-পত্র লেখে। নেদান তাতেও রাজি নয়। “শান্তিকামিতা? ফুঃ! সেনাবাহিনীর কাছে শান্তি কথাটার অর্থই খুব সংকীর্ণ। ও সব আমি করব না।” ঠিকই বলছে সে। যারা শান্তিকামিতার আবেদন পাঠায়, বাহিনী তাদের সরাসরি লড়াইয়ের কাজ না দিয়ে অন্যান্য কাজে লাগায়, হিসেব রাখা, রিপোর্ট লেখা। পরিচর্যা করা, সংবাদ/ইনটেলিজেন্স সংগ্রহ করা।
কিন্তু এ সবও নেদান করবে না, এগুলোও যুদ্ধের কাজ। ২০০৮ সালে গাজায় তীব্র ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘর্ষের সময় নেদান জেনেছিল, কী ভাবে হাজার হাজার নিরীহ প্যালেস্তিনীয়কে জন্তুর মতো মারা হচ্ছে। ছোট ছিল সে, মিড্ল স্কুলে পড়ত, কিন্তু তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল, সামরিক বাহিনীর হয়ে কখনও কাজ করবে না। যুদ্ধ-বিরোধিতার যুদ্ধে নেমেছে কিশোর নেদান। |